দেওয়ানবাগ ডেস্ক: দেশে করোনাভাইরাসের নতুন উপধরন জেএন.১ সংক্রমণ বেড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় এই জানুয়ারিতে সংক্রমণ বেড়েছে চার গুণের বেশি। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণের হার আরো বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে গত ২১ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাজধানীর ৯টি কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম শুরু করলেও টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার ঢাকার চার কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, দুপুর পর্যন্ত কেন্দ্রগুলো ফাঁকা। জানা গেছে, দিনে টিকা নিতে আসছেন গড়ে ২২ জনের কম। মানুষ না থাকায় কয়েকটি কেন্দ্র নির্দিষ্ট সময়ের আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেন্দ্রগুলোতে কর্মরতরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার নেই, টেলিভিশন, পত্রিকাগুলোতেও কোনো খবর প্রকাশ হচ্ছে না। তাই অনেকে জানেই না টিকা দেওয়া হচ্ছে।
তাঁরা বলেন, তৃতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার পর্যন্ত মানুষের আগ্রহ ছিল। করোনাভীতি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহ কমে গেছে। আগে বিদেশে যাওয়ার জন্য হলেও টিকা নিতে আসত, এখন সেটিও কমে গেছে।
এ বিষয়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রগ্রাম ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল মুরাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, নতুন উপধরনে সংক্রমণ বাড়লেও তীব্রতা আগের মতো নয়। মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না। মৃত্যুও একেবারে কম। মূলত এই কারণে টিকার আগ্রহ বাড়ছে না।
আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ‘চতুর্থ ডোজ টিকা নিয়েছে ৫০ লাখের বেশি মানুষ। যেখানে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছিল ১৫ কোটি মানুষ। এমনও হয়েছে এক দিনে এক কোটি টিকা দিয়েছি। এখন দিনে টিকা যাচ্ছে গড়ে ২০০। প্রচারের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়নি। প্রচার করব কিভাবে?’
গতকাল সকাল ১১টায় রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কোথাও টিকা কর্মসূচির পোস্টার বা ব্যানার নেই। করোনা টিকা কোথায় দেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে হাসপাতালটির তিনজন স্টাফের দুজনই বলতে পারেননি। একজন জানান ষষ্ঠতলায় টিকাদান কেন্দ্র। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকর্মীরা টেবিলে সরঞ্জাম নিয়ে বসে আছেন। বাইরে একটি ছোট ব্যানারে লিখা আছে করোনার টিকা দেওয়া হয়। একজন নার্স জানান, মাঝেমধ্যে দুই-একজন আসছেন। অনেকেই জানেন না এখনে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে এই টিকাদান কেন্দ্রে তৃতীয় ডোজ ও চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু হয়। সরকারি ছুটি বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়। ১০ দিনে মোট ৪৮ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ছয়জন ৫ ফেব্রুয়ারি ছয়জন এবং গতকাল মঙ্গলবার ছয়জনকে তৃতীয় ও চতুর্থ টিকার ডোজ দেওয়া হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে একই চিত্র দেখা যায়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন পাঁচজন। টিকা নিতে আসা নাজিমউদ্দিন রোডের বাসিন্দা মাসুম হোসেন বলেন, ‘এখন তো ভিড় নাই, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। কোনো ঝামেলা ছাড়াই চতুর্থ ডোজ নিতে পেরেছি।’ ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৫ জানুয়ারি থেকে এখানে তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। গত ১৩ দিনে মোট ১১৩ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ১১ জন। দুপুর ১টায় রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় কেন্দ্র বন্ধ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আজ টিকা গ্রহীতা না থাকায় একটু আগে বন্ধ করে চলে গেছেন কর্মীরা।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কভিড-১৯-এর নতুন ধরন জেএন.১ সংক্রমণের হার অনেক বেশি। সে হিসেবে রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য কডিভ মৃত্যুর কারণ হতে পারে।’
মুশতাক হোসেন বলেন, যাঁরা হাসপাতালে কাজ করেন, যাঁদের বয়স ৬০-এর বেশি, কোমরবিড আছে তাঁদের মাস্ক পরা জরুরি। এ ছাড়া যত দ্রুত সম্ভব চতুর্থ ডোজের টিকা নিয়ে নেওয়া উচিত। কারণ, কভিডের টিকা নতুন এ ধরনেও কাজ করে।
ইপিআইয়ের দেওয়া তথ্য মতে, বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে এ পর্যন্ত করোনার টিকা এসেছে ৩৭ কোটি ৬১ লাখ ২৭ হাজার ৯১০ ডোজ। এর মধ্যে অনুদানে পাওয়া ১৮ কোটি ৬৯ লাখ ৩৪ হাজার ৭০ ডোজ, যা মোট ভ্যাকসিনের ৪৯.৬৯ শতাংশ। আন্তর্জাতিক উদ্যোগে গ্যাভিকোভেক্স ফ্যাসিলিটি থেকে অনুদান পেয়েছে ১৬ কোটি ৭৫ লাখ ৪৬ হাজার ৪১০ ডোজ। অন্যান্য এক কোটি ৯৩ লাখ ৮৭ হাজার ৬৬০ ডোজ। কোভ্যাক্সের সঙ্গে খরচ ভাগাভাগি করে আনা আট কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৪০ ডোজ, ক্রয়কৃত ভ্যাকসিন ৯ কোটি ২০ লাখ ছয় হাজার ভ্যাকসিন।
চতুর্থ ডোজের টিকা নেয়নি ৯৭ শতাংশ মানুষ: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য মতে, প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে ১৫ কোটি ৯ লাখ ২২ হাজার ৯০২ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৮৮.৬১ শতাংশ। অধিদপ্তরের হিসাব মতে, প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের ৯৬.৬৬ শতাংশ মানুষ চতুর্থ ডোজের টিকা নেয়নি। তৃতীয় ডোজের টিকা নেয়নি ৫৪.৫৮ শতাংশ মানুষ।