মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- “পাঠ করো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করো, তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত, যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে। যা সে জানত না।” (সূরা আল ‘আলাক্ব ৯৬: আয়াত ১ থেকে ৫)
আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- ত্বালাবুল ‘ইলমি ফারীদ্বাতুন ‘আলা কুল্লি মুসলিম। অর্থাৎ- এলেম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের (নর ও নারী) উপর ফরজ।” (ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৪)
এভাবেই পরম করুণাময় আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) কর্তৃক আল্লাহ প্রাপ্তির ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করা ফরজ করা হয়েছে, যা কেবলমাত্র খাঁটি অলী-আল্লাহর সহবতে অর্জন করা যায়। অথচ এ শিক্ষা অর্জনের জন্য আমাদের সমাজে কিতাবনির্ভর মাদরাসা শিক্ষার দারস্থ হতে দেখা যায়। উপরন্ত আমাদের সমাজে ধর্মীয় শিক্ষা অনেকের নিকট অত্যন্ত অবহেলিত। দেখা যায়, পিতামাতা তাদের সন্তানের মধ্যে যে মেধাবী, পরীক্ষায় ভালো ফল লাভের আশা রাখে, এরূপ সন্তানকে সাধারণ শিক্ষায় বা পেশাগত শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত করার চেষ্টা করেন। যেমন তাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ইত্যাদি বানানোর উদ্দেশ্যে স্বনামধন্য স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করেন। তার পেছনে যথাসাধ্য অর্থ, শ্রম ও সময় ব্যয় করেন। এমনকি পরীক্ষায় ভালো ফল নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে উপযুক্ত গৃহশিক্ষকও নিয়োগ করেন। পক্ষান্তরে যে সন্তানটি স্বল্প মেধাবী, পরীক্ষায় ভালো ফল লাভের আশা ক্ষীণ, শারীরিক দিক দিয়ে দুর্বল ও তেমন কর্মক্ষম নয়, অর্থাৎ যার পেশাগত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে সম্মানজনক পদ লাভে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা আছে, এরূপ সন্তানকে সাধারণত ধর্মীয় শিক্ষা লাভের জন্য মাদরাসায় ভর্তি করা হয়। অথচ আল্লাহ বলেন- “তোমরা কখনো পূণ্য লাভ করবে না, যে পর্যন্ত না নিজেদের প্রিয় বস্তু থেকে ব্যয় করবে। আর যা কিছুই তোমরা ব্যয় করো, আল্লাহ তা খুব ভালো জানেন।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৯২)
মহান রাব্বুল আলামিনের এ বাণী মোবারকে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এ মর্মে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, তোমরা আল্লাহর পথে তোমার প্রিয় জিনিস উৎসর্গ করো। আর ধর্মীয় শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে জানা, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা। সুতরাং এ লক্ষ্যে একজন পিতা হিসেবে তার সবচেয়ে মেধাবী সন্তানটিকেই উৎসর্গ করা ঈমানের দাবি।
অনুরূপভাবে বাস্তব দুনিয়ায় মহিমান্বিত আল্লাহ এ নিয়ম চালু রেখেছেন, মানুষ যে বৃক্ষের চারা কিংবা বীজ রোপন করে, সে ফল হিসেবে ঐ বৃক্ষেরই ফল পেয়ে থাকে। সুতরাং পরিবারের সবচেয়ে অবহেলিত সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করে, একজন সুযোগ্য আলেম আশা করা যায় না। দেখা যায়, মাদরাসায় লেখাপড়া করা সন্তানটি এতই অবহেলিত যে, তার জন্য কোনো গৃহশিক্ষক নিয়োগ করা তো দূরের কথা, তার লেখাপড়ার প্রতি পিতামাতা অনেক ক্ষেত্রে যত্নবান হন না।
মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে থেকে অনেক দরিদ্র সন্তান দুঃখ-কষ্টে কোনো রকমে তার শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে। এছাড়াও ইংরেজি ও কারিগরি বিদ্যা শিক্ষা করলে সন্তানের চাকরি লাভ এবং অর্থ উপার্জন সহজ হবে মনে করে অনেক পিতামাতা সন্তানের জন্য মাদরাসার শিক্ষার প্রতি অনীহা পোষণ করেন। এসব থেকেই প্রমাণিত হয়, সাধারণভাবে আমাদের সমাজে মাদরাসাভিত্তিক ধর্র্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব মানুষের নিকট অবহেলিত।