শস্য রপ্তানি করবে ইউক্রেন
দেওয়ানবাগ ডেস্ক: দরিদ্র, দুর্ভিক্ষ ও খরার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোয় শস্য রপ্তানি করবে ইউক্রেন। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাজধানী কিয়েভে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে এ–সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি জানান, ১৫ কোটি ডলারের শস্য রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর দেশের। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।
জেলেনস্কি বলেন, এ উদ্যোগের নাম ‘গ্রেইন ফ্রম ইউক্রেন’। দেশটিতে রুশ হামলা শুরুর পর বিশ্বজুড়ে খাদ্য সরবরাহে যে অনিশ্চয়তা ও সংকট দেখা দিয়েছে, তা নিরসনের প্রতিশ্রæতি পূরণে ইউক্রেন থেকে এসব শস্য রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলেনস্কি আরও জানান, ইতিমধ্যে সুদান, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিন সুদান, ইয়েমেনের মতো ২০টির বেশি দেশের কাছ থেকে ১৫ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে ইউক্রেন। এখন ইউক্রেন থেকে এসব দেশে শস্য পৌঁছে দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে দুর্ভিক্ষ ও খরার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোয় শস্যবাহী ৬০টি জাহাজ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছি।’
কিয়েভের সম্মেলনে জেলেনস্কি ছাড়াও হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট কাতালিন নোভাক, বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্দার দ্য ক্রোর, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতিউজ মোরাউইস্কি, লিথুয়ানিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইনগ্রিদা সিমন্তি উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলৎজ, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন দের লিয়েন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইউক্রেন থেকে ইয়েমেন ও সুদানে শস্য পৌঁছে দিতে পরিবহন ও বিতরণ ব্যয় বাবদ ৬২ লাখ ৪০ হাজার ডলার দেবে তাঁর সরকার। তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর যুদ্ধের মূল্য চোকানো উচিত হবে না। তারা তা চায়ও না।’ এ কাজে দেড় কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে জার্মানি। বেলজিয়াম দেবে ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের আর্থিক সহায়তা।
সম্মেলন শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ফেব্রæয়ারি রুশ হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ কোটি টন কম কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে পেরেছে ইউক্রেন। এর ফলে বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষ খাবারের সংকটে পড়েছে। ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে শস্য রপ্তানিতে রাশিয়ার বাধা এই সংকটের কারণ। বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে চলমান খাদ্যসংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব হবে।
সাবেক সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিনের আমলে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে ইউক্রেনসহ ইউরোপের লাখো মানুষ প্রাণ হারান। ওই দুর্ভিক্ষ শুরুর ৯০তম বার্ষিকীতে কিয়েভে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি চালু রাখার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতিসংঘ ও তুরস্ক। তাদের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি করেছিল কিয়েভ ও মস্কো। তবে রাশিয়ার দাবি, এই চুক্তির আওতায় ইউক্রেন থেকে রপ্তানি হওয়া শস্য দরিদ্র ও ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো পাচ্ছে না। ইউরোপের উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো এতে লাভবান হচ্ছে।
ইউক্রেনজুড়ে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে রুশ বাহিনীর লড়াই অব্যাহত রয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের খেরসনে গত দুই সপ্তাহে গোলাবর্ষণে অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সময় গতকাল জানিয়েছে ইউক্রেনের পুলিশ।