ভক্তিমূলক সংগীত যে শর্তে জায়েজ

ভক্তিমূলক সংগীত যে শর্তে জায়েজ

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা: ‘সামা’ সুফিধারায় প্রচলিত একটি বিশেষ ধারার সংগীত, যা প্রধানত ভক্তিমূলক হয়ে থাকে। এসব সংগীতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় এবং স্বীয় মোর্শেদ বা পিরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়। শর্ত সাপেক্ষে ‘সামা’ বা ‘ভক্তিমূলক সংগীত’ গাওয়া বা শোনা জায়েজ আছে। এর প্রধান শর্তগুলো হচ্ছে তা শিরক, কুফরি ও অশ্লীল বাক্য থেকে মুক্ত থাকবে এবং তাতে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) বলেন, সুলতান নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রহ.) ‘ফাওয়াইদুল ফুয়াদ’ নামক গ্রন্থে ‘সামা’ (ভক্তিমূলক সংগীত) বৈধ হওয়ার শর্তগুলো উল্লেখ করেছেন। যার মূলকথা হলো সামার চার স্তম্ভের সঙ্গে চারটি শর্ত সম্পৃক্ত। চার স্তম্ভ হলো- ১. শ্রোতা, ২. যে ব্যক্তি শোনায়, ৩. যা শোনা হয়, ৪. যেসব যন্ত্রের মাধ্যমে শোনা হয়।
এই চার স্তম্ভ সম্পর্কে খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রহ.) লেখেন-
১. শ্রোতা: শ্রোতাকে পবিত্র মনের অধিকারী হতে হবে। সে যেন প্রবৃত্তির পূজারি না হয়। যে ব্যক্তি সামা শুনবে সে অবশ্যই পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারী হবে। সে এমন প্রবৃত্তির পূজারি হবে না, যে প্রবৃত্তির পেছনে পেছনে ছোটে।
২. যে শোনায়: যে ব্যক্তি সামা শোনাবে সে অবশ্যই পুরুষ হবে। নারী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক হতে পারবে না। সামা পরিবেশনকারী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ না হয়ে নারী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক দাড়িহীন বালক হলে তা শোনা জায়েজ হবে না।
৩. যা শোনা হয়: যে পদ্য, কবিতা বা সংগীত শোনা হবে, তা অর্থহীন ও অশ্লীল হতে পারবে না। ভক্তিমূলক সংগীতে শিরক, কুফরি, অন্যের সমালোচনা, অহমিকা, প্রহসনমূলক কৌতুক বা অশ্লীলতা থাকতে পারবে না।
৪. যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়: সামার সঙ্গে দোতারা, সেতারা, হারমোনিয়াম বা অন্য কোনো বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।
আল্লামা আশরাফ আলী থানভি (রহ.) উল্লিখিত শর্তগুলো বর্ণনা করার পর বলেন, পূর্ববর্তী কোনো সুফিসাধকের ব্যাপারে সামা শ্রবণের কথা প্রমাণিত। বুজুর্গদের মধ্যে যাঁরা সামা শ্রবণ করতেন তাঁরা উল্লিখিত শর্তসহই শ্রবণ করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিভিন্ন কামনা-বাসনায় মত্ত এক শ্রেণির লোক গান-বাজনা করে এবং পূর্বসূরিদের নাম উল্লেখ করে তা বৈধ প্রমাণের চেষ্টা করে। অথচ পূর্বসূরিদের আমল, আখলাক ও মানবীয় গুণাবলির সঙ্গে এদের কোনো মিল নেই। পূর্বসূরি বুজুর্গদের মধ্যে যাঁরা সামা শ্রবণ করতেন তাঁরা শুধু ‘আহলে সামা’ ছিলেন না, তাঁরা ছিলেন ‘আহলুস সামাওয়াত’ তথা আসমানওয়ালা বা আল্লাহওয়ালা। আর এখন যারা সামার নামে গান-বাদ্যে মত্ত থাকে, তাদের দেখলে মনে হয় অধঃপতিত এই সম্প্রদায় চিরদিন জমিনেই থাকবে। তারা কখনো পরকালের প্রাপ্তির আশা করে না।
সূত্র: মাজালিসে হাকিমুল উম্মত

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *