চৈতালী মুখোপাধ্যায়
রুমির উপলব্ধিতে প্রেম এক শক্তিশালী দুর্গ। পবিত্র প্রেম মানুষকে আত্মপ্রত্যয়ী করে যা রক্ষা করে মিথ্যা, ঘৃণ্য আক্রমণ থেকে। রুমির মতে প্রেম ঐশ্বরিক। সার্থক প্রেম হলো অসীমের উদ্দেশ্যে পরমানন্দদায়ক ধাবমানের এক প্রতীক। শুদ্ব প্রেমেরএকমাত্র স্থানপবিত্র আত্মা।
মন ও আত্মার শুদ্ধিকরণের মধ্য দিয়ে প্রেম মানুষকে উন্নীত করে পূর্ণতার দিকে। তাই কখনো প্রেমিকের বক্ষ দুঃখে পূর্ণ হবে না, মরমানবের দ্বারা স্পর্শ হবে না- কারণ, “প্রেম করা মানে হলো ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানো।” রুমির সর্বজনীন বার্তা হলো অজ্ঞতার কারণে ধর্মীয় যুদ্ধ।
আধ্যাত্মিক প্রেম সকল হিসেব নিকেশ ভুলে মনকে নিয়োগ করে চিরন্তনকে ভালোবাসতে এবং অস্তিত্বের অদৃশ্য উৎসকে জানতে। প্রদান করে এক দৃঢ় প্রত্যয় যে তথাকথিত ধর্ম ও পান্ডিত্যের বাইরে আছে শক্তিশালী প্রেম যা আমাদের ধাবিত করতে পারে অপেক্ষারত অপার আনন্দ ও প্রশান্তির দিকে। প্রকৃত প্রেম অপরাজেয়, অপ্রতিরোধ্য- তাই “যদি সত্য মানব হও/প্রেমের জন্য সব কিছুতেই ঝঁুকি নাও/তোমার কন্ঠ ভয়ে রুদ্ধ হতে দিও না/যখন তুমি ভগ্নপ্রায় নৃত্য করো/নৃত্য করো যখন তুমি বাঁধন ছিঁড়ে ফেলেছ/নৃত্য করো যুদ্ধের মধ্যে।” রুমির দর্শনে প্রেম এক বিশ্ববার্তা- এক বিশ্বভাষা। প্রেম আত্মশুচি ও আত্ম-চৈতন্যের একমাত্র হাতিয়ার, প্রেম এক সেতু বন্ধন।
রুমি মনে করেন, প্রেমই একমাত্র শিক্ষাগুরু যে জীবনকে সত্য অনুভবের সন্ধান দেয়, পথনির্দেশ করে এবং উপলব্ধিতে সহায় হয়- “You are not a drop in the ocean. You are the entire ocean in a drop.” যেহেতু রুমির দশের্ন প্রেম একমাত্র সত্য তাই এই সত্যই হৃদয়কে ঊর্ধ্বে উত্তোলন করে যেমন জল তৃষ্ণাকে জীবন শক্তি দান করে। প্রেরণা দেয় সৎ ও গঠনমূলক কাজে উদ্যমী করে, আশাহত প্রাণকে নিরূপণ করে যোগ্য চলার পথ। তাই রুমির উপলব্ধ সত্য সœাত সকল প্রাণে ধ্বনিত হয় পরার্থে লীন হওয়ার এই অমোঘ সত্য “মৃত্যু এসে কেড়ে নেওয়ার পূর্বেই/তোমাকে যা দেওয়া হয়েছে/বিতরণ করে দাও; যা কিছু দেওয়ার আছে।”