খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপে বাংলাদেশসহ দ. এশিয়া

খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপে বাংলাদেশসহ দ. এশিয়া

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশে মুদ্রার দরপতন খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছে। এতে দেশগুলোতে খাদ্য ও জ্বালানির সংকট আরো তীব্র হচ্ছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশের বেশি। গত বুধবার বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ ‘কমোডিটি মার্কেট আউটলুক’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়, রেকর্ড উচ্চমূল্যের কারণে জ্বালানির মধ্যে তরল গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তা ইউরোপের দেশগুলো চড়া দামে কিনে নিচ্ছে। এতে স্পট মার্কেট থেকে বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ অনেক দেশ উচ্চমূল্য দিয়ে আমদানি করতে পারছে না। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এসব দেশে জ্বালানিসংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস করায় এবং মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করায় অর্থনৈতিক কাজে মন্দা আরো বাড়বে। এ ছাড়া মার্কিন ডলারের কারণেও আসন্ন বিশ্বমন্দা তৈরি হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, ২০২২ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি গড়ে ২০ শতাংশের বেশি। একই সময়ে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা, সাব-সাহারা আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়াসহ অন্যান্য অঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গড়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে। পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলোতেই শুধু খাদ্য মূল্যস্ফীতি কম। আংশিকভাবে চালের দাম স্থিতিশীল থাকার কারণে এসব অঞ্চল কিছুটা স্বস্তিতে।

এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি নিয়ে যে আঞ্চলিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাতেও বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য এবং স্থানীয় মুদ্রার দরপতনে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ বাজার পরিচালনায় পার্থক্যের কারণে একেক দেশে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ভিন্নতা রয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতি হলেও স্থানীয় বাজের এর প্রভাবে ভিন্নতা রয়েছে বলে মনে করে আইএমএফ। জানুয়ারি ২০১৭ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত আইএমএফের দেওয়া বৈশ্বিক পাঁচটি পণ্যের মূল্যস্ফীতির হারে দেখা যায়, গমের গড় মূল্যস্ফীতি বিশ্ববাজারে যখন ২২ শতাংশ, তখন একই পণ্যের মূল্যস্ফীতি ভারতে ৫.২ শতাংশ, বাংলাদেশে ১১.৪ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ১৬.৮ শতাংশ। ডিজেলের মূল্যস্ফীতি বিশ্ববাজারে যখন ৪৭ শতাংশ, তখন ভারতে ১০.৩ শতাংশ, বাংলাদেশে ৭.৭ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ২৫.৬ শতাংশ। ভোজ্য তেলের মূল্যস্ফীতি বিশ্ববাজারে যখন ২৯.৪ শতাংশ, ভারতে তখন ১১.৯ শতাংশ, বাংলাদেশে ১৫.৭ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ১৭.২ শতাংশ। চিনির গড় মূল্যস্ফীতি বিশ্ববাজারে ২৪.৬ শতাংশ, ভারতে ১০.২ শতাংশ, বাংলাদেশে ১৬.৭ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ১৮.৮ শতাংশ।

আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেরই মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে। এ বছরের শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কার মুদ্রার দরপতন ঘটে ৮০ শতাংশ এবং পাকিস্তানের মুদ্রার দরপতন হয় ৩৬ শতাংশ। এ ছাড়া দরপতন ঘটেছে বাংলাদেশি টাকা, ভারতীয় রুপি ও মালদ্বীপের রুপিয়ারও।

এদিকে গত বুধবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) আয়োজিত সেমিনারে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ আয়াগো ওয়াম্বিলে একটি সমীক্ষার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠলেও বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্যসংকটের মুখোমুখি।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে গেছে এমন মানুষ গত বছরের জুনে ছিল ৭ শতাংশ। চলতি বছরের মে মাসে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ১০ বার টেলিফোনে এক হাজার ৩০০ থেকে সাত হাজার ৭০০ মানুষের ওপর জরিপের মাধ্যমে এ সমীক্ষা চালায় বিশ্বব্যাংক। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, এ বছরের মে মাসে ৬ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে পারছিল না। গত বছরের জুনে এ সংখ্যা ছিল ৫ শতাংশ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৫২ শতাংশ। তা কিছুটা কমে সেপ্টেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৯.১০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.০৩৬ শতাংশে, যা এর আগের মাসে অর্থাৎ আগস্টে ছিল ৯.৮৭ শতাংশ।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *