শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী আড়াই শ বছরে বিশ্বে জনসংখ্যা তাদের সম্পদের মতোই বিস্ফোরিত হয়েছে । কিন্তু ‘ব্ল্যাক ডেথ’ খ্যাত প্লেগ মহামারির পরে এই শতাব্দীর শেষ দিকে গিয়ে প্রথমবারের মতো পৃথিবীর জনসংখ্যা কমতে পারে। এর অর্থ এই নয় যে মানুষের জন্মের তুলনায় মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কারণে জনসংখ্যা হ্রাস পাবে। মূলত জন্মহার কমার ফলেই জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে।
বিশ্বের অনেক জায়গায় ইতিমধ্যে নারীদের ফার্টিলিটি রেট তথা প্রজনন সক্ষমতা ও সন্তান জন্মদানের হার কমতে শুরু করেছে। এটি অবশ্য একটি পরিচিত বিষয়। কিন্তু ভবিষ্যতে এর পরিধি ও পরিণতি কি হয় সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। এ ধরনের সমস্যার সমাধানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো বিষয় আশা দেখালেও জন্মহার কমার বিষয়টি ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০০০ সালে বিশ্বে নারীদের ফার্টিলিটি রেট বা প্রজনন সক্ষমতার হার ছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ। এই হার তখন ২ দশমিক ১ শতাংশ থাকলেও চলে। কারণ, তাতে বৈশ্বিক জনসংখ্যায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ত না। সে জন্য ওই হারকে মোটামুটি একটা স্থিতিশীল জন্মহার বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে নারীদের ফার্টিলিটি রেট বা প্রজনন সক্ষমতার হার কমে ২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। তা ক্রমাগত কমতে থাকায় এর পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিশ্বের যে ১৫টি দেশে জিডিপির আকার সবচেয়ে বেশি সেগুলোতে নারীদের সন্তান জন্মদানের সক্ষমতার হার বৈশ্বিক গড় জন্মহারের চেয়ে কম। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ধনী দেশগুলো রয়েছে। এসব দেশের জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি । অর্থাৎ এই দেশগুলোয় জন্মহার কমার প্রবণতা নিশ্চিতভাবে বৈশ্বিক জনসংখ্যা কমার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বৃদ্ধ মানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি, এমন দেশের তালিকায় এখন শুধু জাপান আর ইতালিই নয়, এতে স্থান করে নিচ্ছে ব্রাজিল, মেক্সিকো ও থাইল্যান্ডের মতো দেশও। ২০৩০ সাল নাগাদ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্ধেকের বেশি জনগণের বয়স ৪০ বছরের বেশি হবে ।
একটা সময় যখন এসব দেশের বুড়ো মানুষগুলো মারা যেতে শুরু করবে, তখন যদি একই হারে নতুন মানুষের জন্ম না হয়, তাহলে দেশে দেশে জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে। আফ্রিকার বাইরে বিশ্বের জনসংখ্যা এই শতকের ৫০-এর দশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হবে ধারণা করা হচ্ছে । আর চলতি শতকের শেষের দিকে গিয়ে জনসংখ্যা বর্তমান সময়ের তুলনায় কমবে । এমনকি আফ্রিকাতেও প্রজনন সক্ষমতার হার দ্রুত কমবে ।
পরিশেষে বলা যায়, ভবিষ্যতে বিশ্বকে কমসংখ্যক তরুণদের নিয়ে কাজ করতে হবে। তখন সম্ভবত সংকচিত জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা শিখতে হবে। এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রোবোটিক্সের সঙ্গে মিলে বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়াকেও কম শ্রমনিবিড় করে তুলতে পারে।
এ ধরনের উদ্ভাবনের চাহিদা অবশ্যই অনেক বাড়বে। সব মিলিয়ে কম সন্তান জন্ম দেওয়ার মানে কিন্তু প্রতিভাবান মানুষের জন্মও কমে যাওয়া। প্রতিভাবান মানুষ কমার যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে সেটিও মানুষ তার প্রতিভা দিয়ে সমাধান করতে পারে।
– দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনূদিত