এশিয়ার অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি ডিজিটাল উদ্যোগের জন্য এখনো প্রস্তুত নয়। এই অঞ্চল ভৌত অবকাঠামোতে এগিয়ে থাকলেও জ্ঞানের দিক থেকে এখনো অনেকটা পিছিয়ে। অথচ ডিজিটাল উদ্যোগের ক্ষেত্রে জ্ঞানই মূল পুঁজি।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভৌতঅবকাঠামোতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকলেও সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ডিজিটাল উদ্যোগের পরিপূরক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে।
প্রতিবেদন প্রণয়নের জন্য এডিবি ৮টি সূচক প্রণয়ন করেছে। এই আটটি সূচকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছে সংস্কৃতি ও অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানবিষয়ক সূচকে, ২.১। সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে ভৌতঅবকাঠামোর সূচকে, ৩২ দশমিক ১। মানবপুঁজির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে।
‘এশিয়ার উন্নয়ন বিষয়ক পূর্বাভাস’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়া অঞ্চলের প্রায় সবদেশ ‘সংস্কৃতি ও অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান’ শীর্ষক সূচকে পিছিয়ে আছে। এর অর্থ হলো, উদ্যোগের বিষয়ে এই অঞ্চলের মানুষ নেতিবাচক। অর্থাৎ সামাজিক মর্যাদা ও ক্যারিয়ার বাছাইয়ের বিষয়ে মানুষ উদ্যোগকে ভালো চোখে দেখে না। বাংলাদেশের মানুষের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
এক্ষেত্রে উন্নয়নে এডিবির পরামর্শ হলো, উদ্যোগ বিষয়ে জনমত বা মানুষের ধারণা তৈরি করা। শিক্ষার মাধ্যমে তা করা যায় বলে মনে করে এডিবি। স্থানীয় উদ্যোগের পরিবেশ অবিকশিত থাকলে নীতি প্রণেতারা পরামর্শমূলক কার্যক্রম হাতে নিতে পারেন-এমন কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। সেই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের মধ্যে যোগাযোগ, নেটওয়ার্কিং তৈরি করতে পারেন, যেমন তাঁরা স্টার্ট আপ অ্যাসোসিয়েশন বা সংঘ তৈরি করে দিতে পারেন। অর্থাৎ নীতি প্রণেতারা এভাবে পরোক্ষ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ডিজিটাল উদ্যোগের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারেন।
মূল প্রবন্ধে এডিবির জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ সুচ্যান হং বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ডিজিটাল উদ্যোক্তারা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। সেজন্য ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের জন্য বিশ্বমানের ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
সিঙ্গাপুর ডিজিটাল ব্যবসার উদ্যোক্তাদের জন্য বিশ্বমানের ব্যবসায় পরিবেশ নিশ্চিত করলেও ওই মানের পরিবেশ এশিয়ায় আর কেউ পারে নি বলে তাঁর পর্যবেক্ষণ। তিনি আরও বলেন, যেদেশ তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য যত উন্নত পরিবেশ তৈরি করবে, সেই দেশ বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাজারে তত বেশি এগিয়ে যাবে।
কোন সূচকে কত পেল বাংলাদেশ
যে আটটি সূচকের ভিত্তিতে এডিবি এশিয়ার বিভিন্ন অর্থনীতির ডিজিটাল উদ্যোগ সৃষ্টির সক্ষমতা নির্ণয় করেছে সেগুলো হলো সংস্কৃতি ও অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান, আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান, বিধিবিধান ও কর, বাজারের পরিস্থিতি, ভৌত অবকাঠামো, মানবপুঁজি, জ্ঞানসৃষ্টি ও বিতরণ, অর্থায়ন, নেটওয়ার্কিং ও সহযোগিতা ইত্যাদি।
এর মধ্যে প্রথম সূচকে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছে আর সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে চতুর্থ সূচকে, আগেও বলা হয়েছে। এর বাইরে দ্বিতীয় সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছে ১০, তৃতীয় সূচকে ৭ দশমিক ৮, পঞ্চম সূচকে ৮ দশমিক ৫, ষষ্ঠ সূচকে ১৪ দশমিক ৫, সপ্তম সূচকে ২০ দশমিক ১ ও অষ্টম সূচকে পেয়েছে ১৪ দশমিক ৬।
ডিজিটাল জ্ঞানের অভাব
জ্ঞানের দিক থেকে পিছিয়ে থাকা এশিয়ার ডিজিটাল উদ্যোগের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছে। এমন কথা আরও অনেক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন গ্রুপ স্পেশাল মোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) ‘দ্য মোবাইল ইকোনমি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বলা হয়েছে, ডিজিটাল জ্ঞানের অভাব বাংলাদেশে মুঠো ফোনভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহার প্রবৃদ্ধির অন্যতম বাধা। আবার যাঁরা ব্যবহার করছেন, তাঁরাও যথাযথভাবে তা করতে পারছেন না। একই সঙ্গে নিজস্ব ভাষায় ব্যবহার-উপযোগী বিষয়ের স্বল্পতা ও সচেতনতার অভাবেও বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে যেতে পারছে না।