যুদ্ধ নয়, শান্তির অন্বেষণে বিশ্ব

যুদ্ধ নয়, শান্তির অন্বেষণে বিশ্ব

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: ‘কোথাও সান্ত¡না নেই পৃথিবীতে আজ, বহুদিন থেকে শান্তি নেই’-পৃথিবীতে যে শান্তি নেই সে কথা কবি জীবনানন্দ দাশ অনেক আগেই লিখে গেছেন তার কবিতায়। সত্যিই তো পৃথিবীতে কখনো পূর্ণ শান্তি ছিল না। আসবে এটাও নিশ্চিত করে কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। পূর্ণ শান্তির ধারণাটাই যেন ‘ভুল চাওয়া’। পূর্ণতার ধারণাটাই কী তাহলে ভুল! পৃথিবীর দিকে তাকালে শান্তি প্রতিষ্ঠা যেন এক অযৌক্তিক আশা। পৃথিবী একটা জটিল সিস্টেম। জাতে, সংস্কৃতিতে, ভূপ্রকৃতিতে ভিন্নতা আছে। মানুষে মানুষে ভিন্নতা আছে। দেশের, সমাজের এই ভিন্নতা, ক্ষমতার প্রভাব বলয় সৃষ্টি ও তা বজায় রাখতে গিয়ে শান্তি এখন আর কোথাও নেই। রোবটদের সমাজ হলেই হয়তো পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে।


তার পরও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কাজ করে চলেছে। বৈশ্বিক পর্যায়েও জাতিসংঘ দেশে শান্তি ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। এর বাইরে গড়ে উঠেছে আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জোট। গত ২১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস বা বিশ্ব শান্তি দিবস। সারা বিশ্বে দিবসটি নানা আয়োজনে পালিত হয়ে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘শান্তির জন্য পদক্ষেপ: আমাদের প্রত্যাশা বৈশ্বিক লক্ষ্য’। ১৯৮১ সাল থেকে এই দিনটি পালিত হচ্ছে। প্রতি বছর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘শান্তির ঘণ্টা’ বাজানোর মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপনের সূচনা হয়। এই ঘণ্টা স্মরণ করিয়ে দেয় ‘যুদ্ধের পরিণাম মানুষের মৃত্যু। এছাড়া ঘণ্টাটির পার্শ্ববর্তী সড়কে ইংরেজিতে ‘স্থিতিশীল বৈশ্বিক শান্তি দীর্ঘজীবী হোক’ বাণী খোদাই করা রয়েছে।


এই দিনটি আমাদের স্মরণ করায় এই পৃথিবীটাই আমাদের বাসভূমি, এখানে থাকতে হলে শান্তিতে, বন্ধুত্বপূর্ণভাবে, সবার সঙ্গে সবার সদ্ভাব বজায় রেখেই চলতে হবে। আর যে বিশ্বে শান্তি নেই, সেখানে থাকা যায় না। ফলে ভালো করে থাকতে চাইলে পৃথিবীতে শান্তি বজায় রাখা খুবই জরুরি। তাই এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। যারা বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার জন্য নানান কাজ করেছেন বা করে চলেছেন, এই দিনটিতে তাদের স্মরণ করা হয়ে থাকে। ঝগড়া, ঝামেলা, মারপিট, যুদ্ধ ইত্যাদির মাধ্যমে কোনো সমস্যাই সমাধান করা যায় না। দুইটি বিশ্বযুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে, এতে খালি প্রাণহানি, সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা এবং পরিমাণ বাড়ে, কাজের কাজ কিছুই হয় না। তাই বিশ্বে শান্তির প্রয়োজনীয়তা কতটা, সেটা এই দিন মনে করিয়ে দেয় আমাদের।


দিবসটি উপলক্ষ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্বের উত্তেজনা দূরীকরণ এবং দ্বন্দ্ব নিরসনে, সমস্ত মানবতার স্বার্থে সক্রিয়ভাবে শান্তি বজায় রাখার জন্য বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির আহ্বান জানান। তিনি সমসাময়িক সমাজে অবিশ্বাস, বিভাজন এবং কুসংস্কারের উপস্থিতি উল্লেখ করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দিকে অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপেরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শান্তি একটি নিষ্ক্রিয় রাষ্ট্র নয় বরং ইচ্ছা ও কর্মের পরিণতি। তাই বিশ্ব জুড়ে চলমান পরিবেশগত সংকট মোকাবিলা, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা এবং মানবাধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন।


১৯৪৫ সাল থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য (চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) কোনো প্রকার যুদ্ধ বা উত্তেজনা ছাড়াই পারস্পরিক ও আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব সমাধানের অঙ্গীকার করেছে। তা সত্ত্বেও, দেশগুলো তখন থেকে অসংখ্য সামরিক সংঘাতে প্রবেশ করেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই ধারণাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং ফলে জন্ম হয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের। এটি ছিল এমন একটা বৈশ্বিক সংস্থা, যাকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্য শান্তি, একতা, সমঝোতা ও মিত্রতা ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এর উত্তরসূরি হিসাবে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জাতিসংঘই বিশ্বের প্রথম আন্তঃদেশীয় সংস্থা যেটি এখন পর্যন্ত আক্ষরিক অর্থে বিশ্ব শান্তি ধরে রাখতে সফল হয়েছে।


তবুও এটা পুরোপুরিভাবে বলা যাবে না যে, বিশ্ব শান্তি অর্জিত হয়েছে। কারণ প্রত্যেক জাতি ও দেশের মধ্যকার সংঘাতহীন শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি ও সম্পর্ককেই বিশ্ব শান্তি বলা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোনো বৃহৎ বৈশ্বিক যুদ্ধ না হলেও আঞ্চলিক কিছু যুদ্ধে পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোর অংশগ্রহণ বিশ্ব শান্তিকে সাময়িক বা দীর্ঘ সময়ের জন্য বাধাগ্রস্ত করেছিল। উদাহরণস্বরূপ ভিয়েতনাম যুদ্ধ, আরব-ইসরাইল যুদ্ধ, সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো পৃথিবীকেই ভারসাম্যহীন করে তুলেছে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *