গতি পাচ্ছে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প

গতি পাচ্ছে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: ধীরে হলেও অবশেষে গতি পাচ্ছে বাংলাদেশের বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প। বিদ্যুৎ বিভাগের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, বর্তমানে বায়ু থেকে মাত্র ৩ (২.৯) মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। বায়ু থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সরকার এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যার মধ্যে তিনটি বাস্তবায়নাধীন পর্যায়ে রয়েছে। আরও ৫টি পরিকল্পনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। এমনকি উন্নত বিশ্বের মতো সমুদ্রে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা যাচাই করতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমুদ্রে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা যাচাইয়ের সমীক্ষা শুরু করেছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির পক্ষের অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এনার্জিট্র্যাকার এশিয়ার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের মোট ৭২৪ কি.মি. দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চল বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র। এখানে দূষণমুক্ত শক্তিটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানানো হয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, বর্তমানে ৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুুৎ উৎপাদনের কাজ চলমান আছে। এছাড়া আরও ৫টি প্রকল্পের অধীনে ২৩০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন বলেন, বর্তমানে আমাদের বায়ুবিদ্যুতে ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিভিন্ন প্রকল্প নির্মাণাধীন ও পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে ২টি ও মোংলায় ১টি রয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনাধীন অবস্থায় পটুয়াখালী, চাঁদপুরের কচুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় মিলিয়ে বায়ুবিদ্যুতের আরও ৫টি প্রকল্প পর্যায়ক্রমে নির্মাণ পরিকল্পনার মধ্যে আছে। আমরা সমুদ্রেও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য এরই মধ্যে বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সম্ভাবনা যাচাই করতে জরিপ কাজ শুরু করেছি।

ফেনীর সোনাগাজীতে মুহুরী নদীর বাঁধ এলাকায় ২০০৫ সালে বায়ুভিত্তিক দশমিক ৯ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এর তিন বছর পর কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় এক মেগাওয়াট সক্ষমতার আরেকটি বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তদারকি ও আগ্রহের অভাবে বর্তমানে দুটি কেন্দ্রেরই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে দেশের মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের ১০ শতাংশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্যপূরণে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোর মধ্যে কক্সবাজারের খুরুশকূলে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের বৃহত্তম (৬০ মেগাওয়াট) বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প। সম্প্রতি এর প্রথম টারবাইন উত্তোলনের কাজ সফলভাবে শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, ২০২৩ সালের মে থেকে জুন মাসের মধ্যে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। চলতি বছরের ৩১ মার্চ ১১৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের এই বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড নামের চীনা প্রতিষ্ঠান-এসপিআইসি উইলিং পাওয়ার করপোরেশনের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সমুদ্র উপকূলঘেঁষা কক্সবাজারের খুরুশকূল, পিএমখালী, চৌফলদন্ডী ও পোকখালী ইউনিয়নে এখন চলছে উইন্ড টারবাইন বসানোর অপেক্ষা। ১৮ বছর মেয়াদি পরিচালনা চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরকারের কাছে বিক্রি করবে এর নির্মাণকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জে দুই মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে পিডিবি। আসছে ডিসেম্বরে এটি বাণিজ্যিকভাবে চালু হতে পারে। এর পাশাপাশি এ ধরনের আরও বেশ কয়েকটি বড় বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ধারাবাহিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এ ছাড়াও চাঁদপুর সদরে ৫০ মেগাওয়াট ও ফেনীর সোনাগাজীতে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ঠিকাদার নির্বাচন পাইপলাইনে রয়েছে। বাগেরহাটের মোংলায় ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে মোংলা গ্রিন পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে গত মাসে চুক্তি করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। চুক্তি স্বাক্ষরের দুই বছরের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ২০ বছর বিদ্যুৎ কিনবে পিডিবি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যৌথভাবে নির্মাণ করবে চীনের ইনভিশন এনার্জি কোম্পানি লি., বাংলাদেশের এসকিউ ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি. ও হংকংয়ের নিবন্ধিত কোম্পানি ইনভিশন রিনিউয়েবল এনার্জি বাংলাদেশ লি.। এ তিন প্রতিষ্ঠান মিলে মোংলা গ্রিন পাওয়ার লিমিটেড গঠন করেছে। এ কেন্দ্রে আড়াই মেগাওয়াট ক্ষমতার মোট ২২টি টারবাইন থাকবে। নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প এলাকাতে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে টাওয়ার বসিয়ে সেই এলাকার বাতাসের গতিবিধি পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। চীনে এই ডাটা পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সেই ফিজিবিলিটি রিপোর্টের ভিত্তিতে এরই মধ্যে প্রকল্প এলাকায় ৫০ মেগাওয়াটের বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য টারবাইন বসানোর উদ্যোগও নিয়েছে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *