অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আসিফ ইকবাল
বাংলাদেশে হৃদ্রোগী দিন দিন বাড়ছে। এই বৃদ্ধির জানা-অজানা নানা কারণ রয়েছে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান ও জীবনযাত্রার কারণে হৃদ্রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। সাধারণত হৃদ্যন্ত্রের অক্সিজেন বহনকারী ধমনি সংকীর্ণ বা বন্ধ হলে হৃদ্রোগের সমস্যা দেখা দেয়। হৃদ্রোগের মূলত তিন ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি রয়েছে।
প্রথমত, নিয়মিত ওষুধ খাওয়া। সব স্তরের চিকিৎসাপদ্ধতির জন্য এটি প্রযোজ্য।
দ্বিতীয়ত, ইনভেসিভ চিকিৎসা যেমন হৃৎপিণ্ডের প্রায় বন্ধ বা বøক হওয়া ধমনির মধ্যে ঢুকে এক বা একাধিক রিং (স্টেন্ট) বসানো, যাকে পিসিআই বলা হয়।
তৃতীয়ত, বাইপাস সার্জারি বা সিএবিজি করা।
শেষের দুই পদ্ধতি দ্রুত ও জরুরি চিকিৎসাপদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে কোনো ধরনের ইনভেসিভ পদ্ধতি ছাড়াই হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির সংকীর্ণতা বা বন্ধ হওয়া ধমনির উপযুক্ত চিকিৎসা করা, যা কিনা ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল হৃৎপিণ্ডের ব্যথার রোগীর জন্য প্রযোজ্য। এর মধ্যে রয়েছে ইইসিপি পদ্ধতি, যা বিজ্ঞানসম্মত, কার্যকর, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন, ব্যয় সহনীয়, সহজ ও নিরাপদ চিকিৎসাব্যবস্থা। ইইসিপি ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হৃৎপিণ্ডের ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল এনজাইনা বা ব্যথা নিরসনে বহুলাংশে ব্যবহার হয়ে আসছে।
কীভাবে কাজ করে
আমাদের হৃৎপিণ্ড সিস্টোলের সময়ে পরিশোধিত রক্তকে নির্ধারিত চাপ ও গতিতে শরীরের অগণিত ধমনির মাধ্যমে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দেয় এবং ডায়াস্টোলের সময় এই রক্তের গতি অনেকটাই স্থির থাকে।
ইইসিপি এই ডায়াস্টোলের সময় শরীরের ভেতরের অংশের সব ধমনির ওপর শরীরের বাইরে অবস্থিত কাফের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাপ সৃষ্টি করে ও রক্তকে অপেক্ষাকৃত উচ্চ চাপে দ্রুত হৃৎপিণ্ডে ফেরত পাঠায়। এই কাজ ক্রমাগত ইসিজি, কম্পিউটার ও কম্প্রেসরের সমন্বিত কাজের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
দ্রুতগতিতে ফেরত আসা এই রক্তের তরঙ্গ হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনিতে উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করে। যেখানে চাপ সৃষ্টিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়, সেখানে একাধিক জৈব-বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে রক্ত চলাচলের জায়গা তৈরি করে অক্সিজেনসংবলিত রক্ত হৃৎপিণ্ডের অসুস্থ জায়গায় পাঠাতে সক্ষম হয়। ফলে রোগীর হৃদ্রোগজনিত বুকব্যথা কমে যায়, কর্মক্ষমতা বাড়ে ও আগের মতো স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসে।
পদ্ধতিটি ইতিমধ্যেই অনেক দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যারা অস্ত্রোপচারের স্টেন্টিংয়ের অনুপযুক্ত, সেসব রোগীর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। হৃদ্রোগ হলে আজকাল ইনটেনসিভ মেডিকেল থেরাপির কথাও বলা হয়।
নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও ওষুধপত্রই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট। হৃদ্রোগ হলেই যে অস্ত্রোপচার লাগবে বা রিং বসাতে হবে, এমন ধারণা আজকাল পাল্টে যাচ্ছে। তবে কোন পদ্ধতিটি রোগীর জন্য উপযুক্ত ও যৌক্তিক, তা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই নির্ধারণ করতে পারবেন।
[লেখক: মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আসিফ ইকবাল, বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি ও মেডিসিন বিভাগ, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর ১০, ঢাকা।