কৃষি সংবাদদাতা: এক বছরে দেশে সরিষার উৎপাদন বেড়েছে ৪০ শতাংশ, আর সরিষার তেলের উৎপাদন বেড়েছে ৩০ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
দেশীয় উৎস থেকে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ জোগান দেওয়ার তিন বছর মেয়াদী যে পরিকল্পনা কৃষি মন্ত্রণালয় নিয়েছে, প্রথম বছরেই তাতে সাফল্যের মুখ দেখার কথা বলছে সরকার। ধানের উৎপাদন না কমিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ১০ লাখ টন তেল উৎপাদন করে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে পুরণ করার লক্ষ্য ধার্য করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে তেলবীজ আবাদ হয়; যার মধ্যে সরিষা করা হয় ৬ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ মৌসুমে ৮ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে, যেখান থেকে ১১ লাখ ৫২ হাজার টন সরিষা পাওয়া গেছে। এর আগের বছর উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ২৪ হাজার টন। তেল হিসাবে বিবেচনা করলে আগের বছরের তুলনায় ১ লাখ ২১ হাজার টন তেল বেশি উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি লিটার তেলের মূল্য ২৫০ টাকা করে হিসাব করলে এক বছরেই উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার।
ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে ২০২২ সালের জুনে ৩ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯ লাখ ২০ হাজার হেক্টর, পরের বছর ১৬ লাখ হেক্টর এবং তার পরের ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৩ লাখ হেক্টর জমিতে তেলবীজ আবাদ করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ধানের উৎপাদন না কমিয়েই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ১০ লাখ টন তেল উৎপাদন করা হবে, যা চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ করবে। এর ফলে তেল আমদানিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় ৩ লাখ টন, যা চাহিদার সাড়ে ১২ শতাংশ। বাকি ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মধ্যে সরিষা, তিল, বাদাম, সয়াবিন, সূর্যমুখীসহ তেলজাতীয় ফসলের আবাদ তিনগুণ বৃদ্ধি করে বর্তমানের ৮ লাখ ৬০ হেক্টর জমি থেকে ২৩ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে উন্নীত করা হবে। আর তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন এখনকার ১২ লাখ টন থেকে ২৯ লাখ টনে এবং তেলের উৎপাদন বর্তমানের ৩ লাখ টন থেকে ১০ লাখ টনে উন্নীত করা হবে।
এ লক্ষ্য অর্জনে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। বর্তমানে আবাদ করা স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উচ্চফলনশীল সরিষার জাত বারিসরিষা-১৪, বারিসরিষা-১৭ বিনাসরিষা-৪, বিনাসরিষা-৯, প্রভৃতি জাত সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, অনাবাদি চরাঞ্চল, উপকূলের লবণাক্ত অঞ্চল, হাওর ও পাহাড়ি অঞ্চলকে তেলজাতীয় ফসল চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। তৃতীয়ত, নতুন শস্যবিন্যাসে স্বল্প জীবনকালের ধানের চাষ করে রোপা আমন ও বোরোর মধ্যবর্তী সময়ে অতিরিক্ত ফসল হিসাবে সরিষার চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এছাড়া, লক্ষ্য অর্জনে তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প ও প্রণোদনা কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর ফলে প্রথম এক বছরেই প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টন পাম তেল এবং ৭ লাখ ৮০ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছে। মোট ২১ লাখ ৩৫ হাজার টন ভোজ্য তেল আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ১৮৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পাম ও সয়াবিন তেল আমদানি করতে হয়েছে বলে গত বছর জুনে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়।