স্বাস্থ্য ডেস্ক: প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১৩ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। একই সময়ে ৮ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে মারা যান। বাংলাদেশে সার্বিকভাবে ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিত্সাব্যবস্থা অপ্রতুল। শহরকেন্দ্রিক, বিশেষ করে বিভাগীয় শহরকেন্দ্রিক কার্যক্রম থাকলেও উন্নত চিকিৎসার বেশিরভাগ রাজধানীকেন্দ্রিক। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় হলে ১০০ শতাংশ স্তন ক্যানসার ভালো হয়। কিন্তু বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে। ফলে রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হয় না। দেশে ক্যানসার প্রতিরোধ, প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় ও ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের কোনো জাতীয় কর্মকৌশল, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি নাই। তাই প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ঠেকাতে ক্যানসার প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ক্যানসার সচেতনতা মাস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গত রোববার বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম এর আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সমন্বয়কারী এবং জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যানসার ইপিডেমিওলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার। আরও বক্তব্য রাখেন বারডেমের সাবেক পরিচালক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ডা. হালিদা হানুম আক্তার, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. আবু জামিল ফয়সাল, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকার মশিউদ্দিন শাকের প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে সরকারের সহযোগিতায় ক্যানসার চিকিৎসা চালু থাকলেও তা অসংগঠিত ও অসম্পূর্ণ। অবিলম্বে স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যানসারের জন্য সমাজভিত্তিক, সংগঠিত ও সমন্বিত জাতীয় স্ক্রিনিং কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। সরকারের বড় উদ্যোগ আটটি বিভাগীয় শহরে সমন্বিত ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প তিন বছরের মধ্যে হওয়ার কথা থাকলেও পাঁচ বছর পরেও কাজে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।
অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। ক্যানসারের কোনো উত্তর নেই, এটি ভুল প্রমাণিত। বিজ্ঞানীরা এর অনেক উত্তর বের করেছেন। এখন এই উত্তরের সুফল আমাদের সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বলেন, যারা ক্যানসারের ঝুঁকিতে আছেন, তারা নিয়মিত স্ক্রিনিং করার মাধ্যমে ৯০ শতাংশই সুস্থ থাকতে পারেন।
ডা. হালিদা হানুম আক্তার বলেন, নারীদের মূল্য সামাজিক অবস্থানে অনেক নিচে। বছরে ১৫ হাজার নারী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। পুরুষের দায়িত্ব তার পরিবারের নারীর স্বাস্থ্য বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রতিরোধযোগ্য ক্যানসারবিষয়ক প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, উন্নয়ন বলতে আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন বুঝি। কিন্তু মানুষকে সঠিক জ্ঞান দেওয়া উন্নয়নের অন্যতম দিক। অজ্ঞতার জন্য আমরা অনেক রোগাক্রান্ত হই। সুস্থতার জন্য ভালো খাবারের সঙ্গে সঙ্গে আরও কী করা উচিত, তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। তাই বিষয়গুলো পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। মশিউদ্দিন শাকের বলেন, চারদিকে ভেজাল খাদ্য আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। তাই খাবার গ্রহণের বিষয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফোরামের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস উপলক্ষে মাসব্যাপী ৬৪ জেলায় নানা কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে লিফলেট বিতরণ, শোভাযাত্রা, বিনা মূল্যে ক্যানসার স্ক্রিনিং ও অর্ধেক মূল্যে এসংক্রান্ত পরীক্ষা করানো চলবে মাসব্যাপী। ঢাকায় সেবার জন্য নিবন্ধন করতে ০১৭৮৯৪৪৪৭৬৭ ও ০১৯৭৭৫৯১৯০৭ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
উল্লেখ্য, প্রায় ৩০টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য এবং নারী সংগঠনের মোর্চা ‘বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম’। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ‘সবাই মিলে একসঙ্গে স্তন ক্যানসার সচেতনতায় কাজ করার লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছিল এই মোর্চা।