কুমিল্লা সংবাদদাতা: কুমিল্লায় খাদির চরকায় তৈরি হচ্ছে গৌরব আর ঐতিহ্যের ঢাকাই মসলিন। গত প্রায় দুইশ বছরে জাদুঘর ছাড়া এর অস্তিত্ব কোথাও পাওয়া যায়নি। তবে ছয় বছর একদল গবেষক ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে ঢাকাই মসলিন ফিরিয়ে এনেছেন। নানা প্রক্রিয়া শেষে বছর খানেক আগে মসলিনের পুনর্জন্মের খবর সামনে আসে। তবে ঢাকাই মসলিনের এই প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে জড়িয়েছে খাদির জেলা কুমিল্লা। এবার কুমিল্লাতেই খাদির চরকায় তৈরি হচ্ছে মসলিনের সুতো।
মসলিন সংশ্লিষ্টরা জানান, ফুটি কার্পাস তুলা থেকেই তৈরি হয় মসলিনের সুতা। চরকা দিয়ে কাটা, হাতে বোনা মসলিনের জন্য সর্বনিম্ন ৩০০ মেট্রি কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হতো। বলা হয়, একটি আংটির ভেতর দিয়ে অনায়াসে বের করে আনা যায় একটি মসলিন শাড়ি। নানা কারণে ১৮ শতকের দিকে বাংলায় মসলিন কাপড় তৈরি বন্ধ হয়ে যায়।
‘বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার’ প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে কুমিল্লার দুই উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে দুই শতাধিক নারী এই সুতা কাটার কাজ করছেন। এই নারীরা আগে মোটা সুতা কাটার কাজ করতো। তবে মসলিনের পুনরুদ্ধার প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা তাদের এখন মসলিন সুতো তৈরীর মূল উপাদান ফুটি কার্পাস তুলা সরবারহ করছে। সেই তুলা হতেই মিহি সুতো কেটে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানেই বোনা হয় ঐতিহ্যের স্মারক মসলিন শাড়ি।
কুমিল্লার চান্দিনা ও দেবিদ্বার উপজেলা খাদির জন্য প্রসিদ্ধ। খাদির জন্য খ্যাত এই দুই উপজেলার সোনাপুর ও রামপুর গ্রামে নারীরা তৈরী করছেন মসলিনের সুতা। খাদির সুতা কাঁটা হতো যেই চরকায় সেই একই চরকায় তৈরি হচ্ছে মসলিনের মিহি সুতা।
মসলিনের পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় প্রথমে তাত বোর্ড থেকে এই অঞ্চলের ৪০ নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে সেখান হতে ছয়জনকে বাছাই করা হয়। ওই ছয়জন এখন সুপারভাইজার হিসােব কাজ করছেন, তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ শেষে তাদের অধীনেই এখন কাজ করছেন দুই শতাধিক নারী। মসলিনের সুতা তৈরির পুরো কাজটাই করতে হয় খুব যত্নসহকারে। তা না হলে কাঙিক্ষত মানের সুতা পাওয়া যাবে না। প্রতিদিন সকাল হতে দুপুর দুইটা পর্যন্ত এখাকার সুতা উৎপাদন কেন্দ্রে নারীরা সুতা কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। সুপারভাইজারদের একজন নাজমা আক্তার জানান, আমরা আগে মোটা সুতার কাজ করতাম, এরপর ঢাকা থেকে তাঁতবোর্ডের লোক এসে মসলিন সুতা কাঁটা শেখায়। ৪ বছর কাজ করার পর আমাদের সুপারভাইজার বানায়। এরপর আমরা বাকীদের প্রশিক্ষণ দেই। আমাদের তুলা দিলে আমরা সুুতা কেটে দেই। সেই সুতা তাতীদের কাছে দিয়ে শাড়ি বানানো হয়। আসমা নামের এক শ্রমিক জানান, দেড় বাজার এখানে কাজ করছি। এখানে কাজ করে আমাদের সংসারে সচ্ছলতাও এসেছে। রোকসানা নামের আরেক সুপারভাইজার বলেন, আমরা এই কাজ করে ভালো আছি।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের অধীন বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা ও কাপড় তৈরির প্রযুক্তি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আইয়ুব আলী বলেন, আমাদের এখানে বর্তমানে ২২৬ নারী কাজ করছেন। তারা আগে মোটা সুতা কাটত। তাদের আমরা ৩০০-৭০০ মেট্রি কাউন্টের সুতা কাটার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তারা এখন কাজ করছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, আমি আনন্দিত কুমিল্লায় মসলিনের সুতা তৈরি হচ্ছে। মসলিন খুবই উন্নত মানের কাপড়। দেশে ও দেশের বাইরে এর ভালো চাহিদা রয়েছে। এটাকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে যা যা করণীয় সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।