ডা. মো. তারেক ইমতিয়াজ (জয়)
কিডনি আমাদের দেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শরীরের ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। শিশুদের কিডনি রোগ বড়দের কিডনি রোগ থেকে কিছুটা ভিন্ন। শিশুদের কিডনি রোগের বড় একটা অংশ হলো জন্মগত কিডনি রোগ।
শিশুর জন্মগত কিডনি রোগে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জন্মগতভাবে শিশুর মূত্র-তন্ত্রের কোনো অংশে প্রতিবন্ধকতা থাকে। যেমন- পোস্টেরিয়র ইউরেথ্রাল ভাল্ভ (Posterior urethral valve) যেখানে মূত্রনালিতে পর্দা থাকার কারণে প্রস্রাবে বাঁধা সৃষ্টি হয়; পেল্ভি-ইউরেটেরিক জাংশন অবস্ট্রাকশন (Pelvi-ureteric junction obstruction) বা ভেসিকো-ইউরেটেরিক জাংশন অবস্ট্রাকশন (vesico-ureteric junction obstruction) যেখানে কিডনি থেকে যে নালী পথে প্রস্রাব মূত্রথলিতে পৌঁছায় তাতে প্রতিবন্ধকতা থাকে।
বিশেষ কিছু উপসর্গ দেখে এই জন্মগত কিডনি রোগগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। দেখা যায় শিশু ঘন ঘন প্রস্রাব করছে, ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব করা এবং ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে প্রস্রাব কিছুটা দূরে গিয়ে না পড়ে কাছেই পড়ছে, শিশুর পেট ফোলা বা কোনো চাকা অনুভূত হওয়া এবং শিশুর ঘন ঘন জ্বর হওয়া। তাছাড়া, মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে মায়ের জরায়ুতে পানির পরিমাণ কম থাকতে পারে। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে মায়ের পেটের আলট্রা-সনোগ্রাফী পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।
শিশুদের এই জন্মগত রোগ থেকে খুব অল্প বয়সেই কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই, শিশুদের এই জন্মগত রোগ দ্রুত নির্ণয় করা জরুরি। কারণ, শিশুদের এই জন্মগত কিডনি রোগ যত দ্রুত নির্ণয় করা যায় বা যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব। এতে কিডনির ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব। শিশুদের জন্মগত কিডনি রোগের মূল চিকিৎসা হলো অপারেশন।
এজন্যই গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত চিকিৎসকের ফলোআপে থাকা জরুরি। গর্ভবতী মায়ের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এবং নির্ধারিত সময়ে মায়ের পেটের আলট্রা-সনোগ্রাফী পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুদের এই জন্মগত কিডনি রোগ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার। তাছাড়া রোগ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। উল্লিখিত উপসর্গ কোনো শিশুর মাঝে পাওয়া গেলে দ্রুত শিশু রোগ বা শিশু কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।
[লেখক: এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য); সহকারী রেজিস্ট্রার, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।]