সাগরের পানির তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে

সাগরের পানির তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে

বিজ্ঞান ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীজুড়ে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংস্থা কোপার্নিকাসের তথ্য অনুযায়ী, এ সপ্তাহেই সমুদ্রপৃষ্ঠের দৈনিক গড় তাপমাত্রার সর্বশেষ রেকর্ড (২০১৬) ভেঙে গেছে। এটি ২০.৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে, যা বছরের এ সময়ের স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
সমুদ্রপৃষ্ঠের এ রকম অস্বাভাবিক উষ্ণতা একসময় বাস্তুসংস্থানসহ সার্বিকভাবে পৃথিবীর জন্য গুরুতর পরিণতি ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীর মহাসাগরগুলো জলবায়ুর গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক। এগুলো বায়ুমণ্ডল থেকে তাপ শুষে নেয় এবং পৃথিবীর অর্ধেক পরিমাণ অক্সিজেনের জোগান দেয়। সেই সঙ্গে আবহাওয়ার বিভিন্ন ধরনও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংস্থা কোপার্নিকাস পরিচালিত হয় মহাদেশটির মহাকাশ কর্মসূচির আওতায়।
উষ্ণ পানির বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করার ক্ষমতা কম। এর অর্থ, সমুদ্রের পানি যত উষ্ণ হবে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলও ততই উষ্ণ হবে। কারণ কার্বন ডাই-অক্সাইডের স্তর তাপমাত্রা বাইরে না যেতে দিয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকে রাখে। সাগরের পানি তেতে উঠলে উষ্ণ বায়ুর প্রভাবে হিমবাহের গলনও বেড়ে যাবে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরো বাড়বে। তলিয়ে যাবে বিশ্বের অনেক উপকূলীয় নিচু এলাকা।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণায়ন ও তাপপ্রবাহের ফলে মাছ ও তিমির মতো জলজ প্রাণীর জীবনযাত্রা বিঘিœত হবে। এগুলো অধিকতর শীতল পানির সন্ধানে অন্য জায়গায় চলে যাবে। বাড়তি তাপমাত্রা সহ্য করতে না পারায় হাঙরসহ সমুদ্রের শিকারি প্রাণীগুলো আরো বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে।
এতে সাগরের খাদ্যশৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটে ক্রমেই মাছের পরিমাণ কমে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন। অর্থাৎ সমুদ্রের পানির উষ্ণায়ন সামুদ্রিক জীবসহ গোটা বাস্তুতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলবে।
গত মাসের শেষের দিকে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় সমুদ্রের উপরিতলের পানির তাপমাত্রা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ৩৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে অতি উষ্ণ পানিতে অনেক ক্ষুদ্র জীব ও শৈবালের মৃত্যু পর্যবেক্ষণ করেছেন তাঁরা। এলাকাটির মৎস্য শিকারিরা বলছেন, সেখানে কয়েক বছর ধরে মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে।
মেক্সিকো উপসাগরীয় এলাকায় সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ পর্যবেক্ষণকারী ক্যাথরিন লেসনেস্কি বলেন, ‘এখন সমুদ্রের পানিকে গোসলের উপযোগী তাপমাত্রার পানির মতো মনে হয়। ফ্লোরিডার উপকূলে বহু প্রবালের বাস। এরই মধ্যে অনেক প্রবাল মারা গেছে।’
অসময়ে তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ায় বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ জানিয়েছেন। কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের সামান্থা বারগেস জানান, মার্চ মাসে সমুদ্রের পানি সবচেয়ে উষ্ণ হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু আগস্ট মাসে নয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাগরে এল নিনো নামে পরিচিত প্রাকৃতিক আবহাওয়া প্রক্রিয়া সম্প্রতি শুরু হলেও তা এখনো বেশ দুর্বল, যার অর্থ, সমুদ্রের তাপমাত্রা সামনের দিন বা মাসগুলোতে আরো বাড়তে পারে।
গত জুনে যুক্তরাজ্যে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিক গড়ের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলে সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা ৩৮.৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, এ সময় সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ২৩ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকাটা স্বাভাবিক।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মহাকাশ কর্মসূচির আওতায় কোপার্নিকাস সংস্থাটি পৃথিবী ও এর পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে থাকে। ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য এটি স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করে থাকে। ইউরোপীয় কমিশন এই কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। ইউরোপীয় রেনেসাঁ যুগের বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের তত্ত¡ বিজ্ঞানকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছিল। তাঁর নাম অনুসারেই ইইউয়ের এই জলবায়ু সংস্থার নামকরণ করা হয়েছে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *