দেওয়ানবাগ ডেস্ক: জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে থাকায় বিশ্ব ক্রমে অস্থির হয়ে উঠেছে। ফলে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে হচ্ছে। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বৈশ্বিক ব্যবস্থা এমন এক সময়ে ‘পশ্চাৎপদ অবস্থান’ নিয়েছে, যখন শক্তিশালী, আধুনিক ও বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আগের চেয়ে বেশি প্রয়োজন রয়েছে।
গুতেরেস বলেন, ‘যদি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বকে তার মতো করে প্রতিনিধিত্ব না করে, তাহলে আমরা কার্যকরভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারি না। সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে, প্রতিষ্ঠানগুলো সমস্যার অংশ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।’ জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি; উত্তর ও দক্ষিণ এবং পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বিভক্তি গভীরতর হচ্ছে।
গুতেরেস বলেন, অর্থনৈতিক ও আর্থিক ব্যবস্থা আর বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি বিভক্তির দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব। প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিভক্ত কৌশল একক ও উন্মুক্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে হুমকিতে ফেলছে এবং নিরাপত্তাকাঠামোয় সম্ভাব্য সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করছে।
‘অকার্যকর, সেকেলে ও অন্যায্য আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামোর’ বড় ধরনের সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এর মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য বার্ষিক ৫০ হাজার কোটি ডলারের উদ্ধার প্যাকেজ গ্রহণ।
জলবায়ু–সংকট মোকাবিলায় গুতেরেস একটি জলবায়ু সংহতি চুক্তির দাবি জানিয়েছেন। এই চুক্তির অধীন কার্বন নির্গমন কমাতে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলো অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এ কাজে ধনী দেশগুলো বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেবে। তিনি বলেন, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের বৈশ্বিক সক্ষমতার ৬০ শতাংশই রয়েছে আফ্রিকায়। কিন্তু সেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ মাত্র ২ শতাংশ।
রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়টি উল্লেখ করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘শয়তানকে কখনো বিশ্ব করতে নেই।’ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া আবেগঘন ভাষণে ‘বিশ্বকে চূড়ান্ত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া থেকে’ মস্কোকে থামানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ভাষণে বিশ্বের প্রতি রাশিয়ার হুমকি হয়ে ওঠার বিষয়টি নজরে আনার ওপর গুত্ব দেন জেলেনস্কি। খাদ্য থেকে জ্বালানি—সবকিছুকেই রাশিয়া অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া যখন বিশ্বকে চূড়ান্ত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তখন ইউক্রেন বিষয়টি নিশ্চিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে যে রুশ আগ্রাসনের পর কেউ যেন অন্য কোনো দেশে হামলা চালানোর সাহস না পায়। রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র রাখার অধিকার নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাশিয়ার দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইউক্রেনের মুক্তির লড়াই পাশে থাকবে বলে ঘোষণা দেন বাইডেন। তিনি বলেন, এই যুদ্ধের একমাত্র দায় রাশিয়ার। আর দ্রুত এই যুদ্ধ বন্ধের ক্ষমতাও কেবল রাশিয়ারই আছে।