কৃষি সংবাদদাতা: মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে বারোমাসি ফল কানিয়া জাতের তরমুজ চাষে সফল হয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সামসুল হক নামে এক কৃষক। উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তায় ১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেন। এই তরমুজ চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। স্বাদেও বেশ মিষ্টি। মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে এই তরমুজের ক্ষেত দেখতে প্রতিদিনই ভীড় করছেন অসংখ্য আশপাশের এলাকার কৃষক ও উৎসুক লোকজন। তার চাষ করা তরমুজ স্বাদে বেশ মিষ্টি। তিনি ইতিপূর্বে ব্রকলি, স্কোয়াশ, রকমেলন, গোল্ডেন ক্রাউন (হলুদ তরমুজ), সাম্মাম চাষ করে এলাকায় আলোচিত হয়েছিলেন। তিনি মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের ভূবনঘর গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে ও ভূবনঘর মর্ডান এগ্রোফার্ম এর সত্ত্বাধিকারী কৃষক সামসুল হক সামসু।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুটি ভাগে ভাগ করে তরমুজের চারা লাগনো আছে। পুরোজমিতে বাশের খুঁটির ওপরে জাল বিছিয়ে মাচা তৈরি করা হয়েছে। এতে তরমুজ গাছের লতা বেড়ে উঠেছে। পুরো মাচা গাছে ছেয়ে আছে। মাচার মধ্যে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে আছে বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন সাইজের বাহারি তরমুজ। চাষি সামসু একটি একটি করে তরমুজ কাটছেন, আর ঝুড়িতে তুলছেন। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা জমি থেকে তরমুজ কিনে নিচ্ছেন।
জেলার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাজার থেকে আসা পাইকারি ক্রেতা আবদুল ওহাব বলেন, ‘খবর পেয়ে এসেছি। জমিতে বিভিন্ন আকারের তরমুজ, দামে ভিন্নতা আছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন তিন থেকে চার কেজি। কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে কিনেছি। এগুলো ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।’
আলাপকালে কৃষক সামসুল হক জানান, “বেশ কয়েক বছর ধরে ঝিঙ্গা, লাউ, মূলা, টমেটো, ব্রকলি, বাধাঁ কপি ও ফুলকপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছি। গত বছর ব্রকলি, স্কোয়াশ, হলুদ তরমুজ, রকমেলন, মরুর দেশের ফল সাম্মাম ও বারমাসি তরমুজ চাষ করেও ভালো সফলতা পেয়েছি। এবারসহ ৩ বছর থেকে আমি কানিয়া, ম্যাজিকবয় ও হানিডিও জাতের তরমুজ চাষ করছি। প্রথম বছর লোকসান হলেও পরবর্তী বছর থেকে খুবই লাভ হচ্ছে। ইউটিউবে দেখে আমি তরমুজ চাষে আগ্রহী হই। এরপর বীজ সংগ্রহ করে এক বিঘা ধানি জমি তরমুজ চাষের জন্য প্রস্তুত করি। পরে তরমুজের বীজ বপন করি। তরমুজের চারা বড় হলে সেগুলো বাঁশ দিয়ে তৈরি মাচায় ছড়ানো হয়। এরপর প্রথমে ফুল আসে। পরে ক্রমান্বয়ে বেরিয়ে আসে সবুজ, হলুদ ও কালো রঙের তরমুজ। দুইমাসের মধ্যে তরমুজ পরিপক্ব হয়।” ১ বিঘা জমিতে তার খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত তিনি বিক্রি করেছেন দেড় লক্ষ টাকা।
মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইনউদ্দিন আহম্মেদ জানান, “সামসুল হক সামসু এই উপজেলায় প্রথমবারের মতো কানিয়া, ম্যাজিকবয় ও হানিডিও প্রজাতির তরমুজ চাষ করছেন। কানিয়া জাতের তরমুজের চাষ বারো মাস হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা দমন প্রক্রিয়াসহ সবধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। কৃষক সামসুল হকের পরিশ্রমে তরমুজ চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। আশা করি কৃষক সামসুল হককে দেখে অন্য কৃষকরাও এ সবজি চাষে ঝুঁকবে। ফলন দেখে ভালো লাগছে। কম সময়ে তরমুজ চাষে কৃষকরা ভালো লাভ করতে পারবেন। তাই এই প্রজাতির তরমুজ চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে এবং কোনো কৃষক আগ্রহী হয়ে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে চান তাহলে তাকে মুরাদনগর উপজেলা কৃষি অফিস সবধরনের কারিগরী সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হবে।”