ডা. মো. তারেক ইমতিয়াজ (জয়)
মাঝে মাঝে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানের পা ব্যথার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তারা এই ব্যথা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন থাকেন। শিশুদের পা ব্যথার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। কিন্তু আজ কথা বলবো ‘গ্রোইং পেইন’ (Growing pain) নিয়ে।
সাধারণত ৪ থেকে ১২ বছরের শিশুরা এই গ্রোইং পেইন এর সমস্যায় ভোগে। এই ব্যথা সাধারণত দুই পায়ে হয়। বিশেষ করে দুই উরুর এবং পায়ের সামনের অংশে এবং পায়ের পিছনের মাংশপেশিতে হয়। পা ব্যথার সাথে কখনো কখনো হাত ব্যথাও হতে পারে। তবে গ্রোইং পেইন কখনো শুধুমাত্র হাতে হয় না। ব্যথা সাধারণত বিকাল বা সন্ধার পর থেকে শুরু হয়, যা কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। ব্যথা কখনো কখনো এতোটাই তীব্র হয় যে শিশু ব্যথায় রাতে ঘুম থেকে জেগে যায়। তবে এই ব্যথায় আক্রান্ত স্থান টিপে দিলে শিশু আরাম বোধ করে এবং দেখা যায় যে পরের দিন সকালে কোনো ব্যথাই নেই। এই ধরনের ব্যথা শিশুদের মাঝে মাঝে হয়। কিছুদিন ভালো থাকে, তারপর আবার হয় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ব্যথা ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যায়।
অনেক সময় বাবা-মা শিশুর এই ব্যথা বাত জ্বর বা কোনো বাতের ব্যথা কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন। তবে বাত জ্বর বা বাতের ব্যথা থেকে এই ব্যথা আলাদা করার কিছু উপায় আছে। যেমন- বাতের ব্যথা অথবা বাত জ্বরের ব্যথা শিশুর গিরা বা জয়েন্টে হয়, আক্রান্ত গিরা সাধারণত ফুলে যায়। আক্রান্ত গিরায় হাত দিয়ে টিপে দিলে শিশু ব্যথা অনুভব করে। কখনো কখনো শিশুর জ্বর থাকতে পারে। শিশুর চলা ফেরায় সমস্যা হয় এবং দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। সুতরাং, এই উপসর্গগুলো না থাকলে শিশুর পা ব্যথা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। আর যদি এই ধরনের কোনো উপসর্গ থাকে তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।
শিশুদের এই ধরনের (গ্রোইং পেইন) পা ব্যথা হলে আক্রান্ত পা টিপে দিতে হবে। এতে শিশু আরাম বোধ করবে। কখনো কখনো ব্যথা তীব্র হলে শিশুকে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ দেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় এই ধরনের পা ব্যথায় আক্রান্ত শিশুদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকতে পারে। তাই শিশুকে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন- দুধ, ডিম, ডাল, পালং শাঁক, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, মাংস, সামদ্রিক মাছ ইত্যাদি খেতে দেওয়া উচিৎ।
[লেখক: এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য); সহকারি রেজিস্ট্রার, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।]