বিপন্ন নারীদের নিয়ে অপূর্বার পরিকল্পনা

বিপন্ন নারীদের নিয়ে অপূর্বার পরিকল্পনা

রুমেল খান: ‘নারীরা হয়েছে বঞ্চিত/নিজের প্রতিভার বিকাশ ও আত্মপ্রকাশ করতে/সময় হয়েছে এবার/স্বনির্ভরশীল নারীকে তার পূর্ণ মর্যাদা দিতে/তার মেধা ও শ্রমকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে/তবেই এদেশ পাবে জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন পেতে।’
দুঃখজনক বিষয় হলো, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে গেলেও নারী অধিকারের ক্ষেত্রে খুব বেশি এগোতে পারেনি। আজও, এখনো সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরেই নারীরা হচ্ছেন নিগৃহীত, নিপীড়িত। তবে এই দৃশ্যপট বদলে দিতে চান এক সংগ্রামী নারী, তিনি ফাতিহা নিগার অপূর্বা।
আজ থেকে ৬ বছর আগেই তিনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করেছিলেন রেডিও জকি হিসেবে নিজস্ব আইডিয়া নিয়ে একটি শো করবেন। ইতোমধ্যেই সেই উপলক্ষ্যে কাজ চলছে। বিষয়বস্তু হচ্ছে নারীদের আত্মহত্যাপ্রবণতা থেকে ফিরিয়ে আনা। পাশাপাশি যেসব নারী কর্মক্ষেত্রে নির্যাতিত, যারা চাকরি হারানোর ভয়ে এসব কাউকে বলতে পারেন না, তাদেরও (নাম-পরিচয়-স্থান গোপন করে) সহায়তা করা।

প্রশ্ন হচ্ছে, ওইসব নারী কিভাবে অপূর্বার এই উদ্যোগের কথা জানবে? ‘প্রথমে রেডিওতে, পরে টিভি চ্যানেলে ঘোষণা দিয়ে দেব। তা হলে অনেক নারীর কাছেই সেই বার্তাটা পৌঁছে যাবে। একজন জানলে তার মাধ্যমে অন্যজনও নিশ্চয়ই জানবে। তারা কেবল আমার শোতে এসে তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা শোনাবে না, তাদের সমস্যা সমাধানে তাদের সব রকম সহায়তা দেওয়া হবে।’ জনকণ্ঠকে জানান অপূর্বা।
এই শোর মাধ্যমে নির্যাতিত নারীদের যেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়, ভালো উকিলের মাধ্যমে যেন তারা আইনি সহায়তা পান, দরকার হলে স্পন্সরের মাধ্যমে তারা যেন আর্থিক সহায়তাও পান; সেগুলোই নিশ্চিত করা হবে এই শোর মাধ্যমে। এমনটাই জানান অপূর্বা। আরও যোগ করেন, ‘যারা ঢাকার বাইরের বাসিন্দা এবং দূরত্বের কারণে শোতে আসতে পারবেন না, তাদের চিঠি, ই-মেইল, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ বা মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যেই অপূর্বাকে আইনি বিষয়ে সহায়তা করার আশ^াস দিয়েছেন অভিনেত্রী সারা যাকের এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা অনেক চিকিৎসক। এছাড়া এই শোতে সমাজের অনেক প্রতিষ্ঠিত ও সেলিব্রেটিরাও অতিথি হয়ে আসবেন (ইতোমধ্যেই এমন অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে এবং তারা শোতে আসতে আগ্রহী)।
তারা তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা হতাশা-দুর্ঘটনা-সমস্যা থেকে উত্তরণের অভিজ্ঞতা বলবেন, যেন সেগুলো শুনে অন্যরা প্রেরণা লাভ করতে পারে। অপূর্বা আশা করেন আগামী বছর থেকেই শোটি শুরু করতে পারবেন।

অপূর্বা অনার্স পড়ছেন দ্বিতীয় বর্ষে। জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তবে গ্রামের বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জ। বাবা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অডিট অফিসার হিসেবে চাকরি করতেন। মারা গেছেন ২০১০ সালে। মা একটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। ছোট ভাই ব্যবসায়ী।
স্কুলে পড়ার সময় অপূর্বা স্কাউটিং, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা, নৃত্য পরিবেশন, গান গাওয়া; কলেজ জীবনে পত্রপত্রিকায় ফ্রি ল্যান্সার হিসেবে লেখালেখি, একটি টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম প্রেজেন্টেশন করা, জাতীয় পর্যায়ে নিয়মিত দাবা খেলা, মডেলিং এবং বিশ^বিদ্যালয় জীবনে একটি রেডিও অফিসে রেডিও জকিগিরি ও একটি টিভি চ্যানেলে সহকারী পরিচালকের কাজ করছেন।
মাকে সাংবাদিকতা-লেখালেখি করতে দেখে অপূর্বাও লেখালেখিতে আগ্রহী হন, ২০১০ সালে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, একটি জাতীয় পাক্ষিক ক্রীড়া ম্যাগাজিনে লিখেছেন মুক্ত লেখক হিসেবে। একটি মাসিক ম্যাগাজিনে সাংবাদিক হিসেবে, একটি পত্রিকায় ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি এবং একটি অনলাইন পোর্টালে সাব-এডিটর হিসেবেও কাজ করেছেন।

একসময় পরিচালক হিসেবে সংগ্রামী-সফল নারীদের নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন অপূর্বা। এমন কিছু বানাতে চান, যেটা দেখে সমাজের সব নারী বাঁচতে, লড়াই করতে, সফল হতে শিখবেন, উজ্জীবিত হবেন।
তবে পরিচালনায় আসার ব্যাপারে প্রথম নিজ পরিবার থেকেই বাধা পান অর্পূবা। সেখানেও তীব্র লড়াই করে জয়ী হতে হয়েছে তাকে। বাধ্য হয়ে স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজ খরচে, অনেক স্ট্রাগল করে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া সাবজেক্ট নিয়ে। স্টামফোর্ডের চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ এবং একই প্রতিষ্ঠানের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়ার বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর ফেরদৌস আলম সিদ্দিকী এ ব্যাপারে অপূর্বাকে অনেক উৎসাহ-সহযোগিতা করছেন। তাদের কারণেই এখন নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটছেন অপূর্বা।

২০১৫ থেকেই অপূর্বা বিভিন্ন মিডিয়ায় কাজ করে এখন একটি টিভিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত। কাজ করছেন বিভিন্ন নাটকে, মেগা সিরিয়ালে ও রিয়েলিটি শোতে। এ রকম সৃষ্টিশীল ও চ্যালেঞ্জিং কাজ করাটা অনেক উপভোগ করছেন।
কর্মক্ষেত্রে অপূর্বা নিজেও বেশ ক’বার ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। সেই তিনিই অসহায়-নির্যাতিত-নিপীড়িত এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চাওয়া নারীদের সহায়তা করতে এখন স্বপ্ন দেখেন। এখন সেই স্বপ্নের পথেই হাঁটছেন। খুব শিগগিরই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলে নারী উন্নয়নের মাধ্যমে পুরো সমাজ ব্যবস্থাটার অনেকটাই বদলে যাবে।
জনকণ্ঠ থেকে সংকলিত

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *