করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে উৎকণ্ঠা

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে উৎকণ্ঠা

বিশ্বের ৪১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন১। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ভারতসহ প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন দেশে নতুন করে এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত করোনা রোগী শনাক্ত বাড়ছে। এখন আলোচনা, উৎকণ্ঠার বিষয় হয়ে উঠেছে কতটা বিপদ ডেকে আনছে করোনার এ নতুন ভ্যারিয়েন্ট। এ বিষয়ে মতামত দিয়েছেন অণুজীব বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্যবিধি মানায় জোর দিতে হবে: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন১ সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের ৪১টি দেশে ছড়িয়েছে এ ভ্যারিয়েন্ট। দ্রুতগতিতে ছড়ানো এ ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত আক্রান্ত করলেও মৃত্যুহারের ভয়াবহতা নিয়ে তথ্য মেলেনি। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সবাইকে পুরনো অভ্যাস স্বাস্থ্যবিধি মানায় জোর দিতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। এখন অধিকাংশ মানুষের টিকা দেওয়া আছে। তাই ঝুঁকি অনেকটা কম। তবে যারা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা কিংবা রোগে ভুগছেন তাদের টিকা এবং স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। ভারতের কেরালায় এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তবে মৃত্যুহার নিয়ে এখনো শঙ্কার কথা জানা যায়নি।
উৎকণ্ঠা নয় সতর্কতা জরুরি: ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন১ সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতেও আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। তবে দ্রুত ছড়ালেও জটিলতা কম হচ্ছে। তাই উদ্বিগ্ন না হয়ে শারীরিক জটিলতা আছে কিংবা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব ছড়াচ্ছে করোনা। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত কয়েক দফা করোনার ঢেউ সামলেছে দেশ। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। এখনো যারা টিকা নেন নি, তারা অবশ্যই টিকা নেবেন। যারা দুই ডোজ নিয়েছেন তারা বুস্টার ডোজ টিকা নিন। করোনাকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ এবং মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাবে। এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।
খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে জেএন১ ভ্যারিয়েন্ট: অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল বলেছেন, করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন১ নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে জেএন১। এ বছরের আগস্টে লুক্সেমবার্গে প্রথম এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যেই বিশ্বের ৪১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার এ ভ্যারিয়েন্ট। যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ শতাংশ কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর শরীরে এ ভ্যারিয়েন্ট মিলেছে।
তিনি আরও বলেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য, ভারতেও এ ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার এ ধরনকে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। করোনার এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে খুব বেশি ঝুঁকি নেই বলে মনে হচ্ছে। কারণ এখন মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি বেড়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ করোনা টিকা পেয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক বেশি। টিকা নেওয়া এবং এক বা একাধিকবার আক্রান্ত হওয়া মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি কাজ করছে। কিন্তু যারা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছে, আর্থ্রাইটিস কিংবা শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত এমন রোগীদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে করোনার জেএন১ ভ্যারিয়েন্ট।
ড. বিজন কুমার শীল বলেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়ানোর এক বছর আগে ওমিক্রনের প্রকোপ ছিল। এই এক বছরের মধ্যে করোনার খবর ছিল না। নতুন করে আবার মাথা চাড়া দিয়েছে। কারণ শ্বাস ও পরিপাকতন্ত্রে করোনাভাইরাসের লোকাল প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই নেই। এরই সুযোগ নিয়েছে জেএন১ ভাইরাসটি। সে জন্য দ্রুত বংশবিস্তারের মাধ্যমে সে পড়িয়ে পড়ছে। ওমিক্রন এসে বিপজ্জনক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে সরিয়েছে। টিকা দেওয়া থাকলে কিংবা আগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে শরীরে করোনার জীবাণু প্রবেশের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। জেএন১ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে হালকা জ্বর আসে, শুষ্ক কাশি থাকে, স্বাদ, গন্ধ চলে যায়। অনেক রোগীর রক্তচাপ কমে যেতে পারে, ঘুমের সমস্যা হতে পারে, হাত, পা ব্যথা করবে, ক্লান্তি লাগতে পারে। আক্রান্ত হলে মাস্ক পরতে হবে, আইসোলেশনে থাকতে হবে। যারা শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন, তারা অবশ্যই ভ্যাকসিন নেবেন। ভাইরাস আক্রান্ত হলে এই সুযোগে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ঢুকে অনেক সময় সেকেন্ডারি ইনফেকশন ঘটায়। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *