দেওয়ানবাগ ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বৈশ্বিক নীতিমালা মেনে চললে এমন ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি অভিযোজন, প্রশমন ও অর্থায়ন বিষয়ে কপ-২৮ সম্মেলনে বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে কর্মকৌশল নির্ধারণের লক্ষ্যে স¤প্রতি পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য উঠে আসে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিরূপ হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। বছরের বেশির ভাগ সময় বিরাজ করছে গ্রীষ্মকাল। বেড়ে যাচ্ছে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ, কমে আসছে শীত, তারতম্য ঘটছে বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক মাত্রায়। বেড়ে যাচ্ছে লবণাক্ততা আর সমুদ্রের পানির উচ্চতা। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ধান, গমের মতো খাদ্যশস্যের। আর এসব কিছুর কারণে বছরে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ছে বাংলাদেশ। সভায় পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর আমরা সাড়ে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ইউএস ডলারের ক্ষতির মুখে আছি। জলবায়ু পরিবর্তন হলে প্রতি প্যার্টানের পরিবর্তন হবে। সব জায়গায় ফসল উৎপাদন করতে পারবেন না। টেকসই কার্যক্রম ব্যাহত হবে। আবাদযোগ্য জমি কমে যাবে। অবকাঠামো নষ্ট হবে। সভায় বলা হয়, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮-এ ২০২০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বৈশ্বিক এই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে ২০২৪ সাল নাগাদ ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। কিন্তু সেজন্য প্রতিশ্রুত অর্থ মিলছে না উন্নত বিশ্ব থেকে। এ বিষয়ে জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, গরিব দেশগুলো বলেছিল, নবায়,যোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিমা সুবিধা লাগবে। আর তোমাদের (উন্নত দেশ) স্বীকার করতে হবে তোমাদের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের এই ক্ষতি হয়েছে। উন্নত দেশগুলো বলেছে, খবরদার তোমরা একথা উচ্চারণ করো না। আমরা মেনে নিয়েছি এই কথা বলব না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সংস্থা ও সিভিল সোসাইটি লাফাচ্ছে, যে আমরা ক্ষতিপূরণ পাব। সরি, প্রথম কথাই হচ্ছে ক্ষতিপূরণ নয়। কে কী পাবেন আপনাকে অ্যাডাপটেশনের জন্য কিছু টাকা-পয়সা দিতে পারে। আমরা বলেছি, এই অর্থ গ্রান্ড দিতে হবে। দাতারা বলছে, না সুদসহ নিতে হবে এবং বাণিজ্যিক বাজার সুদহারে দিতে চায়। অনেক জটিলতা আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান (বিসিসিএসএপি) ২০০৯, বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান ২০৩০ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।