অলী-আল্লাহ্’র শিক্ষার মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে হয় – ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা

অলী-আল্লাহ্’র শিক্ষার মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে হয় – ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা

বিশেষ সংবাদদাতা : পৃথিবীতে অন্যতম কঠিন কাজ হচ্ছে আত্মাকে শুদ্ধ করা। অশুদ্ধ আত্মার কারণে মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হয়। অশুদ্ধ আত্মার প্রভাবে মানুষ (বিভিন্ন অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, জেনা) যে কোনো পাপ কাজে লিপ্ত হয়। মায়ের গর্ভ থেকে একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন সে নিষ্পাপ থাকে। কিন্তু শিশুটি যখন দিনে দিনে বড় হতে থাকে সমাজব্যবস্থা, পাপাচার, মিথ্যাচার ঐ শিশু আস্তে আস্তে বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে, দেখতে দেখতে সে এই পাপে আচ্ছন্ন হয়ে পরে। এভাবে এক সময় এটি তার স্বভাবে পরিণত হয়ে যায়। যেমন, ছোট শিশু মিথ্যা কথা বলে না, সত্য কথা বলে। কিছু দিন যাওয়ার পরে দেখবেন ঐ ছোট্ট শিশুকে যখন জিজ্ঞেস করবেন, “এই কাজ তুমি করেছো?” সে করেছে কিন্তু সে তখন বলবে, “না আমি করিনি৷” সে বাঁচার জন্যে অথবা সে এই কাজ অস্বীকার করার জন্য ছোট্ট শিশুই বলছে, “না আমি এই কাজ করিনি।” তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, “তাহলে কে করেছে?” সে অন্যজনের নাম বলে দিবে৷ এরপরে আস্তে আস্তে দেখবেন আজ এই নিয়ে বলছে, কাল অন্য কিছু নিয়ে বলছে, পরশুদিন অন্য কিছু নিয়ে বলছে। এইভাবে করে শিশু বা কোনো মানুষ প্রথম পাপ শুরু করে মিথ্যা দিয়ে। আস্তে আস্তে এই মিথ্যা থেকে অন্যান্য পাপগুলোর জন্ম নিতে থাকে। সেই মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে আরও একটি মিথ্যা বলতে হয় অথবা সেই মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে অন্য পাপ করতে হয়।


মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর গত ২০ অক্টোবর বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে সাপ্তাহিক আশেকে রাসুল (সা.) মাহ্ফিলে আশেকে রাসুলদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, এ রকমভাবে পাপ আমাদের আস্তে আস্তে আচ্ছন্ন করে দেয়। প্রথমে আমরা মিথ্যা দিয়ে শুরু করি তারপরে আমরা একে একে অন্যান্য পাপে জড়িয়ে যায়। সেই পাপে জড়াতে জড়াতে একসময় সেটি আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। এগুলো আমাদের স্বভাবে পরিণত হয়, এই পাপগুলো হয় ৬টি রিপুর দ্বারা। যথা- কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ ও মাৎসর্য। এই ৬টি রিপু প্রত্যেক মানুষের মাঝে আছে। এই রিপুর প্রভাবে আমরা মূলত পাপ কাজগুলো করে থাকি। মানবদেহের এই রিপুগুলো যখন আস্তে আস্তে শক্তিশালী হয়, তার মধ্যে আল্লাহময় শক্তি দুর্বল হয়ে যায়। আর রিপুগুলো যখন দ্র্বুল থাকে, তখন তার মধ্যে আল্লাহময় প্রভাব শক্তিশালী থাকে। ছোটবেলা থেকে এখন আমাদের যাদের বয়স ৩০ বছর, প্রথম ৪ বা ৫ বছরও যদি বাদ দেই দেখা যাবে ২৫ বছরে আমরা পাপ করেছি। পাপ করতে করতে অন্তর কলুষিত এবং অন্ধকার হয়ে যায়। আমাদের ক্বালবের ভিতরে যখন অন্ধকার হয়ে যায়, একে আমরা তখন আর পরিশুদ্ধ করতে পারি না। এটি অপরিশুদ্ধ অন্তর। তখন মোর্শেদে কামেলের কাছে গেলে মোর্শেদে কামেল তার ক্বালবে আল্লাহ্ নামের জ্বিকির চালু করে দেয়। আল্লাহ্ নামের জ্বিকির চালু হওয়ার সাথে সাথে অন্ধকারাচ্ছন্ন ক্বালব পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। কারণ ঐখানে আল্লাহ্ নামের জ্বিকির হতে থাকে৷ এইবার মোর্শেদের কাছ থেকে আল্লাহ্ প্রদত্ত ফায়েজ হাসিল করতে হয়। আমরা জানি দিনে ৫ বার আল্লাহ্ প্রদত্ত ফায়েজ আসে। মোরাকাবার মাধ্যমে আল্লাহ্ প্রদত্ত ঐ ফায়েজ মোর্শেদের মাধ্যমে আমাদের হাসিল করতে হয়। ঐ ফায়েজ যখন আমাদের সীনায় পড়ে, তখন যতটুকু অংশে ফায়েজ পড়ে, ঠিক ততটুকু অংশের পাপ মুছে যায়। সাধনা করতে করতে যখন আস্তে আস্তে পুরো পাপ মুছে যাবে, তখন অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায়। তখন সে চাইলে তার অন্তরের মধ্যে হযরত রাসূল (সা.)-এর দিদার পাবে৷ তিনি অন্তরের মধ্যে আল্লাহ্কে দেখতে পাবে এবং তার কাশফ খুলে যাবে।


তিনি বলেন, এটি হচ্ছে তাসাউফের বিদ্যা। অলী-আল্লাহর কাছে না গেলে আত্মাকে শুদ্ধ করা যায় না। কোনো কিতাব, আত্মাকে শুদ্ধ করতে পারে না। অলী-আল্লাহর কাছে গেলে, তাঁর বাতানো পথে চললে, তিনিই আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দিতে পারেন। এক একজনের জন্য এক এক রকম শিক্ষা। সবার জন্য এক রকম হয় না। মোরাকাবার মাধ্যমে ফায়েজ হাসিল করে, ঐ ফায়েজ নিজের সীনায় ফেলে পাপমোচন করার বিদ্যা শিখতে হবে। যিনি সাধনা করে নিজের ভিতরের কালিমা দূর করতে পারবেন, তার অন্তর তত তাড়াতাড়ি পরিষ্কার হবে। সেই অন্তরে তখন তিনি আপন মোর্শেদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন, তিনি রাসূল (সা.)-কে দেখতে পারবেন, আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং তার ভয় থাকবে না কবরে, ভয় থাকবে না হাশরে, তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হবেন। আল্লাহ্ যদি তার পাপ আগেই মাফ করে দেন তাহলে তো আর তাঁর অসন্তুষ্টি থাকার কোনো কারণ নেই। আল্লাহ্ তো সন্তুষ্ট হয়েই মাফ করবেন। আমরা যদি তওবা পড়ি, আল্লাহর কাছে রোনাজারি করি তাহলে আল্লাহ দয়া করে আমাকে মাফ করে দিবেন। এই বিদ্যাই অলী-আল্লাহগণ যুগে যুগে মানুষকে শিক্ষা দিচ্ছেন, কীভাবে মানুষ নিজে পাপ থেকে সরে আসতে পারে এবং নিজের কলুষিত অন্তরকে আলোকিত করতে পারে?


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, এখন বিষয় হচ্ছে, আমরা সবাই নিজের কলুষিত অন্তরকে আলোকিত করতে পারবো কি-না? যদি কলুষিত অন্তরকে আলো করার মাঝামাঝি সময়ে আমার মৃত্যু হয়, তখন কি হবে? আমি আগেও বলেছি, এখনও বলি, আমি যেই মালিকের গোলামী করি, ঐ মালিককে আমি অনেক দয়াশীল এবং অনেক দয়ালু পেয়েছি। আমি বলি, আমি সেই মালিকের গোলামী করি, যে মালিক আমাদেরকে ক্ষমা করতে পারেন; আমি সেই মালিকের গোলামী করি, যে মালিক আমাদেরকে মাফ করতে পারেন; আমি সেই মালিকের গোলামী করি, যে মালিক আমাদের ক্ষমা চাওয়া মাত্র তিনি ক্ষমা করতে চান। শুধু চাওয়ার মতো চাইতে হবে, ডাকার মতো ডাকতে হবে। যদি এমন হয় যে, আমি আমার রোনাজারি চালিয়ে যাচ্ছি; আমি সংশোধনের পথে হাঁটছি; সংশোধিত হওয়ার চেষ্টা করছি, আল্লাহ্ না করুন, তার পূর্বে আমার সময় চলে আসলো। আমার মালিক চাইলে আমাকে মাফ করতে পারেন। বনী ইসরাইলের একজন লোক ১০০টি খুন করার পরে, তিনি আল্লাহর পথে পৌঁছতে পারেননি পথিমধ্যে মারা যান। ঐ পথে হাঁটার কারণে আল্লাহ্ দয়া করে ঐ লোকটিকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। আর আপনি-আমি তো অলীদের বাদশাহ্ আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগী (রহ.)-কে পেয়েছি। অতঃপর মোর্শেদের ওফাত পরবর্তীতে আপনারা আমি গোলামকে পেয়েছেন। তারপরেও আপনি যদি সংশোধিত হওয়ার চেষ্টা করেন, বলুন আল্লাহ্ কি আপনাকে মাফ করতে পারেন, না পারেন না? তাহলে নিজেদের সংশোধিত হওয়া অতীব জরুরি। নিজেরা যদি সংশোধিত না হই, পরিবর্তিত না হই, তাহলে আপনি-আমি যতই চেষ্টা করি না কেন, যতই বড় অলী-আল্লাহর কাছে যাই না কেন, যতই ধর্মের কথা বলি না কেন, নিজের শয়তানি থেকে যদি নিজে দূরে না সরে আসি, তাহলে অলী-আল্লাহ্ তো আপনাকে মুক্তি দিতে পারবেন না। অলী-আল্লাহর কাজ আপনাকে পথ দেখানো।


তিনি বলেন, অলী-আল্লাহগণ যুগে যুগে আসেন মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে আনার জন্য। রাস্তা দেখান যে, বাবা! তুমি যদি এই পথে চলো তুমি আল্লাহ্কে পাবে। কিন্তু ঐ পথে তো আপনার চলতে হবে। আপনার ২টি পা দিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ঐ পথে এগিয়ে আসতে হবে। আপনি আগান। আল্লাহ্ বলেন, আমার বান্দা আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসলে, আমি তার দিকে ১০ পা এগিয়ে আসি। আলাহ্ বলেছেন, “আপনি যদি তাঁর দিকে এক পা আগান আল্লাহ আপনার দিকে ১০ পা আগাবেন।” আর ঐ পথে আগানোর রাস্তা নবুয়তের যুগে দেখিয়েছেন নবী-রাসূলগণ এবং বেলায়েতের যুগে দেখাচ্ছেন অলী-আল্লাহগণ। আপনি এক পা আগালে আল্লাহ্ আপনার দিকে ১০ পা আগাবেন। আল্লাহ্ বলছেন কিন্তু একটি পা আপনাকে দিতে হবে। এই পদচারণা আপনার শুরু করতে হবে। আমরা শুধু পথ দেখাতে পারি। এর চেয়ে বেশি কিছু করার ক্ষমতা তো আমাদের নেই।
তাই সাধনা জীবনে আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। যিনি তার আত্মাকে পরিশুদ্ধিত করতে পারবেন না, তিনি হয়তো মুখে মুখে আল্লাহ্কে ডাকবেন, কিন্তু তিনি তার অন্তরকে পবিত্র করতে পারবেন না। আপনি আপনার ভিতরে পাপ করতে করতে ৩০ বছর /৪০ বছর/৫০ বছর এই পাপকে নিজের মধ্যে জমাচ্ছেন৷ একে পরিষ্কার করুন। যে স্ত্রী স্বামীর জন্য জীবন দিয়ে ফেললেন, আর যেই স্বামী স্ত্রীর জন্য জীবন দিয়ে ফেললেন, ৬ মাস গোসল না করলে আপনারা একে অপরকে জায়গা দিবেন না, সেখানে আল্লাহ্ কি আপনার সীনায় থাকতে পারেন? ২ বছর বাড়ী-ঘর পরিষ্কার করেন না, আপনি আমাকে দাওয়াত দিলে আমি কি এই নোংরা জায়গায় যাবো? কোনো মেহমানকে দাওয়াত করলে কি, সে যাবে? একজন মেহমান আমাদের বাসায় আসলে সকাল থেকে সবার দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায় বাসা পরিষ্কার করা, গোছানো, খাবার আয়োজন করা। সবকিছু আমরা করি, মেহমান যাতে একটু ভালোভাবে আসতে পারে। নিজের সীনায় মালিককে আনতে চান অথচ সীনা যদি পরিষ্কার না করেন, সীনাকে ধুঁয়ে-মুছে যদি সাফ না করেন, মালিক কি আসবেন? মালিককে আসতে বললেই হবে না, তাঁর আসার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে? যদি পরিবেশ তৈরি করে দিতে হয়, তাহলে সেই জন্যও আপনার নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। যখন আমরা সেটি করবো অর্থাৎ ধুঁয়ে মুছে পরিষ্কার করবো, এরকম সাদা বোর্ডের মতো হবে তখন মালিক বলবেন, “হ্যাঁ, এখন পরিষ্কার আছে, এখন আমি তোমার কাছে আসতে পারি।” আর যদি সেটি না করে যতই পরিষ্কারের গল্প করেন, আসলে সীনা পরিষ্কার হবে না। মনে করুন আমি পাপাচারে লিপ্ত আছি কিন্তু আমি গল্প করি, বুজুর্গ/ফেরেস্তার। আমি গল্প করি, সৎ মানুষের। এ রকম বহু মানুষ আছি আমরা, যারা নিজে পাপ থেকে মুক্ত হতে পারিনি কিন্তু আমার মুখে সততার গল্প সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে। যারা এই ধরনের কাজে লিপ্ত অর্থাৎ অপরের কাছে নিজেকে পরিশুদ্ধ প্রমাণিত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু নিজে পাপ থেকে মুক্ত হননি, এটিও পাপ এবং এই পাপ থেকেও আমাদের রক্ষা পেতে হবে।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, যুগে যুগে নবী-রাসূল অলী-আল্লাহগণ আসেন আমাদের চরিত্রবান বানিয়ে নিজের মাঝে মালিকের সন্ধান খুঁজে পাওয়ার জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা আসি অর্থাৎ জন্ম নেই এবং মৃত্যু বরণ করি কিন্তু আমরা দুনিয়ার মায়া-মমতা, মোহে ভুলে যাই যে আমরা কেন জগতে এসেছি। আবার আমরা যদি নিজেদের পরিবর্তিত করার চেষ্টা করি এবং নিজেদের পরিবর্তিত করি, তাহলে দেখা যাবে, আল্লাহ্ যদি সুযোগ দেন, আল্লাহ্ যদি চায় আমাদের তিনি ক্ষমা করতে পারেন, আমাদের দয়া করতে পারেন এবং আমরা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।


তিনি বলেন, তরিকতের সাাধনায় দিল জিন্দার গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ আত্মশুদ্ধিরও মৌলিক প্রথম রাস্তা হচ্ছে ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির জারি করা। নিজের অন্তরে যদি আল্লাহর জ্বিকির হতে থাকে, শুধু এই জ্বিকির হওয়ার কারণেও অনেকগুলো পাপ ক্ষমা হতে পারে। আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে যে, আল্লাহর জ্বিকির করার জন্য দেখুন আমাদের মসজিদ, মাদ্রাসা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হালকায়ে জ্বিকির হয় (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্)। রাতের বেলা হেঁটে যাওয়ার সময় আমি অনেক মসজিদে দেখেছি যে, আল্লাহ্ নামের জ্বিকির করছেন। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, ভালো। খুব সুন্দর। মধুর কন্ঠে আল্লাহ্ নামের জ্বিকির করেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সব সময় আল্লাহ্ নামের জ্বিকির মুখে করতে পারলেও অন্তরে যদি না থাকে, যদি মৃত্যুর সময় ঐ আল্লাহ্ নামের জ্বিকিরের কথা মনে না থাকে! আমাদের অনেক ভাই আছেন যারা মারা যান অবচেতন অবস্থায়; যারা মারা যান অজ্ঞান অবস্থায়; যারা মারা যান কোমা অবস্থায়; যারা মারা যান এক্সিডেন্ট-এ। একটি সেকেন্ডের মধ্যে তার ঘটনা ঘটে যায়, তখন তো আল্লাহ্ নামের জ্বিকির মনে রাখার মতো সুযোগ থাকে না। আল্লাহ্ নামের জ্বিকির মুখে বলার মতো সুযোগ থাকে না। যেই কারণে যুগে যুগে অলী-আল্লাহগণ চেষ্টা করেছেন, মানুষকে আল্লাহ্ নামের জ্বিকির মুখের পাশাপাশি সীনার মধ্যে চালু করতে। মুখ বন্ধ হতে পারে, ক্বালবের জ্বিকির বন্ধ হয় না। ক্বালবের স্পন্দনের সাথে (আল্লাহ্ আল্লাহ্) জ্বিকির যদি আমরা করতে পারি, স্পন্দনে যদি একবার আল্লাহ্ নামের জ্বিকিরকে আমরা অনুধাবন করতে পারি, এটি বন্ধ হবে না।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, যারা মারা যায়, অনেক সময় হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। আত্মীয়স্বজন, ভাইবোনকে চিনতে পারে না, এই সময়ে মারা যায়। তখন তো আল্লাহর কথাও তার মনে থাকবে না স্বাভাবিক। কিন্তু মুখ, ব্রেইন এক সাথে কাজ করে, সীনা তো একসাথে কাজ করে না। সীনার মুখে যদি আল্লাহ্ নামের জ্বিকির (আল্লাহ, আল্লাহ) স্পন্দন অনুধাবন করা যায়, তাহলে এই জ্বিকির কখনো হারিয়ে যায় না। এই জ্বিকির হারায় যদি তার কর্মের দ্বারা সে আল্লাহর অসন্তুষ্টি অর্জন করে, পাপ কাজে লিপ্ত হয়। যদি সে পাপ না করে, অন্যায় না করে এবং স্বাভাবিক জীবনে থেকে তরিকতের আমলগুলো সঠিকভাবে করে, জ্বিকির তার বন্ধ হবে না, তার জ্বিকির চলবে। ক্বালবের বা হৃদয়ের স্পন্দনের সাথে যদি আল্লাহ্ নামের জ্বিকিরকে অনুধাবন করা যায় এবং সীনার জ্বিকির ঘুমানো অবস্থায় থাকে, চলন্ত অবস্থায় থাকে, গাড়িতে থাকা অবস্থায় থাকে, হাঁটা অবস্থায় থাকে, মিটিং করার অবস্থায় থাকে কিন্তু একজন ব্যক্তি মুখে আল্লাহ্ নামের জ্বিকির করলে দিনে সর্বোচ্চ ২ ঘন্টার বেশি করতে পারবে না। ২ ঘন্টা জ্বিকির করা কিন্তু অনেক কঠিন। মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্/আল্লাহ্;আল্লাহ্ ২ ঘন্টা করা কি সহজ? অনেক কঠিন, গলা ছিড়ে যাবে। কিন্তু যদি স্পন্দনে স্পন্দনে মালিকের নাম স্মরণ করা যায় (আল্লাহ্ আল্লাহ্)। ২৪ ঘন্টা স্পন্দনে জ্বিকির চলবে। এর জন্যে ওযু শর্ত না, এর জন্যে দেহ পবিত্র শর্ত না। আল্লাহ্ নামের জ্বিকির স্পন্দন আমার হৃদয়ে যদি আমি করতে পারি, এর মূল্য বেশি। ক্বালবে জ্বিকিরের মূল্য অনেক বেশি। যদি এর মূল্য বেশি হয়, তাহলে যেটির মূল্য বেশি সেটিই চাইবেন। এজন্যে যুগে যুগে অলী-আল্লাহগণ মানুষকে অন্তরের জ্বিকিরের শিক্ষা দিয়েছেন।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, অন্তরের জ্বিকির যদি একবার চালু করতে পারেন, ঐ সীনার মধ্যে আল্লাহ্ নামের জ্বিকির হতে থাকে। সীনা কখনো ধোঁকা দেয় না, জবান ধোঁকা দেয়। আমাদের জবান আমাদের একে অপরকে ধোঁকা দেয় কিন্তু আমাদের সীনা আমাদের ধোঁকা দিতে পারে না। তাই আমরা যদি ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির জারি করতে পারি, এটিই তরিকতের ভাষায় আমার মোর্শেদ কেবলাজানের শিক্ষায় তিনি বলতেন, ‘দিলজিন্দা’। যেই দিলে আল্লাহ্ নেই, সেই দিল তো মরা। দিলে যদি আল্লাহ্ নামের স্পন্দন তৈরি করা যায়, সেই দিল তো আর মরা থাকে না, সেই দিল জীবিত হয়ে যায়। ঐ জীবিত দিলের কথা বলা হয়েছে। ‘দিল জিন্দা’, দিলকে জীবিতকরন। আল্লাহ্ নামের জ্বিকির স্পন্দন, এটিই দিল জিন্দা। যদি এটি করতে পারেন আপনি অর্ধেক পরীক্ষায় পাশ করে গেলেন। আর বাকি অর্ধেক এবার কর্ম দিয়ে করবেন। আত্মাকে শুদ্ধ করে করবেন। অর্ধেক পাশ হয়ে গেলেন দিল জিন্দায়, আর বাকি অর্ধেক করতে হবে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে। পরিশুদ্ধতার জন্যে অনেক লম্বা পদ্ধতি। আমি তো বলতেই এসেছি। আমি না বললে আপনারা শিখতে পারবেন না। তাই আমিও পরিশুদ্ধতার কথা বলতে চাই।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, সহজভাবে পরিশুদ্ধতার উপায় এক কথায় যদি বলি, মোরাকাবার মাধ্যমে ফায়েজ খেয়াল করে নিজের সীনায় যদি ঐ ফায়েজ অনুধাবন করা যায় এবং ঐ ফায়েজ সীনার মধ্যে পরলে সীনার ময়লাগুলো দূর হতে থাকবে এবং নিজের আত্মা পরিশুদ্ধ হতে থাকবে। মোরাকাবায় বসবেন। ফায়েজ খেয়াল করবেন। এই ফায়েজ আল্লাহর তরফ থেকে আল্লাহ্ তা’য়ালার জাত পাক হয়ে, হযরত রাসূল (সা.)-এর দিল মোবারক হয়ে, আপন মোর্শেদের দিল হয়ে আপনার ক্বালবে এসে পরবে। সীনা পরিষ্কার হবে। সীনার ময়লাগুলো আস্তে আস্তে দূর হতে থাকবে। খেয়াল করবেন সীনার ময়লাগুলো দূর হচ্ছে কি-না? পাশাপাশি যেই রিপুগুলো আছে, রিপু দমনের জন্য অন্য পদ্ধতি। সেই রিপুগুলোর কথা চিন্তা করে ভাবতে হবে যে, সেই রিপুগুলোর উপরে ফায়েজ পরছে এবং রিপুগুলো আস্তে আস্তে দমন হচ্ছে। এই জন্যে প্রথমে ধরতে হয় তরিকতের ইমামকে। ইমামকে নিয়ে আগে প্রাকটিস করতে হয়। তারপরে ধরবেন মোর্শেদকে। মোর্শেদকে নিয়ে প্রাকটিস করতে হয়। তারপরে রাসূল (সা.)-কে এবং এক সময় দেখবেন আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে হতে আল্লাহ্ চলে এসেছেন।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, এই সাধনার বিদ্যা কোনো কিতাব থেকে আসেনি, সীনা থেকে এসেছে৷ সীনার কথা এখন অনেক কিতাবে লেখা হচ্ছে, কিন্তু এই বিদ্যা যিনি শিক্ষা অর্জন করেছেন কিতাব পড়ে নয় সাধনার মাধ্যমে। তিনি সীনা থেকে অর্জন করেছেন এই বিদ্যা। তাই সকল আশেকে রাসূল ভাই ও বোনদের প্রতি অনুরোধ করি, আমরা নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধিত করি এবং নিজের দিলের মাঝে আল্লাহ্ নামের জ্বিকির স্থাপন করি। তাহলে আমরা অর্ধেক না আমরা পূর্ণ জীবন সুস্থতা লাভ করবো। পরবর্তীতে করণীয় হল, একজন আশেকে রাসূলের আত্মাকে পরিশুদ্ধিত করতে হবে এবং তার আল্লাহ্ নামের জ্বিকির জারি থাকতে হবে। এই মূল দুটি শিক্ষা আমাদের লাগবেই। আমি আশেকে রাসূল বলি, আশেকে রাসূলের ক্বালবে আল্লাহ্ নামের জ্বিকির থাকতে হবে এবং তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে অথবা করার প্রক্রিয়ায় থাকতে হবে। আল্লাহ্ যদি সুযোগ দেন, আল্লাহ্ যদি দয়া করেন আমরা নিজেকে পরিবর্তিত করতে পারবো। পাশাপাশি আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবো। তাই, আপনাদের সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাই- চলুন, আমরা পরিবর্তিত হই। চলুন আমরা নিজেকে আলোকিত করি। চলুন আমরা নিজে আলোকিত হই, অন্যকে আলোকিত করি এবং সমাজকে আলোকিত করি।


পরিশেষে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর বাণী মোবারক প্রদান শেষে আখেরি মোনাজাত প্রদান করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *