খাদ্য সংকটের ঝুঁকি কম বাংলাদেশের
দেওয়ানবাগ ডেস্ক: ডেনমার্কে সোমবার শুরু হওয়া নর্থ ইউরোপের বৃহৎ কৃষি প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, বিশ্ব খাদ্য সংকটের অন্যতম কারণগুলো মনুষ্যসৃষ্ট। চলমান বৈশ্বিক খাদ্য সংকট ও অর্থনৈতিক মন্দাও মানুষের কারণেই তৈরি হয়েছে। তারা বলেন, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে নতুন এক চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছে। তবে যেসব দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ভালো এবং যারা খাদ্য রপ্তানি করে তাদের সংকটে পড়ার ঝুঁকি কম। যারা খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল তারাই সবার আগে খাদ্য সংকটে পড়ে। আবার যেসব দেশ খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক ম্দ্রæা অর্জন করে সেসব দেশও কিছুটা সমস্যায় পড়ে। আয়োজক সংস্থা অ্যাগ্রোমেক ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব এগ্রিকালচারাল জার্নালিস্ট (আইএফএজে)-এর শীর্ষ ব্যক্তিরা আরও বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি এশিয়ার যেসব দেশ নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করে চাহিদা মেটায় তাদেরও খাদ্য সংকটে পড়ার ঝুঁকি কম। কৃষি খাতকে আধুনিকায়ন করার ক্ষেত্রে ডেনমার্ক বিশ্বে রোল মডেল স্থাপন করেছে।
গত ২৮ নভেম্বর ডেনমার্কের হার্নিং শহরের মেসেজসেন্টারে (এমসিএইচ) আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে ৫১টি দেশ অংশ নিচ্ছে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ডেনমার্কস্থ ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত মিখাইল ভিদোনিক। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আয়োজক কমিটির প্রধান ও অ্যাগ্রোমেকের চেয়ারম্যান স্টেন এন্ডারসেন। ৩০ নভেম্বর প্রদর্শনী শেষে আইএফএজের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে এ বছরের জন্য বিশ্বের ২১ জন সেরা খামারি, কৃষক ও কৃষিবিষয়ক সাংবাদিককে অ্যাগ্রোমেক অ্যাওয়ার্ড এবং ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার মানিক মুনতাসির ও কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের হাতে ফেলোশিপের সনদ ও আর্থিক মূল্যের ডামি তুলে দেন আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব এগ্রিকালচারাল জার্নালিস্ট (আইএফএজে) ও সুইডেনের খ্যাতনামা কৃষি সাংবাদিক লিনা জোহানসন।
এই প্রদর্শনী ও সম্মেলন প্রতি দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-এ অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে এবার চার বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি ৪২তম প্রদর্শনী। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ প্রদর্শনীতেও ৫৪২টি প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি অংশ নেয়। এবারও এদের সবাই অংশ নিয়েছে। অনুষ্ঠানের মূল পৃষ্ঠপোষক দ্য ড্যানিশ এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড কাউন্সিল অ্যান্ড ড্যানিশ অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি। ডেনমার্কে নিয়োজিত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত মিখাইল ভিদোনিক বলেন, বিশ্ব প্রেক্ষাপট মোটেও আমাদের অনুক‚লে নেই। এটা আমরা নিজেরাই তৈরি করছি। কৃষি ও প্রকৃতির প্রতি আমরা অন্যায় আচরণ করছি। যার ফলশ্রæতিতে জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। এর জন্য মানুষই দায়ী। এতে বৈশ্বিক খাদ্য শৃঙ্খলেও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলীয় অঞ্চলের বাছাই করা কৃষি অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের এ ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে। এতে কৃষি আধুনিকীকরণ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, কৃষি খামার, বায়োগ্যাস, ইকোসিস্টেম বিষয়ক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ইকোসিস্টেমকে স্বাভাবিক রেখে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও রাসায়নিকের ব্যবহার কমিয়ে মাটির গুণগত মান ও স্বাস্থ্য রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয় আয়োজনের বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে। ডেনমার্কের বায়োগ্যাস, ফার্মিং, ডেইরি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, সংরক্ষণ, বাম্পার উৎপাদন পদ্ধতি ফেলোশিপপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের সরেজমিন বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখানো হয়।