নতুন গন্তব্যে দেশের পণ্য

নতুন গন্তব্যে দেশের পণ্য

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির প্রচলিত বাজার হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকা। একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় আসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র জার্মানি থেকে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এই দুই দেশেই বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে। এই তথ্যটি নেতিবাচক হলেও অর্থনীতিতে আশা জোগাচ্ছে বাংলাদেশের নতুন গন্তব্য। ইউরোপ-আমেরিকার প্রচলিত বাজারের বাইরে ভারত, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় বাংলাদেশের রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। রপ্তানির এই নতুন গন্তব্য আশা জোগাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, এক দশক আগেও উল্লিখিত পাঁচ দেশে পণ্য রপ্তানি আয় ছিল নামকাওয়াস্তে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও কোরিয়া থেকে প্রাপ্ত রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। পরের পাঁচ বছর, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই পাঁচ দেশে রপ্তানি আয় সামান্য বেড়ে ৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। তবে এর পরের পাঁচ বছরে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে রপ্তানি আয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত ইপিবির তথ্য অনুযায়ী সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওই পাঁচ দেশে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়া বাকি চার দেশের প্রতিটিতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) মার্কিন ডলারের বেশি।

ইপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় এসেছে ভারত থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটিতে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার প্রায়, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। তবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে চমক দেখিয়েছে জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। জাপানে ৪০ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে যা কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ইতালিতে, ৪০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, জাপানের তুলনায় সামান্য বেশি। জাপানের পরই তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ৩৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে আয় বেড়েছে কানাডা ও কোরিয়ায়ও। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এএইচএম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের রপ্তানি আয় ছিল ইউরোপ-আমেরিকানির্ভর। এর ফলে ওই দেশগুলোর অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে রপ্তানি খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। এবার ভিন্ন ব্যাপার হয়েছে। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে আয় কমার পরও দেশের পণ্য রপ্তানি খাতে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রচলিত বাজারের বাইরে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো নতুন বাজারগুলোতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে।

নিট তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বহির্বিশ্বে চ্যালেঞ্জ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। বিদ্যুৎ, গ্যাস সংকটের কারণে কারখানাগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম ব্যবহার করতে পেরেছি। অনেক কারখানায় কোনো ওভারটাইম ছিল না। উপরন্তু প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে আমরা কম মুনাফায় পোশাক রপ্তানি করেছি। এরপরও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি বজায় থাকার অর্থ হচ্ছে- দেশের সক্ষমতা বাড়ছে। নতুন গন্তব্যে পণ্য রপ্তানি বাড়ার বিষয়টিও আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *