মানবতার উন্নয়নে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.)

মানবতার উন্নয়নে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.)

মুহাম্মদ জহিরুল আলম
দয়াময় রাব্বুল আলামিন অত্যন্ত ভালোবেসে এ জগৎ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ, তাই মানুষের মাধ্যমেই তাঁর পরিচয় প্রকাশ এবং প্রতিষ্ঠা। মহান আল্লাহ্ মানুষকে যেমন ভালোবাসেন, ঠিক তেমনি মানুষকে দান করেছেন শ্রেষ্ঠত্বের গুণাবলি। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন- “আমি (আল্লাহ্) আমার রুহ থেকে আদমের ভিতরে রুহ ফুঁকে দিলাম।” (সূরা হিজর ১৫: আয়াত ২৯) মহান আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ তার কর্মের মাধ্যমে অনাদিকাল ধরে শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ বিশ্বের আজ এত উৎকর্ষতা। মহান আল্লাহ্ মানুষকে যতগুলো গুণ দান করেছেন তার মাঝে অন্যতম গুণ হলো ‘মানবতা’। যুগে যুগে যত মহামানব পৃথিবীতে আগমন করেছেন সকলেই মানবতার উন্নয়নে কাজ করেছেন।

‘মানবতা’ একটি দর্শন, যা মানবিক বিষয়াবলি নিয়ে কাজ করে। এখানে মূল হলো মানুষ। সকল পরিচয়ের ঊর্ধ্বে আমি একজন মানুষ। হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “তোমরা পরস্পরের মধ্যে দয়া মায়া এবং সহমর্মিতার একটি দেহের মতো। দেহের একটি অংশে ব্যথা হলে সর্বাংশে তা অনুভূত হয়”। (বোখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)

শেখ সাদি (রহ.) বলেন, “আদম সন্তান একই অঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ, যেহেতু সে একই বস্তু হতে সৃষ্ট; অঙ্গের কোনো অংশ যদি ব্যথা পায়, অন্য অঙ্গগুলো আরাম নাহি পায়; যদি তুমি অন্যের ব্যথায় না হও ব্যথিত, মানব নাম ধারণ তোমার হবে অনুচিত”। (গুলিস্তা, শেখ সাদি)।

সুফি কবি, সাম্যের কবি নজরুল নির্দ্বিধায় বলেছেন:
“গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
সব দেশে, সব কালে ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।”
(মানুষ, সাম্যবাদী)

মধ্যযুগে কবি চন্ডীদাশ বলেছিলেন,
“শুনহ মানুষ ভাই
সবার উপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই।”
লালন বলেছেন, “মানুষ ধরো, মানুষ ভজো, মানুষ খোঁজ, শোন বলিরে পাগল মন।”

মানুষ মানবতাকে ধারণ করে। মানবতা, জগতে মানবিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে, মানব জীবনের সুখ ও সমৃদ্ধি সম্প্রসারণ করে। মানবতার উন্নয়ন সকল মানুষের জন্য ন্যায্য সুযোগ তৈরি করে। মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের সফলতার দিকে মনোনিবেশ করে। মানবতা, এ পৃথিবীকে মানুষের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য করে তোলে। মানবতার অবক্ষয় সকল কিছুকেই অর্থহীন করে তোলে। মানুষের জন্যও এ অবক্ষয় লজ্জাজনক। তাই মানবতার উন্নয়ন সর্বদাই প্রাসঙ্গিক। উন্নয়ন একটি প্রপঞ্চ। কাক্সিক্ষত ও কাম্য পরিবর্তনই হলো উন্নয়ন। মানবতার উন্নয়ন হলো মানুষের মঝে বহু কাক্সিক্ষত ও কাম্য পরিবর্তন নিয়ে আসা। যুগশ্রেষ্ঠ মহামানবগণ সমকালীন মানুষের মাঝে সেই পরিবর্তনই আনয়ন করেন।

ধর্ম-মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে, মানুষকে ন্যায়, সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের সন্ধান দেয়। মহামানবগণের মানবতাবাদী দর্শনে ধর্ম আরো সতেজ হয়ে উঠে, সমাজে মানবতার উন্নয়ন ঘটে। দয়াল রাসুল (সা.) আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে বর্বর আরবজাতিকে আদর্শ চরিত্রবান রূপে গড়ে তোলেন, তারা হয়ে উঠেন নক্ষত্রতুল্য। পাশাপাশি মানবতার বিকাশে হযরত রাসুল (সা.) অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

সভ্যতার চরম ক্রান্তিলগ্নে বিশ্ব মানবতার শান্তির দূত হয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতিশ্রুত এবং তাঁর হিদায়েতের নুর ‘নুরে মোহাম্মদীর’ ধারক ও বাহক হয়ে মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, যুগের ইমাম, আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী, আল্লাহর দেওয়া পুরস্কার: পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি- সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৪৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর, বুধবার বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলাধীন বাহাদুরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হযরত রাসুল (সা.)-এর ২৩তম বংশধর। এই মহামানব ১৯৮৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মহান রাব্বুল ইজ্জতের পক্ষ থেকে জামানার ‘মোজাদ্দেদ’ বা মহান সংস্কারকের দায়িত্ব লাভ করেন; ১৯৮৮ সালের ১০ই মহররম ‘যুগের ইমাম’-এর দায়িত্ব লাভ করেন; ১৯৮৯ সালের ৫ই এপ্রিল হযরত মোহাম্মদ (সা.) তাঁকে ‘মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী’ খেতাবে ভূষিত করেন; ১৯৯৬ সালের ২রা অক্টোবর আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্ম পরিচালনার দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভ করেন। অতঃপর ২০০৮ সালের ১০ই অক্টোবর হতে মানুষ তাঁর নুরানিময় চেহারা মোবারক পূর্ণিমার চাঁদের মাঝে দেখতে শুরু করেন, যা আজ পর্যন্ত মুক্তিকামী মানুষ দেখতে পাচ্ছেন।

সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) মানবতার উন্নয়নে সমগ্র জীবন অতিবাহিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমি মানুষকে আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা ও নামাজে হুজুরির শিক্ষা দেই। যা হযরত ইব্রাহিম (আ.), হযরত মুসা (আ.) এবং নবিগণ তাঁদের অনুসারীদেরকে ঐ একই শিক্ষা দিয়েছিলেন।… আত্মশুদ্ধি হলে তার নিয়ত শুদ্ধ হবে, নিয়ত শুদ্ধ হলে তার যাবতীয় ইবাদত শুদ্ধ হবে। সে ধর্মের পরিপন্থী কোনো কথা বলতে পারে না। আল্লাহর তরফ থেকে মন থেকে ঐ খারাপগুলো দূরীভূত হয়ে যাবে। …এর সাথে বাড়তি সংযোগ করেছি আশেকে রাসুল হওয়া।” (সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ইং)

সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর মাঝে ‘মানবতার উন্নয়নের দর্শন’ শৈশব হতেই প্রকাশ পায়। শৈশবেই সেমন্তগড়ের পির সাহেব কিংবা মরম আলী শাহ্-এর মতো অনেক অলী-আল্লাহর সাথে পরিচয় ও মানব কল্যাণে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। মেঘনা নদীতে জলদস্যু বিতাড়ন, জিনে আছর করা ব্যক্তিকে সুস্থ করার মতো অসংখ্য ঘটনা শৈশবেই সংঘটিত হয়েছিল।

সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান ১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল রোববার ৭২ জন সাথি নিয়ে দেশ মাতার মুক্তির লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ৩নং সেক্টরে প্রথমেই প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তিনি নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তা হলো ‘অ্যাটাসটেশন প্যারেড’ বা শপথবাক্য পাঠ করানো। সেসময় তিনি ভারতে দুটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী প্রদানকারী। সেদিন ১৯৭১ সালের ১৯শে নভেম্বর ১১তম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ঈদুল ফিতরের নামাজের খুৎবা দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত কন্ঠে তিনি বলে উঠলেন, “আল্লাহর কসম! আগামী বকরা ঈদের (ঈদুল আজহা) আগে দেশ স্বাধীন হবে। আমি আপনাদেরকে নিয়ে ঢাকার রেসকোর্সে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করব।” এ বাণী সত্য হয়েছিল, বকরা ঈদের পূর্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) স্বাধীন বাংলাদেশের রেসকোর্স ময়দানে ঈদের জামাতে ইমাম হিসেবে নামাজ পরিচালনা করেন।

সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) কর্মজীবনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রিলিজিয়াস টিচারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টের ভাওয়াল রাজবাড়ীতে অবস্থানকালীন সবাই তাঁর প্রতি মোহিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন যেন ভরসার স্থল, ছোটো বড়ো সবার বিপদে তিনি সহযোগিতা করতেন। যার প্রমাণ, তাঁর মহান মোর্শেদ সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর নির্দেশে তিনি যখন চাকরিতে ইস্তফা দেন, তিনটি বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সকলেই অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁকে বিদায় জানায়। যা একজন মানবতাবাদী মহামানবের জীবনেরই বহিঃপ্রকাশ।

ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.) তাঁর দরবার শরীফের সকল দায়িত্ব যেমন- তরিকা প্রচার, দরবার শরীফ পরিচালনা ও উন্নয়ন, ওরস মোবারকের অনুষ্ঠান পরিচালনা, জাকেরদের সমস্যার ফয়সালা দেওয়া, ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর পরিবার-পরিজনের দেখাশুনা তথা যাবতীয় দায়িত্ব অছিয়ত করে সূফী সম্রাটকে দায়িত্ব দেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান, যে গ্রামটি ‘চর নওপাড়া’ হিসেবে পরিচিত ছিল তার নাম পরিবর্তন করে ‘চন্দ্রপাড়া’ নামকরণ করেন। তিনি সেখানে সড়ক নির্মাণ, লঞ্চঘাট প্রতিষ্ঠা, দরবার শরীফের সম্প্রসারণ, জকেরদের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে সল্বে বসার জন্য পৃথক ঘর নির্মাণ ও ইসলামি গবেষণার জন্য লাইব্রেরি স্থাপন করেন। ডাকঘর প্রতিষ্ঠা, রাইস মিল স্থাপন, মাদ্রাসা ও এতিমখানা নির্মাণের মাধ্যমে মানবতার উন্নয়নে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। মানবতার উন্নয়নে তাঁর কার্যক্রম কখনোই থেমে থাকেনি। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় চন্দ্রপাড়ায় সরকারি হাসপাতাল, সুলতানিয়া জুনিয়র হাই স্কুল ও সুলতানিয়া কবরস্থান প্রতিষ্ঠিত হয়। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফের বিদ্যুতায়ন থেকে শুরু করে উন্নয়নের সকল কর্মকাণ্ড নিজে সামনে থেকে নেতৃত্বদান করেন।

সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের অনন্য প্রতিষ্ঠান দেওয়ানবাগ শরীফ। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ১১টি অঞ্চলিক দরবার শরীফ, দুই শতাধিক খানকা শরীফ এবং পাঁচ শতাধিক আশেকে রাসুল জাকের মজলিশ প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি বিশ্বের শতাধিক দেশে বিশ্ব আশেকে রাসুল সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিটি স্থানই ‘হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শ ও চরিত্র’ শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি দীর্ঘ ৩৩ বছর নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে বিষয় সংশ্লিষ্ট আয়াত এবং প্রতিটি আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর মারফু হাদিসের আলোকে আল্লাহর জাত-পাক ও ৯৯ খানা সিফাত অর্থাৎ গুণবাচক নামের পরিচয় উপস্থাপন করে প্রায় ১১ হাজার পৃষ্ঠা সংবলিত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নামক ৮ খণ্ডের তাফসীর শরীফ প্রণয়ন করেন। তিনি হযরত রাসুল (সা.) সম্পর্কে প্রচলিত প্রতিটি ভ্রান্ত মতবাদের অবসান ঘটিয়ে ধর্মের অসংখ্য সংস্কার করেছেন। তাঁর অনেক সংস্কার রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত হয়েছে।

১৯৯০ সালে বাবে জান্নাত, দেওয়ানবাগ শরীফে সন্ত্রাসীরা হামলা করে। সেসময় মানবতার মূর্ত প্রতীক সূফী সম্রাট হুুজুর কেবলাজান সবাইকে ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দিয়ে বলেন, “আমি মানুষকে হিদায়েতের পথে পরিচালিত করার জন্য এসেছি। সুতরাং আগে আমরা সমাজের মানুষের মাঝে তরিকা প্রতিষ্ঠা করি। তারপর দেখা যাবে বাবে জান্নাত, দেওয়ানবাগ শরীফ কোথায় যায়।” তাঁর মুরিদ যখন চরম বিপদে পড়ে দুচোখের পানি ফেলে মোর্শেদকে স্মরণ করে, আল্লাহর সাহায্য কামনা করে, তখন তারা আল্লাহর সাহায্য পান। ইমান নিয়ে কবরে যেতে হলে এমন মোর্শেদের নির্দেশিত পথে আমল করা ও তাঁর রুহানি দয়াই একমাত্র অবলম্বন। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) এমনি একজন মহামানব, যিনি রাসুল প্রেমিকগণকে ‘আশেকে রাসুল’ উপাধি দান করেছেন এবং বিশ্বের আশেকে রাসুলগণকে নিয়ে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’ আয়োজন করেছেন।

পৃথিবীর ইতিহাসে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) এমনি একজন মহামানব যাঁর লিখিত ১৫টি গ্রন্থ রয়েছে এবং প্রতিটি গ্রন্থ তাসাউফ বিজ্ঞানের অমূল্য সম্পদ। ১। তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ১ থেকে ৮ খণ্ড, ২। স্রষ্টার স্বরূপ উদ্ঘাটনে সূফী সম্রাট: আল্লাহকে সত্যিই দেখা যায় না?, ৩। বিশ্বনবীর স্বরূপ উদ্ঘাটনে সূফী সম্রাট: রাসুল (সঃ) সত্যিই কি গরীব ছিলেন?, ৪। ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমেদ (রহঃ) (জীবনীগ্রন্থ), ৫। এজিদের চক্রান্তে মোহাম্মদী ইসলাম, ৬। সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধর্মীয় সংস্কার-১ম ও ২য় খণ্ড, ৭। সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী অবদান: আল্লাহ্ কোন পথে? ৮। আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ পথ, ৯। মুক্তি কোন পথে?, ১০। শান্তি কোন পথে?, ১১। ফেরকা সমস্যার সমাধান, ১২। ঈদ সমস্যার সমাধান, ১৩। সন্তানের প্রতি মায়ের অধিকার, ১৪। কবর ও মাজার সম্পর্কে ইসলামের বিধান, ১৫। মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফা। তিনি মাসিক ‘আত্মার বাণী’ (প্রথম প্রকাশ ১৯৮১ খ্রি.), সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ (১৯৮৯খ্রি.), দৈনিক ইনসানিয়াত (১৯৯১ খ্রি.), ইংরেজি সাপ্তাহিক ডববশষু ঞযব গবংংধমব (১৯৯২ খ্রি.) পত্রিকাগুলো এ দরবার শরীফ হতে প্রকাশ করেন। মানবতার উন্নয়নে তাঁর প্রকাশনাসমূহ মাইলফলক। আশেকে রাসুলগণের জন্য তিনি যে মিলাদ শরীফ প্রদান করেছেন, আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশেকে রাসুলগণ সেই বাংলা মিলাদ শরীফকে তাদের নিজ নিজ ভাষায় অনুবাদ করে পাঠ করেন। দুর্যোগে, প্লাবনে কিংবা মহামারিতে মানুষের সেবায় সূফী সম্রাটের ভূমিকা সর্বদাই লক্ষ্যণীয়। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যায় কিংবা কোভিড-১৯ মহামারিতে দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ তারই প্রকাশ। মানবতার উন্নয়নে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর অবদান অনাদিকাল ধরে অমলিন থাকবে। মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের স্বরূপ জগদ্বাসীর নিকট প্রকাশ করে তিনি মানব সভ্যতার গতি পথকে সঠিক ধারায় নিয়ে এসেছেন। শত চক্রান্তেও তা আর কলুষিত করা অসম্ভব।

আশেকে রাসুলগণের মহান মোর্শেদ ও হৃদয়ের স্পন্দন সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের সর্বাবস্থায় আশেকে রাসুলগণ সমর্পিত। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি দয়াময় আল্লাহ্ ও তাঁর হাবিব হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রকৃত পরিচয় জগতের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একজন যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব হওয়ার কারণেই চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামকে বিশ্বময় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) ২০২০ সালের ২৮শে ডিসেম্বর, সোমবার ওফাত লাভ করেন। তিনি ওফাতের পূর্বে সঠিকভাবে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার জন্য ২৭ শে ডিসেম্বর ২০২০ইং, রবিবার উপস্থিত ৪ পুত্র, ২ কন্যা, তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্রবধু ও খাদেমদের সম্মুখে কতিপয় নির্দেশনামূলক অছিয়ত করেন। তিনি অছিয়তে স্পষ্ট ঘোষণা দেন, “আমি মেজো হুজুরকে (ইমাম প্রফেসর ড. আরসাম কুদরত এ খোদা) মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়েছি। আর তোমরা ৩ ভাই ও ২ বোন তাঁকে সহযোগিতা করবে।” মুক্তি পেতে হলে দিলের অন্ধত্ব দূর করে নিঃসংকোচচিত্তে সূফী সম্রাটের শিক্ষা ও নির্দেশ গ্রহণ করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, “যে ইহকালে অন্ধ রইলো, সে পরকালেও অন্ধ থাকবে এবং সে পথভ্রষ্ট।” (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭: আয়াত ৭২) মহান মোর্শেদের উপস্থিতিতেই মেজো সাহেবজাদা ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর দেওয়ানবাগ শরীফের সকল কার্যক্রমে মোর্শেদের ইচ্ছানুযায়ী সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করছেন, তিনি ছিলেন সমস্যার ফয়সালাকারী। মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর ‘মানবতার উন্নয়ন দর্শন’ বিশ্বময় পৌঁছে দিচ্ছেন এবং তাঁর শুভ জন্মদিন স্মরণে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’। এই সম্মেলন আমাদের শান্তি ও মুক্তির অসিলা।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *