ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকি কমিয়ে অর্থনীতিতে নোবেল মার্কিন ত্রয়ীর

ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকি কমিয়ে অর্থনীতিতে নোবেল মার্কিন ত্রয়ীর

অর্থনৈতিক ডেস্ক: ব্যাংক ও আর্থিক সংকট নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেন বারনানকে, ডগলাস ডায়মন্ড ও ফিলিপ ডিবভিগ। ব্যাংককে দেউলিয়া অবস্থায় যাওয়া থেকে বাঁচার পথ দেখিয়েছেন এই ত্রয়ী।

নোবেল পুরস্কার প্রদানকারী সংস্থা রয়াল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের সেক্রেটারি জেনারেল হান্স এল্লেগ্রেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সংকটের সময় কিভাবে আর্থিক বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে বিষয়ে আমাদের ধারণা আরো উন্নত করেছেন তাঁরা। তাঁদের কাজ আর্থিক বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক সংকট মোকাবেলায় অত্যন্ত বাস্তব ভূমিকা রেখেছে।

বেন বারনানকে ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান ছিলেন। ডগলাস ডায়মন্ড বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর অধ্যাপক এবং ডিবভিগ সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক।

আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট বলা হয় ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দাকে। বেন বারনানকে দেখিয়েছেন, বিপুলসংখ্যক আমানতকারী ব্যাংক থেকে তাদের সঞ্চিত অর্থ তুলে নেওয়ায় (ব্যাংক রান) ১৯৩০ সালের সংকট কিভাবে আরো গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল।

ডায়মন্ড ও ডিবভিগ দেখিয়েছেন, ব্যাংক কিভাবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো কেন ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ধস এড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কিভাবে পরিচালনা করা যেতে পারে, তার পথও দেখিয়েছেন তাঁরা।

ডায়মন্ড ও ডিবভিগ জুটি দেখিয়েছেন বড় আর্থিক সংকটে অনেক মানুষ একসঙ্গে সঞ্চয়ের অর্থ তুলে নিলে ‘ব্যাংক রান’ হতে পারে। তখন ব্যাংকব্যবস্থা ধসে পড়ে। তাঁরা ব্যাংক রান ও ধস এড়াতে সরকার কিভাবে আমানতকারী হয়ে বীমা সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে এবং শেষ অবলম্বন হিসেবে ঋণদাতা হয়ে ব্যাংকগুলোকে নতুন সুযোগ দিতে পারে তা তুলে ধরেছেন।

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য কমিটির চেয়ারম্যান টোরে এলিংসেন বলেন, বিজয়ীদের গবেষণা গুরুতর সংকট এবং দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। …মূল কথা হলো, ব্যাংকব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। শুধু সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হলেই এই খাত স্থিতিশীল হবে।

আলফ্রেড নোবেলের উইলে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের বিষয়টি ছিল না। তবে ১৯৬৮ সালে দ্য ব্যাংক অব সুইডেনের দেওয়া এক বিশেষ সিদ্ধান্তে অর্থনীতিতে এই পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। অর্থনীতির পুরস্কারটি নোবেলের অন্যান্য বিষয়ের পুরস্কারের মতো একই সময় ঘোষণা ও প্রদান করা হয়। পুরস্কারের অর্থমূল্যও নোবেলের অন্যান্য পুরস্কারের মতোই। এ কারণে সম্মানের দিক থেকে তা নোবেল পুরস্কারের সমকক্ষ। সে কারণে অর্থনীতিতে দেওয়া পুরস্কারটি ‘বিকল্প নোবেল পুরস্কার’ হিসেবেও বিবেচিত।

তিন বিজয়ীর কর্মক্ষেত্র: বেন বারনানকে ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের অগাস্টায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ইকোনমিক স্টাডিজের সিনিয়র ডিশটিংগুইশড ফেলো।

ডগলাস ডাব্লিউ ডায়মন্ড ১৯৮০ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে মারটন এইচ মিলার ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক।

ফিলিপ এইচ ডিবভিগ ১৯৭৯ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে বোটম্যানস ব্যাংকশেয়ার ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্সের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *