সকল ক্ষেত্রেই প্রয়োজন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা

সকল ক্ষেত্রেই প্রয়োজন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা

অবকাঠামো কেবল তৈরি করিলেই হয় না। যাহাদের জন্য কিংবা যেই উদ্দেশ্যে অবকাঠামোটি নির্মাণ করা হইয়াছে, তাহা যদি দিনের পর দিন ধরিয়া সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের কোনো কাজে না লাগে, তাহা হইলে অবকাঠামোটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়, অপচয় হয় রাষ্ট্রীয় অর্থের। দেখা যায় অনেক অবকাঠমো নির্মাণ হইয়া পড়িয়া আছে, কিন্তু নানাবিধ দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সেই সকল নূতন অবকাঠামো নির্মাণের বৎসর পার হইবার পরও চালু হয় নাই। বহুদিন ধরিয়া এই সমস্যা বিদ্যমান। এই ধরনের ঘটনা সবচাইতে বেশি দেখা যায় সেতু নির্মাণের পর সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হইবার ক্ষেত্রে। কিছুদিন পর পরই সংবাদপত্রে এই ধরনের সচিত্র সংবাদ প্রকাশ হইতে দেখা যায়, যেখানে ছবিতে দেখা যায় নিঃসঙ্গ শেরপার মতো একটি সেতু একাকী দাঁড়াইয়া রহিয়াছে।
এই সকল সেতুতে কোথাও উঠিতে লাগে মই, কোথাও লাগে নৌকা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ বাংলাবাজার-নরসিংপুর সড়কের ঘিলাতলী সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হইলেও সেতুর দুই পাশে অ্যাপ্রোচ সড়ক নাই। সাতক্ষীরা সদরের বালুইগাছা এলাকার বাঁশগাদা খালের উপর নির্মাণ করা সেতুর চারিপার্শ্বে অথই পানি। অস্তিত্ব নেই দুই পার্শ্বের সংযোগ সড়কের। সেতুটি পার হইতে চাহিলে ব্যবহার করিতে হয় নৌকা কিংবা সাঁতরাইয়া গিয়া তাহার পর সেতু পার হইতে হয়। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কায়েরচক এলাকায় হাকালুকি হাওরে তিন বৎসর পূর্বে নির্মাণ করা সেতুটির কোনো সংযোগ সড়ক নাই। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নে কালীগঙ্গা নদীর উপর নির্মিত সেতুটিতে দুই পার্শ্বে বাঁশের সাঁকো দিয়া উঠানামা করিতে হয়। বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নামেশিপাড়া গ্রামের নিদ্রা খালের উপর প্রায় বৎসরখানিক পূর্বে সেতু নির্মাণ করা হইলেও দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নাই। নিরুপায় হইয়া কাঠের মই বাহিয়া সেতু পার হইতেছেন এলাকাবাসী। ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলায় পোনা নদীর উপর দৃষ্টিনন্দন সেতুটিতে চার বৎসরেও নির্মাণ করা হয় নাই সংযোগ সড়ক।
উপরিউক্ত উদাহরণগুলি গত এক মাসের। এই ধরনের অসংখ্য সংবাদ প্রতি মাসেই বৎসরের পর বৎসর ধরিয়া পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হইয়া আসিতেছে। সেতু নির্মাণ করা হয় মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য। অথচ সংযোগ সড়কের অভাবে মানুষ উলটা ভোগান্তিতে পড়িতেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই রকম সংযোগ সড়কবিহীন সেতু বত্সরের পর বত্সর ধরিয়া অব্যবহূত থাকিয়া নষ্ট ও পরিত্যক্ত হইতেছে। এমনও দেখা গিয়াছে, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের মধ্যে অথবা লোকালয়বিহীন বিরান ভূমিতে, যেইখানে কৃষক ও কৃষিশ্রমিকেরা মাঠে যাওয়া-আসা করেন জমির আইল দিয়া, সেইখানে নির্মাণ করা হইয়াছে সেতু। জনগণের করের অর্থের এমন অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। কিন্তু কেন এমন হয়?
ইহার জন্য সহজ কথা বলা যায় সমন্বয়হীনতা দায়ী। সেতু ও সংশ্লিষ্ট সড়কের অনেক প্রকাশ, ধরন রহিয়াছে। একটি সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ যখন এবং যেইখান হইতে আসে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সংযোগ সড়কের বরাদ্দের বিভাগ ও খাত আলাদা। সেতুটি নির্মিত হইলেও সড়কটি কোন বিভাগের মধ্যে পড়িয়াছে, তাহারা কবে সংযোগ সড়ক করিবে, এই সংক্রান্ত সমন্বয়হীনতা তৈরি হইলেই এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এখন একটি সেতু তাহার অ্যাপ্রোচ রোড ব্যতীত মূল্যহীন, ইহা সকলেই জানেন। যখন সেতু নির্মাণের ব্যাপার ঘটে, তখন সংযোগ সড়কটি নির্মাণের জন্যও যুগপত্ পরিকল্পনা থাকিবার কথা। সুতরাং এই ধরনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সহিত যুক্ত স্ব-স্ব বিভাগের কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিতার আওতায় আনিতে হইবে। জনগণের করের অর্থের যাহাতে অপচয় না হয়, সেই জন্য পরিকল্পনা হইতে শুরু করিয়া সকল ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করিতে হইবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *