দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বিকাশমান পাঁচ অর্থনীতির জোট ব্রিকসের তিন দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত হয় এ সম্মেলন। এবারের সম্মেলনের অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল জোটের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ ও সম্প্রসারণ।
বর্তমানে ব্রিকসের সদস্যরাষ্ট্র পাঁচটি-ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। জোহানেসবার্গ সম্মেলনে জোটে নতুন ছয়টি দেশকে সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দেশগুলো হলো-মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব
উল্লেখ্য, বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশ এ জোটে যোগ দিতে আগ্রহী। জানা যায়, সম্মেলনের আগে কীভাবে এ জোটের সম্প্রসারণ হবে এবং কবে হবে, তা নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। তবে জোহানেসবার্গ সম্মেলনে এ ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ধারণা করা যায়, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার পটভূমিতে ব্রিকস জোটের সম্প্রসারণের গতি বেড়েছে। বর্তমান পাঁচ সদস্য দেশ ছাড়াও জোটে যুক্ত হতে আগ্রহী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা জোহানেসবার্গ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
ব্রিকসকে একটি সম্ভাবনাময় জোট বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন ‘ব্রিক’ নামে এ জোট গঠন করে। এর পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকাও এ জোটে যোগ দিলে এর নতুন নাম হয় ‘ব্রিকস’। বর্তমানে ব্রিকস জোট পশ্চিমের উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর বিপরীতে একটি শক্তিশালী জোটে পরিণত হয়েছে। ব্রিকস দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা ৩২০ কোটির বেশি, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪১.৫ শতাংশ।
বিশ্বের মোট উৎপাদনের (জিডিপি) ২৬.৬ শতাংশ আসে এ পাঁচ দেশ থেকে। ব্রিকসের সম্প্রসারণের ফলে জোটটির শক্তি আরও বাড়বে সন্দেহ নেই। কারণ সদস্য যত বাড়বে, জোট ততই শক্তিশালী হবে। তৈরি হবে সম্মিলিত জোরালো অবস্থান। ধারণা করা হয়, ২০৩০ সালে বৈশ্বিক জিডিপির অর্ধেকের বেশি আসবে ব্রিকস সদস্য দেশগুলো থেকে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও ডলার সমস্যা মোকাবিলায় ব্রিকস ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ব্রিকস দেশগুলো ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিকল্প হিসাবে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক চালু করে এবং নতুন সদস্যদের জন্য তাদের দুয়ার খুলে দেয়।
২০২২ সালে ১৪তম ব্রিকস সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ঘোষণা করেছিলেন, ব্রিকস দেশগুলো এমন এক মুদ্রাব্যবস্থা চালু করবে, যা দিয়ে একটি নতুন বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা চালু করা যাবে। এটি মার্কিন ডলারের আধিপত্যকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করবে এবং এর আধিপত্য খর্ব করতে সাহায্য করবে।
বৈশ্বিক মুদ্রাব্যবস্থার দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ ডি-ডলারাইজেশনের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। কারণ বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অনেক দেশ ডলারকে বাদ দিয়ে অন্য মুদ্রায় বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে। সব মিলে পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থায়, বিশেষ করে অর্থনীতির ক্ষেত্রে ব্রিকস একটি নতুন সম্ভাবনার বার্তা দিচ্ছে। আশা করা যায়, বাংলাদেশও এ জোটের অন্তর্ভুক্ত হবে।