রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চীনা মুদ্রায়

রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চীনা মুদ্রায়

বাণিজ্য ডেস্ক: রাশিয়ার সঙ্গে বিকল্প মুদ্রায় বাণিজ্য করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন এই বাণিজ্যিক লেনদেনে কোন মুদ্রা ব্যবহৃত হবে তার মডালিটিজ চূড়ান্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব তৈরি করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর বাণিজ্যিক লেনদেনের ওই প্রস্তাব চূড়ান্ত করার বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে ইআরডি। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরকারি সূত্রগুলো আরও জানায়, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের বিষয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে সবুজ সংকেত মিলেছে। বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তত দুটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে স্বল্প সময়ের মধ্যে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি, খাদ্যশস্য ও সার আমদানির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় পড়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। সারা বিশ্বেই খাদ্য সংকটের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। উপরন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা ডলারের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ দিতে না পারায় দেশের শিল্প-কারখানাগুলোর উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। এখন শঙ্কা তৈরি হয়েছে সার ও খাদ্য আমদানি নিয়ে। এ অবস্থায় রাশিয়ার সঙ্গে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করে কীভাবে খাদ্য ও সার আমদানি করা যায় সে বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণের লক্ষ্যে একটি ইলেকট্রনিক ট্রেডিং প্ল্যাটফরম গঠনের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে একটি সভা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। রাশিয়ার সঙ্গে বিকল্প মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য পরিচালনার বিষয়ে ওই সভাতেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনের বিকল্প মাধ্যম নিয়ে অনেক দিন থেকেই আলোচনা হচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) আবদুর রহিম খান জানান, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতি, বার্টার ট্রেড, ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহারসহ বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতির বিষয়ে সম্মত হয়নি কেউ। কারণ, ডলার বা অন্য কোনো হার্ড কারেন্সিকে (প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রাসমূহ) এড়িয়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার নিজ নিজ মুদ্রায় ‘কারেন্সি সোয়াপ’ করার মতো সক্ষমতা তৈরি হয়নি। এ ছাড়া আমদানি করার মতো যথেষ্ট রুবলও নেই বাংলাদেশের কাছে। সে কারণে তৃতীয় কোনো দেশের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন করার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। তৃতীয় দেশের মুদ্রাটি কি চায়নিজ মুদ্রা হওয়ার সম্ভাবনা আছে-এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা জানান, খাদ্যশস্য ও সার আমদানিতে বিকল্প মুদ্রা হিসেবে চায়নিজ মুদ্রা ইউয়ান ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বিকল্প মুদ্রা হিসেবে কোন মুদ্রা ব্যবহৃত হবে তার মডালিটিজ চূড়ান্ত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি চীনের মুদ্রা ইউয়ানে অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে ডলারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রাঝুড়িতে ইউয়ান মজুদের পরিমাণ বাড়বে। আবার ইউয়ানে অ্যাকাউন্ট খোলার কারণে সুইফট-এর বিকল্প হিসেবে চায়নিজ লেনদেনের নেটওয়ার্ক ক্রসবর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম বা সিআইপিএস-এ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর। রাশিয়ার ব্যাংকগুলো আগে থেকেই চীনের এই বিকল্প মাধ্যমে বাণিজ্যিক লেনদেন করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমার বিকল্প মুদ্রা ইউয়ান ব্যবহার করে রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির ঘোষণা দিয়েছে। এমন কি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতও ইউয়ান ব্যবহার করে রাশিয়ার কাছ থেকে কয়লা আমদানি করছে। ফলে রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত সার বা খাদ্যমূল্য পরিশোধে তৃতীয় কোনো দেশের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের ক্ষেত্রে চায়নিজ মুদ্রা ইউয়ান ব্যবহারের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *