দেওয়ানবাগ ডেস্ক: করোনা মহামারি, সংঘর্ষ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০১৯ সালের পর বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে সাড়ে ৩৪ কোটি ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্যসহায়তা-সংক্রান্ত শাখা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) গত বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে।
ডব্লিউএফপির আঞ্চলিক পরিচালক করিন ফ্লেশার বলেন, করোনা মহামারি শুরুর আগে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ছিল সাড়ে ১৩ কোটি। এরপর এ সংখ্যা বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘর্ষের ফলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
পরিবেশগত সমস্যার প্রভাবে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা খাদ্যঘাটতি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এছাড়া জলবায়ু সংকটের ফলে আরও সংঘাত ও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির ঘটনাও ঘটতে পারে।
ফ্লেশার বলেন, ‘বিশ্বের এই চাপ বহনের সামর্থ্য নেই। জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘর্ষের ফলে আমরা বিশ্বজুড়ে ১০ গুণের বেশি বাস্তুচ্যুতি দেখছি। জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘর্ষের মধ্যে আন্তসম্পর্ক রয়েছে। আমরা তাই করোনা, জলবায়ু পরিবর্তন ও ইউক্রেন যুদ্ধের যৌথ প্রভাব নিয়ে উদ্বেগে রয়েছি।’
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চল খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল। কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে আসা খাদ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় এ অঞ্চলের মানুষগুলোকে। ফ্লেশার বলেন, ইউক্রেন-সংকটের ব্যাপক প্রভাব মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় পড়তে দেখা গেছে। ইয়েমেন প্রয়োজনীয় খাদ্যের ৯০ শতাংশ আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ আমদানি হয় কৃষ্ণসাগর দিয়ে।
ইউক্রেনে হামলা শুরুতেই কৃষ্ণসাগরের কয়েকটি বন্দর দখলে নেয় রুশ সেনারা। এসব বন্দর দিয়ে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। গত মাসে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে খাদ্যশস্য রপ্তানি বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ডব্লিউএফপির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যসহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু ডব্লিউএফপির পক্ষে কেবল ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে তারা যে সহায়তা দেয়, তাতে একজন মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার অর্ধেক পূরণ করা সম্ভব। এর পেছনে তহবিলের স্বল্পতার কথা বলেছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি।
করোনা মহামারির পর জিনিসপত্রের দাম ৪৫ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দাতারাও বিশাল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ইরাকের মতো তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে লাভবান হলেও খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে। ফ্লেশার বলেন, ইরাকের বছরে ৫২ লাখ টন গমের প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে মাত্র ২৩ লাখ টন উৎপন্ন হয়। বাকি গম আমদানি করতে তাদের ব্যাপক খরচ করতে হয়। রাষ্ট্রীয় সহায়তা থাকলেও খরা, পানিস্বল্পতার কারণে ইরাকজুড়ে ক্ষুদ্র কৃষকদের জীবিকা বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।