গত ১২ই রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উপলক্ষ্যে রাজধানীর মতিঝিলস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের আহ্বানে গত ২৮শে সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাদ জোহর পর্যন্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন।
প্রতিবছর মহানবি (সা.)-এর জন্ম দিবস তথা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উপলক্ষ্যে সারা বিশ্বের মুসলমানরা নতুন করে তাঁর আদর্শ অনুসরণের শপথ ব্যক্ত করে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ খুবই জরুরি।
রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মোহাম্মদ (সা.) সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে রাহমাতুল্লিল আলামিন বা সারা বিশ্বের রহমত হিসেবে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন। এজন্যই হযরত মোহাম্মদ (সা.) যেদিন, যে মুহূর্তে পৃথিবীতে তাশরিফ এনেছিলেন, সেদিন ও সেই মুহূর্তটি বিশ্বজগতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দের দিন হিসেবে বিবেচিত। এজন্যই বলা হয়, ঈদে মিলাদুন্নবি তথা দয়াল রাসুল (সা.)-এর জন্মোৎসব বা জন্ম দিবসের আনন্দ। প্রতিদিন, প্রতিক্ষণেই বিশ্বের প্রতি প্রান্তে অজুত কণ্ঠে ধ্বনিত ও প্রতিধ্বনিত হয় তাঁর মহিমাগাথা। মহানবি (সা.) বিশ্বমানবতার মূর্ত প্রতীক ও সত্য-সুন্দরের বাণীবাহক। তাঁর কারণেই আরব জাহানে নবজীবন সঞ্চারিত হয়, নতুন সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটে, নবীন সভ্যতার গোড়াপত্তন হয় এবং উদ্ভব ঘটে একটি নতুন জীবনব্যবস্থার।
তাঁর আদর্শ ও চারিত্রিক মাধুর্যের গুণে নানাগোত্রে বিভক্ত, কলহ-বিবাদপ্রিয়, সামাজিক ও নৈতিকভাবে অধঃপতিত, যাযাবর ও বর্বর আরব জাতি একটি সুমহান জাতিতে পরিণত হয়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দরদি এবং উৎপীড়িত ও অত্যাচারিত মানুষের প্রকৃত বন্ধু। অনাথ, দাস, কন্যাশিশু, বিধবা নারী ও গরিব-দুঃখীর দুঃখমোচনে তিনি সদা তৎপর থাকতেন। ইসলামপূর্ব সময়েই তিনি সব মানুষের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে হেরা গুহায় নবুয়ত প্রাপ্তির আগেই তাঁকে সবাই আল আমিন (বিশ্বস্ত) ও আস-সাদিক (সত্যবাদী) উপাধিতে ভূষিত করেন।
হযরত রাসুল (সা.)-এর শান্তি, মিলন ও ভ্রাতৃত্বের জীবনাদর্শই হোক আমাদের জীবনের একমাত্র পাথেয়। তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ করেই আমরা সব ধরনের অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তি পেতে পারি। জাতিতে জাতিতে মিলেমিশে বসবাস করতে পারি।
একবিংশ শতাব্দীতে আমরা নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা সংকটে রয়েছি। যুদ্ধ ও সহিংসতার পরিবেশে মানুষ শান্তির অন্বেষায় দিশাহারা। করোনা মহামারি মানবজাতিকে বড় ধরনের এক বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়ছে দুর্যোগ-দুর্বিপাক। বহু দেশে বিরাজ করছে এক দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি। বাড়ছে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত। একমাত্র মহানবি (সা.)-এর দেখানো পথ অনুসরণের মধ্য দিয়ে আমরা এই হানাহানির পথ ছেড়ে শান্তির পথে ফিরে আসতে পারি। মানবজাতিকে রক্ষা করতে পারি। গড়ে তুলতে পারি এক সুন্দর পৃথিবী। আমাদের মনে রাখতে হবে, সব ধরনের নৈরাশ্য ও ফ্যাসাদ বা সন্ত্রাস দূর করতেই হযরত রাসুল (সা,)-এর রেখে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামের আবির্ভাব। এই কঠিন সময় হযরত রাসুলে আকরাম (সা.)-এর শিক্ষা ও আদর্শই আমাদের সঠিক পথ দেখাতে পারে। হযরত রাসুল (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণের মধ্যেই আমাদের যাবতীয় মুক্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিহিত।
শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, নবিজি (সা.)-এর বাণী হৃদয়ে ধারণ করা এবং তা মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে এই দিবস উদযাপনের প্রকৃত তাৎপর্য।