দেওয়ানবাগ ডেস্ক: ভয়াবহ তাপপ্রবাহ, বন্যা আর দাবানলের বছর ২০২৩ সাল যে ইতিহাসের উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে তা ‘কার্যত নিশ্চিত’। নতুন পাওয়া তথ্যে এমন ইঙ্গিত মিলেছে। এ বছরের অক্টোবরের ‘ব্যতিক্রমী’ উচ্চ তাপমাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পরিবর্তন সংস্থার মতে, বৈশ্বিক গড় বায়ুর তাপমাত্রা এ বছর ২০১৯ সালের অক্টোবরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার তুলনায় ০.৪ ডিগ্রি বেশি উষ্ণ ছিল।
কার্বন নির্গমন ও এল নিনোর কারণে গত অক্টোবর ছিল সর্বকালের রেকর্ড উষ্ণতার সারিতে পঞ্চম মাস। চরম বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২০২৪ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। ২০২৩ সালের শেষ দুই মাসেও এই প্রবণতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিশ্বজুড়ে উচ্চ তাপমাত্রা নভেম্বর মাসেও অব্যাহত রয়েছে।
অক্টোবরের তাপমাত্রা এ বছরের লাগামহীন বৈশ্বিক উষ্ণতার রেকর্ডের তালিকায় যোগ হয়েছে। বছর শেষ হওয়ার আগেই রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ১.৫ ডিগ্রি অতিক্রম করা দিনের সংখ্যা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। জুলাইয়ের তাপমাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে এটি গত এক লাখ ২০ হাজার বছরের মধ্যে উষ্ণতম মাস হতে পারে। সেপ্টেম্বরের গড় তাপমাত্রাও আগের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
এ পর্যন্ত বছরজুড়ে যে রকম গরম পড়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, ২০১৬ সালকে টপকে ২০২৩ কার্যত নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের ইতিহাসে উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে। কোপার্নিকাস, মার্কিন সরকারি এনওএএএ, বার্কলে আর্থসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এমনটাই মনে করছে।
বার্কলে আর্থের পরিবেশবিজ্ঞানী জে কে হাউসফাদার বলেন, ‘এ বছর যে রকম ব্যতিক্রমী রেকর্ড গড়া মাসের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা শিগগিরই চলে যাওয়ার কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এই পর্যায়ে সব উপাত্ত কার্যত নিশ্চিত করছে, ২০২৩ সাল ইতিহাসের উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ৯৯ শতাংশের বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বছরের রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রার বৈজ্ঞানিক প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক গবেষক। তবে অনেকেই এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার বাস্তব পরিণতির দিকেও আঙুল তুলেছেন।
এ ব্যাপারে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ড. ফ্রেডরিক অটো বলেন, ‘সত্যটা হলো এ বছর আমরা যে রেকর্ড উষ্ণ বছর প্রত্যক্ষ করছি, তা ব্যাপক দুর্যোগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ বছর চরম তাপমাত্রার কারণে তীব্র তাপপ্রবাহ ও খরার ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। অনেকেই কাজ হারাচ্ছেন, কেউ কেউ বাস্তুচ্যুতও হচ্ছেন।’
মূলত পেট্রল, ডিজেল, কয়লা ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়ে উৎপন্ন হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর আবহাওয়ার উষ্ণায়নের বিশেষ প্রাকৃতিক ঘটনা এল নিনোও তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সূত্র : বিবিসি