বাণিজ্য ডেস্ক: রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে বাড়বে আমদানি-রপ্তানি। কমবে খাদ্যপণ্যের দাম। বাড়বে রপ্তানি আয়। এ নিয়ে একটি ‘অনলাইন প্ল্যাটফরম’ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে সরকার। ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ পর সুইফট পেমেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একমত হন পশ্চিমারা। ওই সময় দেশটির সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কঠিন হওয়ার পর বাংলাদেশকে অনলাইন প্ল্যাটফরমে বাণিজ্য চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল রাশিয়া। অনেক দেরিতে হলেও দেশটির সেই প্রস্তাবে আমলে নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শের পর প্ল্যাটফরম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্ল্যাটফরমটি চালুর আগে একটি আন্তসীমান্ত বাণিজ্য নীতি তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন সবাই। ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফরমে বাণিজ্য শুরু হলে রাশিয়া থেকে গম, ভুট্টা ও সূর্যমুখী আমদানি বাড়বে। এতে দেশে সরবরাহ বাড়লে খাদ্যপণ্যের দাম কমবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে বাড়বে রপ্তানি আয়ও। হিমায়িত খাদ্য, নিটওয়্যার, পাটজাত পণ্য, চিংড়িসহ বিভিন্ন পণ্য রাশিয়ায় রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের কারণে মিনিস্ট্রি অব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অব রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রণয়ন করা দ্বিপক্ষীয় ‘রোডম্যাপ-২০২২-২০২৫’-এর অধীনে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বিকাশের জন্য প্ল্যাটফরমটি প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার। রোডম্যাপের লক্ষ্য ইলেকট্রনিক ট্রেডিং প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতা বা সরবরাহকারীদের সন্ধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট সেবাগুলো যুক্ত করা। এই অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফরম কম্পিউটার সফ্টওয়্যার প্রোগ্রাম। যা আর্থিক মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পণ্যের অর্ডার দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন পণ্য মধ্যস্থতার সঙ্গে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বা সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের বা ট্রেডিং প্ল্যাটফরমের সদস্যদের মধ্যে লেনদেন করা যায়। এতে স্টক, বন্ড, কারেন্সি, কমোডিটি এবং অন্যান্য পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয়। ব্যাংক, বাজার, স্টক একচেঞ্জ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। এই প্ল্যাটফরমে যে কোনো স্থান থেকে ব্যবহারকারীরা অনলাইন চ্যাটিং এবং টেলিফোনে ট্রেডিং করতে পারেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে এর আগে সই করা বাংলাদেশ-রাশিয়া আন্তসরকারি কমিশন অন ট্রেড, ইকোনমিক, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন (বিআর-আইজিসি) প্রোটোকলের আওতায় একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে রাশিয়া সরকার। এর আগে, রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিষয়ে ২৯টি খাত চিহ্নিতসহ রোডম্যাপ তৈরি করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।
রোডম্যাপ অনুসারে ইলেকট্রনিক ট্রেডিং প্যাটফরম এবং ব্যবসায়ী সরবরাহকারীদের খুঁজে বের করার জন্য ব্যবহার করা বিশেষ অংশীদার সেবাগুলোর মাধ্যমে রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমের জন্য একটি কর্মসূচি তৈরি করা হবে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সরাসরি ব্যাংকিং লেনদেনে বিভিন্ন জটিলতার কারণে রপ্তানি কাক্সিক্ষত মাত্রায় বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
রাশিয়ার ওপর সুইফট নিষেধাজ্ঞাসহ একাধিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পাওনা আমদানি-রপ্তানি বিল পরিশোধের বিকল্প ব্যবস্থা বের করার চেষ্টা করছে। কারণ একটি অবাধ ও নিরাপদ লেনদেন ব্যবস্থা ছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ায় গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে আমদানি হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য। আমদানি পণ্যের মধ্যে গম, ভুট্টা, সূর্যমুখী ও অন্যান্য খাদ্যশস্য রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৪৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য। একই সময়ে রাশিয়া থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ৭৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য।