বর্তমান যুগের মহীয়সী এক নারী দেলোয়ারা বেগম

বর্তমান যুগের মহীয়সী এক নারী দেলোয়ারা বেগম

নারী ডেস্ক: সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে যখন ডাক্তাররা সিজারের প্রতি অধিক হারে ঝুঁকে পড়ছেন ঠিক সে সময় নরমাল ডেলিভারিতে এগিয়ে তিনি। বর্তমান সময় কিংবা কর্মজীবনের শুরু। কোনোকালেই সিজারে ডেলিভারিকে তিনি প্রাধান্য দেননি। আজ শোনাব তেমনই এক মহীয়সী নারীর গল্প। এ যুগের এই মহীয়সী নারীর নাম দেলোয়ারা বেগম। পেশায় একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা। ১৯৬৭ সালে লক্ষীপুরের রায়পুরে জন্ম নেওয়া এ যুগের এ মহীয়সী নারীর বয়স প্রায় ৫৬ বছর। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের বিগত প্রায় ৩১ বছরে আনুমানিক সাড়ে ৭ হাজার সফল নরমাল ডেলিভারি করেছেন তিনি। তাছাড়া তার প্রসবপূর্ব সেবা পেয়েছেন প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি নারী। ১৯৯২ সালে শুরু করা চাকরি জীবনের এই ৩১ বছরে তিনি সরকারি কোয়ার্টারে থেকে প্রসূতি নারীদের প্রদান করেছেন নিরলস সেবা।
বর্তমানে নিয়োজিত আছেন জেলার রায়পুর উপজেলার ৭নং বামনী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হিসেবে। ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত করেছেন প্রায় সাড়ে ৭ হাজার নরমাল ডেলিভারি। চাকরি জীবনে তিনি এক প্রকার প্রসূতি বন্ধু হিসেবে পরিচিতিও অর্জন করেছেন। তার চাকরির প্রথম পদায়ন হয় লক্ষীপুর সদর উপজেলার ১৭নং শাকচর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। সেখানে ছিলেন প্রায় দেড় বছরের মতো। এরপর জেলার রায়পুর উপজেলার ৪নং সোনাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন প্রায় ৪ বছর। পরে একই উপজেলার ২নং উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একই পদে দায়িত্ব পালন করেন প্রায় ৭ বছর। চাকরি জীবনের বাকি প্রায় দীর্ঘ ১৬ বছর ছিলেন ৪নং সোনাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হিসেবে। বর্তমানে তিনি উপজেলার ৭নং বামনী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হিসেবে নিয়োজিত আছেন।


আস্থা ও ভরসার প্রতীকে পরিণত হওয়া এই পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সেবা প্রদান করেন কার্পণ্যহীনভাবে। এমনকি ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় যখন গর্ভবতী নারীরা অদৃশ্য ভাইরাসের কারণে ছিলেন দুশ্চিন্তায় ঠিক সেই সময়টায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা প্রদান করেছেন তিনি ও তার সহযোগীরা। কুড়িয়েছেন ব্যাপক সুনামও। কর্মরত এলাকা এবং সাবেক কর্মস্থল এলাকা ছাড়াও জেলার অধিকাংশ মানুষের কাছে তিনি ডাক্তার দেলু আপা নামে পরিচিত। বর্তমান কর্মস্থল ৭নং বামনী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গত ২০২২ সালের জুলাই থেকে এ বছরের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত করেছেন প্রায় ১৩৯টি নরমাল ডেলিভারি। তার অধীনে বিগত এক বছরে প্রসবপূর্ব সেবা নিয়েছেন প্রায় ৭৪৭ জন প্রসূতি।
সেবা কেন্দ্রে প্রসূতি ছাড়াও শিশু, কিশোর-কিশোরী ও সাধারণ মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র তিনি। এ পেশায় আসাটাও তার জন্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। বাবাকে অনেক কষ্টে মানিয়ে করেছেন পড়াশোনা। পড়াশোনা চলাকালেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন- যোগ দেবেন মানবসেবায়। কিন্তু জীবন চালনার জন্যও অর্থের প্রয়োজন- সে চিন্তা থেকে যোগদান করেন এ পেশায়। সেবা এবং জীবিকা নির্বাহ দুটোর বন্দোবস্ত হয়েছে তার। চাকরির পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়ে গিয়েও করেন মানবসেবা। বেতনের টাকা থেকে পাশে দাঁড়ান অনেকের। মহৎ ও মহানের কাতারে থাকা এ পেশায় তিনি যেন হয়ে উঠেছেন এ যুগের মহীয়সী এক নারী।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *