যাত্রাপথে বমি বা মোশন সিকনেস থেকে মুক্ত থাকার উপায়

যাত্রাপথে বমি বা মোশন সিকনেস থেকে মুক্ত থাকার উপায়

ডা. মো. তারেক ইমতিয়াজ (জয়) – আর মাস খানেক পরেই আসছে কোরবানির ঈদ। ঈদের ছুটিতে অনেকেই যাবেন নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি। ছুটি কাটাতে এই যাত্রাপথের আনন্দটাও কিন্তু কম নয়। কিন্তু অনেকেরই বাসে ভ্রমণ করলে মাথা ঘোরায়, বমির ভাব হয় বা বমি হয়। আর এ কারণে ভ্রমণের আনন্দে ভাটা পরে। এই সমস্যাটির জন্য অনেকেই বাসে দূর পাল্লার জার্নি করতেই ভয় পান। বাসে যাত্রা পথে বমির এই সমস্যাটিকে ‘মোশন সিকনেস’ (Motion sickness) বলে।


আমাদের কানের একদম ভিতরের অংশ যাকে বলে অন্তঃকর্ণ তা আমাদের শরীরের গতি ও জড়তার ভারসাম্য রক্ষা করে। যখন কেউ কোনো যানবাহনে চলাফেরা করেন তখন অন্তঃকর্ণ মস্তিষ্কে খবর পাঠায় যে সে গতিশীল। তবে চোখ বলে ভিন্ন কথা। কারণ, তার আশপাশের মানুষগুলো কিংবা গাড়ির সিটগুলো থাকে স্থির। আমাদের চোখ আর অন্তঃকর্ণের এই সমন্বয়হীনতার কারণেই মোশন সিকনেস হয়। এছাড়া অ্যাসিডিটি, গাড়ির ধোঁয়া কিংবা গাড়িতে বাজে কোনো গন্ধের কারণেও গাড়িতে বমি হতে পারে।


যাত্রাপথে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যাটি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। যেমন-
▪ যাত্রাপথে গাড়ি বা বাসের সামনের দিকে বসুন, চেষ্টা করুন জানালার পাশে বসতে।
▪ সম্ভব হলে সিটটিকে পিছনের দিকে ঝুঁকিয়ে নিন। চোখ বন্ধ রাখুন, ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
▪ জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালে দূরে দিগন্ত বরাবর দৃষ্টি প্রসারিত করুন। জানালা দিয়ে কাছের কোনো দৃশ্য দেখবেন না। চলন্ত গাড়ি থেকে জানালা দিয়ে কাছে কোনো কিছু দেখলে দ্রুত পরিবর্তিত হওয়া দৃশ্যগুলোর জন্য এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
▪ যাত্রার আগে অতিরিক্ত খাবার বা গুরুপাক খাবার খাবেন না। যাত্রার কমপক্ষে ২ ঘন্টা আগে হাল্কা কিছু খেয়ে নিন। কখনো পেট ভড়ে খাবেন না। যাত্রাপথে বারবার খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
▪ ভ্রমণের সময় ধূমপান করবেন না। আদা, মৌরি, লবঙ্গ বা কোন লজেন্স মুখে রাখতে পারেন।
▪ চলন্ত অবস্থায় বই পড়া, মোবাইলে গেম খেলা বা নেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এর ফলে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
▪ মনকে শান্ত রাখুন, ভ্রমণের সময় ভুলে যান যে যাত্রাপথে আপনার মোশন সিকনেসের সমস্যা হয়। মনকে প্রফুল্ল রাখতে গান শুনতে পারেন।
▪ সমস্যা বেশি হলে বমি নিরোধক ট্যাবলেট যেমন-প্রোমিথাজিন (Promethazine), হায়োসিন (Hyoscine), মেকলোজিন (Meclizine), অনডানসেটরন (Ondansetron) জাতীয় ঔষধ ভ্রমণের আগের রাতে ১টি এবং যাত্রার ৩০ মিনিট আগে ১টি সেবন করতে পারেন। সাথে যাত্রার আধা ঘণ্টা আগে এসিডিটি কমানোর ঔষধ যেমন- Esomeprazoleবা Omeprazoleখেতে পারেন।


[লেখক: এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য); সহকারী রেজিস্ট্রার, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।]

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *