চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: গত কিছুদিনের ব্যাপক বর্ষণ, এর ফলে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢল ও আকস্মিক বন্যা ও জলাবদ্ধতায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদখাতে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাগণ।
কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে চট্টগ্রাম জেলা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে কৃষি মৎস্য প্রাণিসম্পদ খাতে ৩০৫ কোটি ৩০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধিত হয়েছে। এতে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেলায় কৃষিখাতেই ১ লাখ ১৫ হাজার ৮ শত কৃষক ক্ষতিগ্রস্তহয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলায় কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে টাকার অঙ্কে যা ১৮৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কার্যালয়। ক্ষতিগ্রস্ত আমন বীজতলা, রোপিত আমন, আউশ ও শাকসবজি ক্ষেতের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২১৭৩ হেক্টর আমনবীজতলা-টাকার অঙ্কে ১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা, রোপিত আমন ৩৪৩৮ হেক্টর টাকার অঙ্কে ৪০ কোটি ৭০ লাখ, আউশ ধানে ক্ষতি হয়েছে ২৭২৫ হেক্টর যা টাকার অঙ্কে ১৯ কোটি ৭৮ লাখ। আর শাকসবজিতে ক্ষতি হয়েছে ২৮৯৮ হেক্টর জমির ১২২ কোটি ৩০ লাখ টাকার শাকসবজি।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় মৎস্যকর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রাণিসম্পদখাতে ৪৯ কোটি ৭৪ লাখ ৪৯ হাজার ৭৮৫ টাকা ক্ষতিগ্রস্তহয়েছে। এতে মৃত গবাদি পশু ও হাঁসমুরগির সংখ্যার মধ্যে মুরগি ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৩৪টি, হাঁস ৪৫২টি, ছাগল ৭২টি, ভেড়া ২টি, গরু ৬০টি রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ক্ষতি হয়েছে ২৯ কোটি ৩০ লাখ ৯০ হাজার ১৮৫ টাকা। এতে মুরগি মারা গেছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৩টি এবং হাঁস মারা গেছে মাত্র ২০টি।
এদিকে কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ পুরো চট্টগ্রাম জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১৩ হাজার ৩৭৯টি মাছের পুকুর ও খামার এবং ১২৬টি মাছের ঘের ভেসে গিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মূল্যমানের ৪ হাজার ১৫৪ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। জেলা মৎস্যকর্মকর্তার কার্যালয়, চট্টগ্রামের তথ্য বলছে, কয়েকদিনের টানাবর্ষণ ও পাহাড়িঢলে মাছ ও অবকাঠামোসহ প্রায় ৬৯ কোটি ৩৮ লাখ ৭১ হাজার টাকার ক্ষতিসাধিত হয়েছে।
এদিকে পার্বত্য তিন জেলায় ১০ দিনের বন্যায় কৃষির বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বান্দরবান জেলায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাঙামাটি অঞ্চলের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলায় অন্তত ৩৮৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আউশ, আমন, রোপা আমন আর আমনবীজতলার। সেইসঙ্গে ক্ষতি হয়েছে মৌসুমীফল এবং আদা, হলুদ, পেঁপে, কলাসহ সবজি বাগানেরও।
৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বর্ষণ ও তার ফলে সৃষ্ট বন্যায় ১৩ আগস্ট পর্যন্তক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনে পাহাড়ের কৃষির এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের প্রায় প্রতিটি উপজেলাই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এর মধ্যেও রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি এবং বিলাইছড়ি, বান্দরবানের লামা, আলীকদম, সদর ও রোয়াংছড়ি এবং খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, সদর, মহালছড়ি ও রামগড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
রাঙামাটি জেলায় মোট এ বছর আবাদ হওয়া মোট কৃষিজ জমি ছিল ৫৯ হাজার ৮৩৫ হেক্টর। এর মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৬২৮ হেক্টর জমির ফসল। এই জেলায় মোট আর্থিক ক্ষতিরপরিমাণ ৬১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। রাঙামাটিতে ১৮ হাজার ৮৪৪ মেট্রিক টন শস্য নষ্ট হয়েছে বন্যার পানিতে। এখানে প্রায় ১২ হাজার ১৬০ জন কৃষক কমবেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
খাগড়াছড়িতে চাষ হওয়া ৩২ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমির মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ১৩৪৪ হেক্টর জমি। আর্থিক ক্ষতির হিসাবে যা প্রায় ১১ কোটি। এই জেলায় ৩ হাজার ৮৭৮ মেট্রিক টন শস্য নষ্ট হয়েছে। খাগড়াছড়ির ২ হাজার ৮৪০ জন কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বান্দরবান জেলায়। এই জেলায় আবাদ হওয়া ২০ হাজার ৪২৪ হেক্টর জমির মধ্যে ৯ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমির ফসলই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা মোট ফসলের প্রায় ৪৩ শতাংশ। মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এই জেলায় ৫৬ হাজার ২৫০ জন কৃষকের ৮৮ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন শস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সবমিলিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ৩৮৩ কোটি টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন।