নারী ডেস্ক: দেশের ১ কোটি গ্রামীণ নারীকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা দিয়ে ক্ষমতায়িত করছে ‘তথ্য আপা’। এটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প: যা জাতীয় মহিলা সংস্থা বাস্তবায়ন করছে। দেশের ৪৯২টি উপজেলার প্রত্যেকটিতে এ প্রকল্পের আওতায় একটি করে তথ্যকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে এক জন তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও দুই জন সহকারী রয়েছেন। এরাই প্রকল্প এলাকায় ‘তথ্য আপা’ হিসেবে পরিচিত।
তথ্যআপারা তথ্যকেন্দ্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, উপজেলার সরকারি সেবাগুলোর সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, ভিডিও কনফারেন্স, ই-লার্নিং, ই-কমার্স ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের সহায়তা করে আসছে। এছাড়া তথ্যআপারা ল্যাপটপ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকাধীন গ্রামবাসীর বাড়িতে গিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, ব্যবসা, জেন্ডার এবং কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন তথ্যসেবা দিচ্ছেন।
সারা দেশে প্রকল্পটির মোট জনবল ২ হাজার ৪৮৪ জন। এর প্রধান কার্যালয়ে ২৪ জন এবং ৪৯২টি তথ্যকেন্দ্রে ২ হাজার ৪৬০ জন কাজ করছেন। সরকারি এই প্রকল্পের ব্যয় ৫৮৫ কোটি ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। প্রকল্পের প্রধান কার্যালয় রাজধানী ঢাকায়।
প্রতিটি তথ্যকেন্দ্রে নিয়োজিত তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও তথ্যসেবা সহকারীরা সংশ্লিষ্ট উপজেলার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, ব্যবসা, জেন্ডার এবং কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন এবং স্কাইপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে সেবাগ্রহীতার কথোপকথনের মাধ্যমে সমস্যার দ্রুত ও কার্যকরী সমাধান করে থাকেন। প্রত্যন্ত ও দুর্গম স্থানে তথ্য আপা উঠান বৈঠক, মুক্ত আলোচনা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে তথ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি সেবাগ্রহীতাদের জন্য উঠান বৈঠক আয়োজন করে গ্রামীণ তৃণমূল মহিলাদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। প্রতিটি উঠান বৈঠকে ৫০ জন গ্রামীণ মহিলা অংশগ্রহণ করেন। মাসে প্রতিটি তথ্যকেন্দ্রে দুটি করে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামীণ মহিলাদের জীবন ও জীবিকা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় যেমন: স্বাস্থ্যগত সমস্যা, বাল্যবিবাহ, ফতোয়া, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, আইনগত সমস্যা এবং ডিজিটাল সেবাগুলোর নানা দিক (ই-মেইল, ভিডিও কনফারেন্স) সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। ২০২১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত মোট ১৩ হাজার ৪৪৪টি উঠান বৈঠকে ৬ লাখ ১২ হাজার ৯০০ জন সেবাগ্রহীতাকে সেবা দেওয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যআপা প্রকল্পের পরিচালক কেয়া খান বলেন, ‘১ কোটি ৫ লাখ নারীকে সহায়তা দিয়েছে ‘তথ্য আপা’। অনলাইনে নারীদের চাকরির ফরম পূরণ করতে, ভর্তির ফরম, জন্মনিবন্ধন ফরম পূরণ করতে সাহায্য করছেন তারা। এ ছাড়া করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশন করার বিষয়ে সাহায্য করা হয়েছে। গ্রামীণ নারীদের ছয়টি ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে পরামর্শ দেওয়া হয়। ওজন মাপা, উচ্চ রক্তচাপ ও অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে দেন তথ্যআপারা। একটি লালসবুজ ডটকম নামে ওয়েবসাইট আছে যেখানে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য আপলোড করে বিক্রিতে সহায়তাও করা হচ্ছে।’
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছাড়া নারীর উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে নারীকে পিছিয়ে থাকলে চলবে না। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে তথ্যপ্রযুক্তিতে অনগ্রসর রেখে বাংলাদেশে উন্নত রাষ্ট্র হতে পারবে না এবং নারীর সামগ্রিক ক্ষমতায়নও সম্ভব নয়। তাই তৃণমূল নারীদের মধ্যে তথ্য সেবা পৌঁছে দিচ্ছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকল্প তথ্য আপা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ১ কোটি গ্রামীণ মহিলাদের তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে এবং তাদের দৈনন্দিন নানা সমস্যার সমাধানে সাহায্য করা হচ্ছে।