দেওয়ানবাগ ডেস্ক: আড়াই হাজার বছর আগে নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরে অনেক সমৃদ্ধ সভ্যতা ছিল। ধারণা করা হয়, সেটি প্রাচীন সমৃদ্ধ সভ্যতা গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের অংশ ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশ্বের খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসব আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের ইতিহাস বইয়ে স্থান দিয়েছে।
মঙ্গলবার এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘরের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলেছেন অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ হিসেবে ‘পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে ঢাকার গোড়াপত্তনের বিশ্লেষণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণে তা বাতিল করে তিনি ‘উয়ারী-বটেশ্বর: গঙ্গাঋদ্ধির সন্ধানে’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রবন্ধে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ইতিহাসবিদদের প্রকাশনায় উয়ারী-বটেশ্বরে অনেক সমৃদ্ধ সভ্যতার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উয়ারী-বটেশ্বর ছিল গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের অংশ, তা সাম্প্রতিক অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে। আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া উপাত্ত থেকেও তা নিশ্চিত করে বলা যায়। ওই সময়ে সম্ভবত বৃষ্টিপাত কম হতো এবং প্রকৃতি ছিল মরুময়। এসব তথ্য নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। ভবিষ্যতে আমাদের এ ধরনের মরুময় অবস্থার মুখে পড়তে হতে পারে। ফলে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এই শিক্ষক তাঁর প্রবন্ধে বলেন, উয়ারী–বটেশ্বর একটি দুর্গ নগরীও ছিল। সেখানে প্রাচীনকালের যুদ্ধাস্ত্র এবং টেরাকোটা মিসাইল পাওয়া গেছে। আলেক্সান্ডারের মতো বিশ্বজয়ী সেনানায়ক গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের সৈন্য ও সমরাস্ত্র দেখে বিপাশা নদীর কাছ থেকে ফিরে গেছে। উয়ারী-বটেশ্বরে পাওয়া প্রতিটি প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা হওয়া উচিত।
এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি খোন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানটির সদস্যসচিব মো. সিদ্দিকুর রহমান খান। তিনি শুরুতে এশিয়াটিক সোসাইটি এবং ঐতিহ্য জাদুঘরের ইতিহাস তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, যারা এখন অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে শক্তিশালী। কিন্তু তাদের ইতিহাস খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, ২০০ থেকে ৩০০ বছর আগে তারা বর্বর জাতি ছিল। কিন্তু আমাদের আড়াই হাজার বছর আগেও উয়ারী-বটেশ্বরের মতো সমৃদ্ধ এবং উন্নত সভ্যতা ছিল। ফলে এই সভ্যতার কথা আমাদের আরও বেশি করে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।’