নিউমোনিয়ার প্রকোপ, স্যালাইন সংকট

নিউমোনিয়ার প্রকোপ, স্যালাইন সংকট

রাজশাহী সংবাদদাতা: রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত সাড়ে তিন মাসে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত দুই হাজার ১০৯টি শিশু ভর্তি হয়েছে। পাঁচ-সাত দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১০০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া রাজশাহীতে স্যালাইনসংকট দেখা দিয়েছে। বাইরে থেকে বাড়তি দামে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডগুলোর বারান্দায়ও রোগী রাখা হচ্ছে। অত্যধিক রোগীর চাপে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। আবার স্যালাইনসংকটে রোগীর স্বজনরাও বিপাকে।
রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকা হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পাড়া হিসেবে খ্যাত। এই এলাকায় শতাধিক ওষুধের দোকান। ওষুধ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এপিএন স্যালাইনের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। তার পরও চাহিদামতো পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৯, ১০ ও ২৪ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চাপ বেশি। ভর্তি হওয়া শিশুদের অভিভাবকদের কারণে হাসপাতালের ওয়ার্ডের পা ফেলার জায়গা নেই। একই অবস্থা ওয়ার্ডের বারান্দায়ও, বিশেষ করে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে রোগী ও স্বজনদের ভিড় বেশি। এই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছে দুর্গাপুরের পালি এলাকার শিশু আকবর আলী। তার বাবা দেলশাদ হোসেন বলেন, ‘আমার শিশুকে গত ১৪ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করেছি।
এখন একটু ভালো আছে। প্রথম দিকে অবস্থা খুব খারাপ ছিল। চিকিৎসার জন্য স্যালাইনও পাওয়া যাচ্ছিল না। বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে গেলেও পাওয়া যাচ্ছিল না। ৬৫ টাকার স্যালাইন কিনতে হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা দিয়ে।’
ওই ওয়ার্ডের আরেক শিশুর অভিভাবক আফজাল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসকরা আন্তরিক; কিন্তু রোগীর চাপে সব সময় চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। আবার স্যালাইনও পাওয়া যাচ্ছে না। একটা স্যালাইন কিনতে ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা লাগছে। এত টাকা পাব কোথায়?’
আরেক রোগীর অভিভাবক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমার মেয়ের অবস্থা তেমন ভালো না। চিকিৎসকরা প্রতিদিন এপিএন স্যালাইন লিখছেন। হাসপাতালে স্যালাইনের তেমন সরবরাহ নেই। বেশির ভাগ সময় বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। কিনতে গেলে দোকানদাররা বলেন, ‘স্যালাইন নাই।’ তবে বেশি দাম দিলে তাঁরা এনে দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির রাজশাহী শাখার সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের পরিমাণ বাড়ায় স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে; কিন্তু কম্পানিগুলো সরবরাহ বাড়াচ্ছে না। এ কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। যার কারণে দাম বেড়েছে; কিন্তু ৬৫ টাকার স্যালাইন এক হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হওয়া কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘হাসপাতালে কলেরা ও নিউমোনিয়ার স্যালাইনের সংকট আছে। এ কারণে বেশির ভাগ সময় বাইরে থেকে স্যালাইন আনতে দেওয়া হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। তবে অনেকেই এসে বলছেন বাইরে স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। এতে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. শাহিদা ইয়াসমিন জানান, পাঁচ-সাত দিন ধরে গড়ে এক শরও বেশি শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো দিন ১০০ থেকে ১৩০টি শিশুও ভর্তি হয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার ভর্তি হয়েছে ৮৪টি শিশু। আর গত অক্টোবর মাসে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৮৭৫ শিশু। শিশু বিভাগের চারটি ওয়ার্ডের মধ্যে এ সময়ে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ শিশু মারা গেছে। গত আগস্ট থেকে চলতি নভেম্বর পর্যন্ত মোট নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ১০৯ জন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘শিশু রোগীর চাপ আছে এটা ঠিক। তবে চিকিৎসা কার্যক্রম ঠিকঠাক মতো চলছে। চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে আমার জানা নেই।’ স্যালাইনসংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যালাইনসংকট আছে। এটা নিরসনের চেষ্টা চলছে। ডেঙ্গু রোগীদের কারণে নিউমোনিয়া রোগীদের স্যালাইন সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাইরেও পাওয়া যাচ্ছে না। সারা দেশেই স্যালাইনসংকট আছে।’

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *