কামেল মোর্শেদই মুরিদকে মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছে দিতে পারেন -ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা

কামেল মোর্শেদই মুরিদকে মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছে দিতে পারেন  -ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা

বিশেষ সংবাদদাতা: আমার মোর্শেদ কেব্লাজান মোহাম্মদী ইসলামের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেটা মানুষকে আত্মিক অর্থাৎ চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটাবে। তিনি বিভিন্ন আলোচনায় বারংবার বলতেন, আমরা যাতে নিজেদের চরিত্রকে সংশোধন করি। এই চরিত্র সংশোধিত না হওয়ার কারণে যুগে যুগে ইসলাম ধ্বংস হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে এবং মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম, মুসলমান ধর্ম-এই ৪টি হচ্ছে মৌলিক ধর্ম। এছাড়াও হাজার খানেক ধর্ম পৃথিবীতে আছে। মোটামুটি ১শ এর উপরে প্রসিদ্ধ ধর্ম পাওয়া যাবে। সকল ধর্মই মানুষকে একটি মৌলিক শিক্ষা দেয়। সেটি হচ্ছে শান্তি। আরও একটি মৌলিক শিক্ষা দেয়। সকল ধর্মে সৃষ্টিকর্তা আছেন। সেই সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ। আল্লাহ্কে কীভাবে পাওয়া যায় এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন কিভাবে করা যায়? আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্যে আল্লাহ্ তায়ালা কিছু নিয়ম-কানুন বেঁধে দিয়েছেন।
মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের আহব্বানে শুক্রবার বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসুল (সা.) মাহফিলে বাণী মোবারক প্রদান করতে গিয়ে এই কথা বলেন।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, অন্যান্য ধর্মের কিছু নিয়ম-কানুন আছে। যেমন খ্রিস্টানরা সপ্তাহে একদিন (রবিবার) চার্চে যায়, হিন্দুরা মন্দিরে যায়; পূজা করতে হয়। বৌদ্ধরা তাদের মঠে যেয়ে থাকেন। মুসলমানদের তাদের মসজিদে যেতে হয়। মুসলমান ছাড়া অন্যান্য মৌলিক ৩টি ধর্ম রয়েছে, তাদের ইবাদত হয় মন্দিরে এবং চার্চে। কিন্তু মুসলমানদের জন্যে আল্লাহ্ তায়ালা ইবাদতের স্থান বানিয়েছেন সারা পৃথিবীর জমিনকে। আপনি যেখানে যান আপনি নামাজ পড়তে পারবেন, আপনি মোরাকাবা করতে পারবেন। আপনি আপনার বাড়িতে বসে পড়তে পারেন, আপনি অন্যজনের বাড়িতে বসে নামাজ পড়তে পারেন। আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্। আল্লাহ্ যদি আসমান এবং জমিনের সৃষ্টিকর্তা হন এবং এর মালিক হন, পুরো জমিন তো তাঁর। আমাকে কেন একটি জায়গায় আবদ্ধ হতে হবে যে, এই বিল্ডিং-এর মধ্যে নামাজ পড়লে আমার নামাজ হবে, অন্য জায়গায় হবে না? যেহেতু আল্লাহ্ সকল আসমান ও জমিনের মালিক তাই জমিনের যেকোনো স্থানে দাঁড়িয়ে একজন ইমানদার ব্যক্তি যদি তার প্রার্থনা করে, মালিক দয়া করে তার প্রার্থনা শুনবেন। তারপরেও মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধতায় বাংলাদেশ-সহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বড় এবং সুন্দর সুন্দর নামকরা মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাহলে ধর্ম হলো আল্লাহর আনুগত্য লাভ করা, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, ধর্ম করতে গিয়ে এমন কথা নেই যে, আমি আল্লাহ্কে মানি, তুমি কেন আল্লাহ্কে মানবে না? এটি ধর্ম নয়। ধর্মের মূলমন্ত্র হচ্ছে শান্তি বিরাজ রাখা, শান্তিতে থাকা। যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। কারো কর্ম কেউ নিতে পারবে না। একই মায়ের গর্ভ থেকে ৫ জন সন্তান জন্ম নিয়েছে। এই ৫ জন যেই মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নিলো, মায়ের আলাদা হিসাব হবে এবং এই ৫ জন সন্তানের আলাদা হিসাব হবে। কারণ আল্লাহ্ বিধান করেছেন, যার কর্মফল তাকে ভোগ করতে হবে। পিতার দোষে পুত্র অপরাধী হবে না। পুত্রের দোষে পিতা অপরাধী হবে না। ভাইয়ের দোষে বোন শাস্তি পাবে না। বোনের দোষে ভাই অপরাধী হবে না। তিনি ন্যায় বিচারক। যিনি ভালো করবেন তিনি ভালো পথ পাবেন। যিনি অন্যায় করবেন তার জন্য অন্যায়ই অপেক্ষা করবে। কারণ আমার মালিক আল্লাহ্ ন্যায় বিচারক। তাহলে আমরা যারা ধর্ম করছি, আমার কর্ম আমার সাথে যাবে। আমার গর্ভধারিণী মা, যিনি আমাকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছেন, তার কর্মও আমার সাথে যাবে না। আর তিনি আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসলেও আমার কিছু ভালো কর্মও তাকে আমি দিতে পারবো না। আমি উপদেশ দিতে পারবো, আমি আহব্বান করতে পারবো। তাহলে এই যে একে অপরের স্বাধীনতা বজায় রাখা, এটিও ধর্মের একটি অংশ। হযরত রাসুল (সা.) মদীনায় এবং পরবর্তীতে মক্কায় যখন তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেখানে খ্রিস্টান এবং অগ্নি উপাসকসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা ছিলেন। তিনি কিন্তু কাউকে কচুকাটা করেননি। তিনি আহ্বান করেছেন, ইসলামের পথে ডাক দিয়েছেন কিন্তু জোরপূর্বক কাউকে ধর্মে আনেননি অথবা জোরপূর্বক ভয় দেখিয়ে কাউকে ধর্ম মানাননি। যদিও ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম ছিল। কারণ যদি আমরা একে অপরের বিশ্বাস অন্যজনের উপরে চাপিয়ে দিতে চাই, তাহলে শান্তি খর্ব হবে। কেউ মানবে, কেউ মানবে না; কেউ ভয়ে মানবে, কেউ ভয়েও মানবে না।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, ধর্মে বলা আছে যে, আপনি আত্মীয়-স্বজনের সাথে প্রতিবেশীদের সাথে, ভাই-বোনদের সাথে কিরূপ আচরণ করবেন, যাতে শান্তি বজায় রাখতে পারেন। আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার অনেকগুলো রাস্তা আছে। তার মধ্যে একটি হলো- ইবাদত অর্থাৎ ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। তুমি আমার কাছে আনুগত্য করবে দিনে ৫ বার, আমার সামনে এসে সিজদা করবে। এতে তুমি যে আমাকে আনুগত্য কর, আমি যে তোমার মালিক, তুমি যে আমার বান্দা এর প্রমাণ তুমি আমাকে দাও। ৫ বার আমি যেই নির্দিষ্ট সময় বলেছি, ঐ সময়ে তুমি মাথা অবনত কর এবং আমার বাণীর কিছু অংশ তুমি পড়ে আত্মসমর্পণ করে বল, “ইহা তোমার বাণী; আমি মাথা অবনত করলাম তোমার কাছে, জগতের আর কারো কাছে নয়।” এই যে আমি সিজদায় গেলাম, এটি হলো আল্লাহর কাছে আনুগত্য করার একটি পদ্ধতি। তারপর সাওম বা রোজার কথা। এই পৃথিবীতে যত অপরাধ সংগঠিত হয়, ৯০ ভাগ অপরাধ আজও সংগঠিত হয় ক্ষুধার তাড়নায়। ১০ ভাগ অপরাধ সংগঠিত হয় স্বভাবজনিত কারণে বা অন্যান্য কারণে। কিন্তু এখনো সারা বিশ্বে ৯০ ভাগ অপরাধ ঘটে মানুষের পেটের যন্ত্রণায়, ক্ষুধার যন্ত্রণায় অথবা দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে। আমরা সমাজের দরিদ্র মানুষের এই ক্ষুধার কষ্ট যাতে ব্যক্তিজীবনে বুঝতে পারি, সেজন্যে আল্লাহ্ তা’য়ালা সাওম ফরজ করলেন যে, তুমি আমার সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাও তাহলে এক মাস সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তুমি না খেয়ে থাক। তুমি পানি পর্যন্ত খাবে না, অন্য কোন খাবার পর্যন্ত মুখে নিবে না। তুমি অনুভব কর, এই ক্ষুধার যন্ত্রণা কেমন? গরিব মানুষ কিভাবে ক্ষুধার যন্ত্রণায় কষ্ট পায়, তুমি তা অনুধাবন কর। তারপরে বললেন, যাকাতের কথা। তুমি আমার সন্তুষ্টি অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাও, তাহলে তুমি যাকাত আদায় কর। মানুষ বলে, এটি তো আমার সম্পত্তি। আমি কেন যাকাত আদায় করব? এই সম্পত্তি কামাই করতে, আমরা কি কেউ কম কষ্ট করি? আল্লাহ্ বলছেন, যাকাত দিতে হবে। যারা আল্লাহ্কে মানেন, যারা আল্লাহ্কে ভয় পান, যারা তার আনুগত্য করেন তারা যাকাত আদায় করেন। ঐ সম্পত্তি তারা দেন মানুষকে। এখন ভিক্ষুককে দেওয়ার সময় আমি ১০ টাকার নিচে খুঁজলেও, যাকাত দেওয়ার সময় আমি খুঁজতে পারি না। কেন পারি না? কারণ যাকাত তো আল্লাহর হুকুম, যা অংশ তাই দিতে হবে। এখন যাকাত দেওয়ার সময় যা অংশ আমি দিলাম, তাহলে এতে আল্লাহ্ কি পেলেন? রোজা না হয় বুঝলাম মানুষের কষ্ট অনুভব করা। নামাজ না হয় বুঝলাম আল্লাহ্কে সিজদা দেওয়া। তো যাকাতে আল্লাহ্ কি পেলেন? সম্পদ তো মানুষের কাছেই মানুষকে দান করলাম, আল্লাহ্ তো পেলেন না। আল্লাহ্ বলেন, আমার সম্পদ তুমি যার কাছে আদায় কর, তা আমি পেলাম। তাহলে এর অর্থ কি? আমাদের বর্তমান যাকাত ব্যবস্থা লোক দেখানো হয়ে যাচ্ছে! লোক দেখিয়ে যাকাত আদায় করলে আদায় হবে না বলবো না। তবে এতে আমিত্ব এবং অহংকার প্রকাশ পায় যে, আপনি আসলে মানুষকে দেখাচ্ছেন ইবাদতের জন্য।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, এই যে দেখুন, আমি আমার অর্জিত অর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে অপরকে দিবো এতে প্রমাণ করে যে, আল্লাহ্ চান আমরা একে অপরের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করি। আমরা একে অপরের সাথে বন্ধন তৈরি করি। ধর্ম সম্পর্কে যদি একটু গভীর পর্যালোচনা করা যায়, ধর্মের মূলমন্ত্র, “নিজের মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।” অর্থাৎ পরনিন্দা, পরসমালোচনা করাও অধর্মের কাজ। অপরকে মন্দ বলা, অপরকে ছোট করা, অপরের উপরে জুলুম করাও কিন্তু অধর্মের কাজ। অন্যায় করা অধর্মের কাজ, মিথ্যা বলা অধর্মের কাজ। ধর্ম পরিশুদ্ধতার দিকে ধাবিত করবে। যে ধর্ম আপনাকে পরিশুদ্ধতার দিকে ধাবিত করবে না সেটি ধর্ম না, সেটি অধর্ম। যে ধর্ম আপনাকে মালিকের সন্ধান দিবে না, সেটি ধর্ম নায়, সেটি অধর্ম। যে ধর্ম আপনাকে মালিকের তুষ্টির ব্যবস্থা করবে না, সেটি ধর্ম নয়, সেটি অধর্ম। এখন অসুবিধা হচ্ছে আমরা যারা নিজেদের আশেকে রাসুল দাবি করছি, আমরা নিজেরা কতটুকু ধর্মে আছি আর আমাদের মধ্যে কতটুকু অধর্ম আছে? আমরা নিজেরা কতটুকু ধর্মে আছি তা যাচাই করার ক্ষমতা আমাদের আছে। আপনি আপনাকেই তো জানেন। আপনি কয়টি মিথ্যা বলেন; কয়টি খারাপ কাজ করেন; কয়টি অন্যায় করেন? এটি অধর্ম। আর যদি আপনি মোরাকাবায় বসে মালিককে ডাকেন, মালিক আমি তোমাকে চাই, ক্ষমা চাই, দয়া চাই, তোমার আনুগত্য করতে চাই। এটি ধর্ম। নামাজের সময় আপনি যদি উঠে দৌড়ান আমি নামাজ পড়বো না, এটি অধর্ম। আর যদি আপনি নামাজের সময় কাতারে দাঁড়িয়ে বলেন, মালিক আমি তোমাতে আত্মসমর্পণকারী। আমার এই সিজদা যেন তোমার কদমে হয়। তুমি কবুল করে নাও। এটি ধর্ম। রোজার সময় সবাই না খেয়ে কষ্ট করছে, আপনি খাচ্ছেন। বলেন, আমার ক্ষুধা সহ্য হয় না। কারোই ক্ষুধা সহ্য হয় না, সবাই কষ্ট করে। ক্ষুধা কি কারো সহ্য হয়? এই পৃথিবীতে একজন মানুষ দেখান সে বলবে, তার ক্ষুধা সহ্য হয়! একমাত্র যিনি অসুস্থ তার কথা বলছি না। কিন্তু আপনি সুস্থ,আপনার ক্ষুধা সহ্য হয় না। বিভিন্ন বাহানায় আপনি রোজা রাখছেন না, এটি অধর্ম। আর রোজা রেখে পবিত্র থাকছেন এবং শুধু রোজা রাখেন নি, পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন, এটি ধর্ম। রোজাদার যখন রোজা রেখে মালিকের ইবাদত করে, সারাদিন, রোজাদার পরিশুদ্ধতার জন্যে মালিককে খুঁজে বেড়ায়। এটি ধর্ম। আর ঐ রোজাদারই যখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা অর্থাৎ রোজার মাসে কাপড়সহ বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীতে ডাবল মুনাফা করছে, এটি অধর্ম।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আমরা সবাই জানি কোনটি ধর্ম, কোনটি অধর্ম। তবুও আমরা কেন ধর্মের পথে আসি না? বলবেন, এইরকম কথা বললে তো সমাজে চলতে পারবো না। সমাজে চলতে না পারলেও মালিকের কাছে জবাব দিতে হবে না? এই সমাজের মানুষ কি আপনাকে খাওয়ায়? সমাজের মানুষ আপনাকে পরায়? সমাজের মানুষ আপনার কর্মের উসিলা। খাওয়ায় এবং পরায় আপনার আমার মালিক সৃষ্টিকর্তা। যে সৃষ্টিকর্তা বাবা আদম (আ.) থেকে শুরু করে মানুষ সৃষ্টি শুরু করেছেন। আজও দিয়ে যাচ্ছেন, মায়ের গর্ভে শত-সহস্র মানুষ আসছে আর যাচ্ছে। তিনিই আমাদের সৃষ্টিকর্তা। আমরা তাঁর কাছ থেকে এসেছি, পুনরায় তাঁর কাছে ফিরে যাবো। তারপরেও যাতে তাকে ভুলে না যাই, তিনি কুরআন পাঠিয়েছেন। নবুয়তের যুগে নবি-রাসুল এবং বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ্ পাঠাচ্ছেন। আমিই একমাত্র অলী-আল্লাহ্ নই। এরকম হাজার হাজার অলী-আল্লাহ্ আছেন। যাতে আপনার আমার মতো মানুষকে তিনি আল্লাহ্ ও রাসূল (সা.)-এর পথে ধাবিত করতে পারেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আমরা অলী-আল্লাহর কাছে এসে নিজেকে পরিবর্তন করতে চাই না। আমি অলী-আল্লাহ্ পেয়ে গিয়েছি সত্য। তিনি তো পথপ্রদর্শক। তিনি পথ দেখাবেন। চলতে হবে কার? আপনার। শিক্ষক পড়াতে পারে, পরীক্ষায় লিখে দিতে পারে না। সারা বছর শিক্ষক পড়াতে পারবে, পরীক্ষায় লিখবে কে? ছাত্র। ঐ দিন পরীক্ষার জবাব আপনাকে দিতে হবে। কি দিবেন? বনি ইসরাইলের এক লোক ১শ খুন করেছিলেন। তারপরেও শুধু মালিকের পথে অগ্রসর হওয়ার কারণে মালিক তাকে ক্ষমা করেছেন। আল্লাহ্কে পাওয়ার জন্যে তিনি যেই চোখের পানি ফেলেছিলেন, যেই আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, সেই বিশেষ বিবেচনায় ঐ বনি ইসরাইলের লোক ক্ষমা পেয়েছিলেন। আপনি আমি কি তার চেয়ে বড় নিষ্ঠুর? আপনি আমি কি তার চেয়ে বড় অপরাধী? তার চেয়ে বেশি পাপ করেছি? তা তো কারিনি। কেন মালিকের কাছে ক্ষমা পাবো না, বলুন? পেতে পারি। মালিক যা বলেছেন সেই চেষ্টাটুকু তো করি। যদি ঐ চেষ্টাটুকু করি, মালিক তো দেখবেন আমি নামাজ পড়েছি। কবুল হয়েছে, কি হয়নি জানি না কিন্তু পড়েছি তো। আমি রোজা রেখেছি, আমার রোজা মালিক কবুল করেছেন কি-না, আমি জানি না। কিন্তু না খেয়ে তো থেকেছি মালিককে পাবার জন্য। আমি রোজা রেখে পাপ করেছি কিন্তু মন থেকে চেষ্টা করেছি যতটুকু পাপ না করা যায়। মোরাকাবায় বসেছি, অন্ধকার দেখেছি তবুও আমি বসে বলেছি, আমি তোমাকে চাই। এইটুকু চেষ্টা যদি আমরা করি, আমার মালিক কি বিশেষ বিবেচনা করতে পারেন, না পারেন না? আমি গোলাম বিশ্বাস করি, “বান্দা তত পাপ করতে পারে না, মালিক যত ক্ষমা করতে পারেন।” আমি বিশ্বাস করি, “আমরা তত পাপ করতে পারি না, আমার মালিক আমাদের যত মাফ করতে পারেন।” তাহলে কেন আমরা মালিকের কাছে ক্ষমা চাইবো না? কেন আমরা মালিকের পথে নিজেকে ধাবিত করবো না?
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, কেন আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের মিথ্যা আশ্বাস দিবো? ভালো শিক্ষক পেলে লাভ নেই। লাভ সেদিন, যেদিন আপনি পরীক্ষায় পাশ করবেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নামী দামী শিক্ষক আপনাকে দিলাম কিন্তু আপনি যদি ঐ ক্লাসে না পড়েন, শিক্ষক বই ভেজে খাওয়ালেও আপনি পরীক্ষায় পাস করবেন না। ঠিক তেমনিভাবে, যত বড় অলী-আল্লাহ্ আসুক, আপনি যদি আল্লাহ্কে পেতে না চান, তাহলে আপনি তো আল্লাহ্কে পাবেন না। কারণ আপনার মন ছুটে যায়। তাই প্রত্যেক আশেকে রাসুলের দায়িত্ব অলী-আল্লাহর কাছ থেকে নুরে মোহাম্মদীর একটু নুর নিজের সীনায় ধারণ করা। এটা মুরিদের দায়িত্ব। যে মুরিদ ঐ নুর নিজের সীনায় নিয়ে নিজের সীনাকে আলোকিত এবং বিকশিত করতে পারবেন, ঐ মুরিদ হবেন আল্লাহ্ওয়ালা, ঐ মুরিদ হবেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকারী। আর যিনি ঐ নুর ধারণ করতে পারবেন না, দিন যাবে, রাত যাবে, সময় যাবে কিন্তু জীবন বৃথা হয়ে যাবে। আলোচনার শুরুতে বলেছি, যার যার কর্ম তাকেই ভোগ করতে হবে। আপনি যদি আলোকচ্ছটা নেন আপনার জন্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটিই আপনার কর্ম। আর যদি সেটা না পারেন আল্লাহ্ বলবে, তুমি অলী-আল্লাহর কাছে গিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারনি। তোমার জন্যে শাস্তি ডাবল। কারণ তুমি জেনে ভুল করেছো। না জেনে ভুল করা এক, আর জেনে ভুল করা আর এক। তুমি মুক্তির পথে ছিলে, তারপরেও কেন মুক্তি পাওনি? তুমি তো এই রাস্তায় ছিলে, তারপরে কেন পাওনি? কারণ তুমি তাকে অনুসরণ করনি।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আমার এই কষ্ট বৃথা যাবে; আল্লাহর বন্ধু আমাদের মোর্শেদ কেবলাজানের এই কষ্ট বৃথা যাবে; ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর কষ্ট বৃথা যাবে; সকল অলী-আল্লাহর কষ্ট বৃথা যাবে, যদি আপনি ইমানদার না হন, আপনি যদি নিজেকে আলোকিত করতে না পারেন। অলী-আল্লাহ্গণ মোমবাতির মতো। আগুন ধরিয়ে দিবেন উনি আলো দিতেই থাকবেন এবং ঐ আলোর সাথে নিজেকে পুড়তে থাকবেন। মুরিদের কষ্ট, মুরিদের যন্ত্রণা নিবেন আর নিজেকে পুড়বেন, আর আপনাকে আলোকিত করবেন। একসময় যখন মোম ফুরিয়ে যাবে উনি চলে যাবেন। আবার ঐ আলো অন্যজন ধরবেন। কিন্তু ঐ আলো থেকে যদি একটু আলো আপনি আপনার ঘরে নেন আপনার ঘর আলোকিত হবে। আর যদি দূর থেকে ঐ আলোতে নিজের হাত সেকেন, শীতে গরম অনুভূত করতে পারবেন, কিন্তু আলো আপনার কাছে যাবে না। আপনি কি হাত সেকবেন, না-কি আলো নিবেন? আপনি সিদ্ধান্ত নিন। যদি আলো নেন আপনি আলোকিত মানুষে পরিণত হবেন। আর যদি ঠান্ডার দিনে একটু গরম অনুভূত করতে চান, তাহলে তো কিছু করার নেই। আলোর ক্ষতি হবে না কিন্তু দিনশেষে আলোর কাছে এসে নিজেকে আলোকিত করতে পরলেন না। এর চেয়ে বড় অসহায়ত্ব, এর চেয়ে বড় লজ্জার, এর চেয়ে বড় দুঃখের, এই জগতে কি আছে?
তিনি বলেন, আমি আমার মোর্শেদের গোলাম। মোর্শেদের গোলামী করে যতটুকু বিদ্যা শিখেছি, অলী-আল্লাহ্ মানলে লাভ নেই, যদি তাঁর থেকে নিজে আলো নিতে না পারেন। তাই নিজেকে চরিত্রবান বানান। আপনারা আমার ভাই, আপনারা আমার বোন। আপনাদের কাছে আমার উদাত্ত আহবান, দয়া করে নিজেদের পরিবর্তন করুন। না হলে আমার কষ্ট বৃথা যাবে। মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টা, ৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে কাজ করি। তারপরে যদি এই কষ্ট বৃথা যায়, কাকে মুখ দেখাবো, বলুন? চলুন না আমরা পরিবর্তিত হই! চলুন না আমরা আলোকিত হই! মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সেই তৌফিক দান করুন।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আমি ঘরোয়া মিলাদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো না, শুধু ২টি কথা বলতে চাই। এই তরিকা আপনার আর আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান, না-কি সারাবিশ্বে এই তরিকার আলো ছড়াতে চান? সারাবিশ্বে যদি ছড়াতে চান, একমাত্র এবং সর্বোত্তম মাধ্যম হলো ঘরোয়া মিলাদ। ঘরোয়া মিলাদে আপনার বাড়িতে যদি ২ জন লোকও তরিকা নেয়, আমার লক্ষ-লক্ষ লোক তরিকা নিবে। আশেকে রাসুলদের প্রতি আমার আহবান, যাদের সামর্থ্য আছে, দয়া করে ঘরোয়া মিলাদ চালু করুন। চেষ্টা করবেন বছরে সর্বনিম্ন ২টি ঘরোয়া মিলাদ দেওয়ার জন্য। আপনারা বাড়ি বাড়ি মিলাদ দিন। আমাদের আলেম-ওলামা ভাইয়েরা গিয়ে যখন আলোচনা করবে, দেখবেন ঐখান থেকে আপনার পাড়া-মহল্লায় শত-সহস্র আশেকে রাসুল আসা শুরু করেছে। আগামী ১ বছরের মধ্যে আমি সারাবিশ্বে মোহাম্মদী ইসলামের জোয়ার আনতে চাই। আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমরা ১০ কোটি আশেকে রাসুলে উনীœত করতে চাই। বছরে ২টি ছোট্ট ঘরোয়া মিলাদ পারে আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে।
পরিশেষে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর বাণী মোবারক প্রদান শেষে আখেরি মোনাজাত প্রদান করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *