নারী ডেস্ক: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক তন্বী নন্দিনী ইসলাম। আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী শিশু হিসেবে বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে এক বিচ্ছিন্নতা তাকে ভিন্নভাবে ভাবার শক্তি জোগায়। প্রেম নিয়ে জিজ্ঞাসা, সহিংসতা, শিকড়ের খোঁজ এবং প্রজন্মগত বিভক্তি ও মিশ্রণ তার লেখায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর এ তরুণী চলতি বছর কারকাস রিভিডি সাহিত্য পুরস্কারে মনোনীত হয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে তিনি পাবেন ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। ২৭ অক্টোবর সেরা ছয় ননফিকশনের মধ্যে বইটি বেস্ট নন-ফিকশনের খেতাব জিতে নেয়।
জানা যায়, ‘ইন সেনসোরিয়াম: নোটস ফর মাই পিপল’ বইয়ের জন্য নন ফিকশন বিভাগে কারকাস পুরস্কার-২০২২ জিতেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ নারী। তিনি আমেরিকান কথাসাহিত্যিক ও ব্রুকলিনের প্রসাধন ও সুগন্ধি প্রতিষ্ঠান তানাইসের প্রতিষ্ঠাতা। গত বছর কারকাস তালিকায় সবচেয়ে বেশি স্টার পাওয়া ১,৪৩৬টি বই থেকে চূড়ান্ত বইগুলো বেছে নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পুস্তক পর্যালোচনা বিষয়ক সাময়িকী কারকাস রিভিউ এ পুরস্কার দিয়ে থাকে। এর সদর দফতর নিউইয়র্কে। গত মাসে প্রকাশিত বইগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে তিনটি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়। বিভাগগুলো হলো- ফিকশন, নন-ফিকশন ও ইয়াং রিডার্স। পুরস্কারপ্রাপ্ত বইটি তন্বীর দ্বিতীয় বই। প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা হারপার কলিন্স থেকে। বইটি সম্পর্কে তন্বী বলেন, ‘লেখক হিসেবে নারী, শিল্পী এবং ট্রান্সজেন্ডারদের মনের ভিতর ডুব দিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারাটা জরুরি মনে করি। আমি তাদের কথা বলতে চাই, কারণ তাদের নিয়ে বলা মানুষ নিতান্তই নগণ্য পরিমাণ। মানব ইতিহাসে তাদের অদৃশ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’ তন্বী লিখেছেন, ‘শরীর পারিপার্শ্বিকতা এড়াতে পারে না। একটি সুগন্ধি এক মুহূর্তের জন্য হলেও সেই সুযোগটা করে দেয়।’ এমন সাহসী লেখনীই বিচারকদের নজর কেড়েছে। তন্বীর বয়স তখন ১০ বছর। বাবা-মা নিউইয়র্কে স্থায়ী হন। শৈশব কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এবং মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে। কুইন্সে কেটেছে শৈশবের বেশির ভাগ সময়। ২০০৪ সাল থেকে ব্রুকলিনে রয়েছেন তন্বী। তখন থেকেই নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটির সঙ্গে তার সংযোগ। এ কমিউনিটিকে বোঝার মধ্য দিয়েই তিনি লেখার নিত্যনতুন উপকরণ খুঁজে পান। সেখানে নারীর অধিকার ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের বিষয়ে লেখা চালিয়ে যান।
বিচারকদের মতে সাহসী, উদ্ভাবনী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং গীতিময় অলংকারিক লেখার জন্য বইটি পুরস্কার জিতে নেয় উইমেন স্টাডিজে বিএ করেন নন্দিনী। তার আগ্রহের বিষয় ছিল পারফরমেন্স আর্ট। ব্রুকলিন কলেজ থেকে এমএফএ করেন ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ে। ২০০৬ সালে উইলিয়াম জি ক্লিনটন ফেলোশিপ নিয়ে দিল্লি যান। সেখান থেকে ফিরে সুগন্ধি ও ক্যান্ডেল নিয়ে আগ্রহী হন। এসব অভিজ্ঞতা নিয়েই তিনি পাঠকদের সামনে প্রথম বই ‘ব্রাইট লাইন্স’ নিয়ে হাজির হন। ২০১৫ সালে পেঙ্গুইন থেকে সেটি প্রকাশিত হয়। তন্বী নন্দিনী প্রথম উপন্যাস লিখে সেন্টার ফর ফার্স্ট ফিকশন নভেল প্রাইজ, এডমন্ড হোয়াইট ডেব্যু ফিকশন অ্যাওয়ার্ড, ব্রুকলিন ইগলস লিটারেরি প্রাইজের ফাইনালিস্ট নির্বাচিত হন। ইন্টারনেটে ‘ইন সেনসোরিয়াম : নোটস ফর মাই পিপল’ বইয়ের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, ‘চমৎকার এই কাজে ঔপন্যাসিক ও পারফিউমার নন্দিনী আত্মজীবনী, ইতিহাস ও পারফিউমের নোট থেকে শুরু করে প্রেম নিয়ে জিজ্ঞাসা, সহিংসতা ও প্রজন্মগত গতির মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, শরীর পারিপার্শ্বিকতা এড়াতে পারে না। একটি সুগন্ধি এক মুহূর্তের জন্য হলেও সেই সুযোগটা করে দেয়। আমেরিকান বাংলাদেশি এই লেখক মুসলিম হিসেবে শিকড়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তার কাজে শিকড়কে খোঁজার চেষ্টা দেখা যায়। আশির দশকে আমেরিকায় অভিবাসী শিশু হিসেবে বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে যে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি এবং একইভাবে ভারতের উপনিবেশ ও বর্ণপ্রথাবিরোধী দৃঢ় অবস্থান তার লেখায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।’ নন্দিনী ইসলাম তার বেড়ে ওঠা এবং অভিজ্ঞতা পাঠের মধ্য দিয়ে নিজের কাজকে ব্যাখ্যা করেন। গার্লস ইন লাইব্রেরির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি আগ্রহের জায়গা নিয়ে কথা বলেন, ‘নারী, শিল্পী এবং ট্রান্স লেখকদের মনের ভিতর ডুব দিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারাটা জরুরি মনে করি। আমি তাদের কথা বলতে চাই, কারণ তারা মানব ইতিহাসে সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হিসেবে বিবেচিত হন।’
লেখক হিসেবে পাঠের অভ্যাস প্রসঙ্গে নন্দিনী বলেন, ‘আমি মনে করি, একজন লেখকের প্রথম চেতনা হলো তাকে জানতে হবে ‘আমি পড়তে ভালোবাসি’। বই পড়তে আমি খুব ভালোবাসি। আমি পড়তে চাই, কারণ আমি বিশ্বাস করি- একজন লেখক হওয়ার প্রক্রিয়া হলো, আগে আপনাকে একজন মনোযোগী পাঠক হতে হবে।’