আহমাদ ইজাজ: তালবিয়া পবিত্র হজ ও ওমরাহর অন্যতম অনুষঙ্গ। এটি হাজিদের স্লোগান। তালবিয়া হচ্ছে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।’
অর্থ: আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি (আমি হাজির), হে আল্লাহ, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি (আমি হাজির)। আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোনো শরিক নেই।
আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নিয়ামত ও রাজত্ব আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই। (বুখারি, হাদিস ১৫৪৯; মুসলিম, হাদিস ২৮১১)
কখন তালবিয়া পাঠ করবে
ওমরাহ পালনকারী ইহরামের শুরু থেকে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ শুরু করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করবে। তাওয়াফের আগ মুহূর্তে তালবিয়া বন্ধ করে দেবে।
আর হজ পালনকারী ইহরাম বাঁধা থেকে শুরু করে ১০ জিলহজ কোরবানির দিন ‘জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করবে। ফজল ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতেন।’ (বুখারি, হাদিস ১৫৪৪)
কীভাবে তালবিয়া পাঠ করবে
পুরুষরা ইহরাম বাঁধার সময় ও পরে উচ্চ স্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার কাছে জিবরাইল (আ.) এসে আদেশ দিলেন-আমি যেন আমার সঙ্গীদের তালবিয়া দ্বারা তাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করতে নির্দেশ দিই।’ (আবু দাউদ, হাদিস ১৮১৪)
নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই তালবিয়া পাঠ ও অন্য দোয়া-দরুদের গুরুত্ব সমান। পার্থক্য এতটুকু যে নারীরা পুরুষের মতো উচ্চ স্বরে তালবিয়া পাঠ করবে না। নিজে শুনতে পারে-এতটুকু আওয়াজে নারীরা তালবিয়া পাঠ ও অন্য দোয়া-দরুদ পাঠ করবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস ১৪৮৮২)
তালবিয়া পুরোটা পাঠ করতে হবে। কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়াও মাকরুহ। (আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৮৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৩)
তালবিয়ার পাঠের গুরুত্ব
১. তালবিয়া হজ ও ওমরাহর স্লোগান। তালবিয়া পাঠের মধ্য দিয়ে হজ ও ওমরাহে প্রবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তালবিয়াতে কণ্ঠ স্বর উঁচু করার জন্য জিবরাইল (আ.) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ এটি হজের বিশেষ স্লোগান।’ (ইবন খুজাইমাহ, হাদিস ২৬৩০)
২. যে হজে উচ্চ স্বরে তালবিয়া পাঠ করা হয় সেটি সর্বোত্তম হজ। আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন হজ সবচেয়ে উত্তম? অন্য বর্ণনায় এসেছে, জিজ্ঞেস করা হলো, হজের মধ্যে কোন আমলটি সবচেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বলেন, উচ্চ স্বরে তালবিয়া পাঠ করা এবং পশুর রক্ত প্রবাহিত করা।’ (তিরমিজি, হাদিস ২৯২৪)
৩. তালবিয়া পাঠকারীর সঙ্গে পৃথিবীর জড় বস্তুগুলোও তালবিয়া পড়তে থাকে। সাহল ইবন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলিম তালবিয়া পাঠ করে তখন তার ডান ও বামে পাথর, বৃক্ষরাজি, মাটি সব কিছু তার সঙ্গে তালবিয়া পাঠ করে। এমনকি পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত (তালবিয়া পাঠকারীদের দ্বারা) পূর্ণ হয়ে যায়।’ (তিরমিজি, হাদিস ৮২৮)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।