জনসংখ্যা হোক জনশক্তি

জনসংখ্যা হোক জনশক্তি

যেকোনো দেশে মানুষই সম্পদ। মানুষের শ্রমে-ঘামে-মেধায়-পরিকল্পনায় একটি দেশ বা জাতির অগ্রগতি নিশ্চিত হয়। দেশের অভ্যন্তরে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা যখন ক্রমেই বাড়ছে, তখন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিষয়টি আরো গুরুত্ব নিয়ে সামনে আসছে। কারণ একজন দক্ষ-প্রশিক্ষিত মানুষ আত্মকর্মসংস্থানের পথটাও নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারেন, যদি যথাযথ রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য মেলে।
সাপ্প্রতিক সময়ের জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন বলছে, দেশে মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের বেশি এখন তরুণ, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে।
এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪৫টি দেশের জনসংখ্যাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন তরুণ জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণ কর্মক্ষম শক্তিকে কাজে লাগানোই দেশের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও ইউএনডিপির মতে, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বড় সুযোগ এনে দিয়েছে।
বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিকভাবে বহুদূর এগিয়ে যাবে। দেশে ২৬ লাখ ৩০ হাজার বেকার রয়েছে। অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান ২০২২-এ শূন্য পদসহ সরকারি চাকরির যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে করোনা মহামারির মধ্যে দীর্ঘ সময় নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সরকারি চাকরিতে ২৫.৭৮৬ শতাংশ বা চার লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি পদ শূন্য আছে। প্রাথমিকভাবে এই প্রায় ৫ লাখ তরুণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে সেটি অর্থনীতিতে বড় গতি আনতে সহায়তা করবে।
ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুযোগ কাজে লাগাতে হলে জনশক্তিকে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সেটি করতে পারলে জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত হবে। এটা করার জন্য সবার আগে যা দরকার, তা হলো সবার জন্য কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। কারণ আমাদের দেশের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা বেকারত্ব ঘোচাতে পারছে না। শিক্ষা খাতে শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে, বিশেষ করে আইটি ও কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্ববাজারের চাহিদার ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিপুল কর্মক্ষম মানুষকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাদের কোন ধরনের শ্রমশক্তি প্রয়োজন, তা জানতে হবে। তাদের চাহিদা বুঝে জনশক্তি প্রস্তুত করতে হবে। অনেক দেশ চাকরির বাজার অনুযায়ী বা ‘জব মার্কেট ওরিয়েন্টেড’ শিক্ষাব্যবস্থা সাজায়। আমাদের সেদিকে যেতে বাধা নেই।
শিক্ষার বিস্তার কিংবা উচ্চশিক্ষার সুযোগ অবারিত করার বিষয়টির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেই হবে। শিক্ষিত কিংবা দক্ষ জনশক্তি একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে নানারকমভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনেই নয়, বর্তমান বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও এর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *