অর্থ ডেস্ক: চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বই খাদ্য সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশেও দুর্ভিক্ষ আসছে- এটি সত্য। বাংলাদেশ এই মুুহূর্তে সাত ধরনের সংকটের মুখে রয়েছে বলে মনে করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এগুলো হলো- ডলার সংকট, জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি, খাদ্যসংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট, কোভিড ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট। ধানমন্ডির নিজস্ব কার্যালয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস এবং বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ: উত্তরণ কোন পথে শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
অনুষ্ঠানটি সিপিডির ফেসবুক পেইজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে এখন বহুমুখী সংকট রয়েছে। তাই বহুমুখী নীতিমালাও প্রয়োজন। সব মন্ত্রণালয় বিষয়টির সঙ্গে জড়িত। সবার সমন্বয়ে একটি কমিটি থাকা প্রয়োজন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা বেসরকারি চাকরিজীবী বা অন্য পেশার লোকজনকেও এ কমিটিতে রাখা উচিত। সিপিডির প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় যারা বসবাস করছেন, তাদের খাদ্যপণ্যের তালিকার ১৯টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য রয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় চার সদস্যের একটি পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় সব খাদ্যপণ্যসহ সার্বিক খরচ ছিল ১৭ হাজার ৫৩০ টাকা। ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবরের খাদ্যপণ্যের মূল্য বিবেচনায় এ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাসিক ২২ হাজার ৪২১ টাকা। মাছ-মাংস বাদ দিয়ে কমপ্রোমাইজড ডায়েটের হিসাবে চার সদস্যের পরিবারের ন্যূনতম খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৯ টাকায়। যা ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি ছিল ৬ হাজার ৫৪১ টাকা। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্কের হার কমানো ও বেসরকারি খাতে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বেতন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধিও যথেষ্ট নয়। ওএমএস কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে। দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষকে নগদ অর্থসহায়তা দিতে হবে। জ্বালানির দাম কমানো, অর্থের জন্য কর, জিডিপি বাড়ানোসহ আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছে সিডিপি। ফাহমিদা খাতুন বলেন, সারা বিশ্বে ঘটতে যাওয়া খাদ্য সংকটের গতি-প্রকৃতি নির্ভর করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর। চলমান এ যুদ্ধ কেবল খাদ্য ও পণ্য সরবরাহকেই সংকটে ফেলেনি, কৃষি উৎপাদন ব্যাহত করেছে।
এ দুর্যোগের সমাপ্তি নির্ভর করছে যুদ্ধের সমাধানের ওপর। আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন বলছে, দুর্ভিক্ষ আসছে এবং বিষয়টি সত্য। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি আবহাওয়া ভিন্ন রূপ হিসেবে বন্যা, খরা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, কৃষি উৎপাদনে জ্বালানি ও সার ব্যবহার করা হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে শুধু পণ্য সরবরাহে সমস্যা হয়নি, কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। খাদ্য সংকট মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সংকটগুলোর মধ্যে ডলার, জ্বালানি, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য সংকটের কারণে অন্য সংকটগুলো আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সার্বিকভাবে সাতটি সংকট (ডলার, জ্বালানি, মূল্যস্ফীতি, খাদ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট) আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সংকট সমাধানে কিছু সুপারিশও দিয়েছে সংস্থাটি। মূল্যস্ফীতির সমাধানে দেওয়া সুপারিশগুলো হলো নতুন ভোগ বাস্কেট করা, প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করা, নিত্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক ও কর কমানো, বাজারে মনোপলি নিয়ন্ত্রণ করা।