বহুলপ্রত্যাশিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন তিনি। দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সি সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান; স্বকর্মে নিয়োজিত; স্বল্প-আয়ের নাগরিক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা এতে অংশ নিতে পারবেন।
তবে এ সুবিধার বাইরে থাকবেন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাপ্রাপ্ত ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ। পেনশন স্কিমে অংশ নিতে হলে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরাও আপাতত এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারছেন না। বস্তুত এ স্কিমের মধ্য দিয়ে বেসরকারি খাতে পেনশনের একটি নতুন মাত্রা যোগ হতে চলেছে।
দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে এই পেনশন ব্যবস্থা করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী নাগরিকদের জন্য আজীবন পেনশন সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পের অধীন ছয়টি পরিকল্পিত স্কিমের মধ্যে প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী নামে চারটি স্কিম প্রাথমিকভাবে চালু করা হয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাসী স্কিম, বেসরকারি চাকরিজীবী ও প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রগতি স্কিম, স্বকর্মে নিয়োজিতদের জন্য সুরক্ষা স্কিম এবং স্বল্প-আয়ের মানুষের জন্য সমতা স্কিম গঠন করা হয়েছে। বাকি দুটি স্কিম পরে চালু করা হবে। এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ থেকে ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা থাকবে। মাসিক চাঁদা সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকার মধ্যে ৫০০ টাকা প্রদান করবে সরকার।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ১৮ বছরের বেশি সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত একটি মহৎ ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। দেশে গড় আয়ু ও প্রবীণের সংখ্যা বাড়ায় সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি বাড়ছে। এ অবস্থায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অবশ্য এটি নতুন কোনো ধারণা নয়। পার্শ্ববর্তী ভারতেও এ স্কিম চালু করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসসহ অনেক উন্নত দেশে এ স্কিম কার্যকর রয়েছে। বস্তুত, কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা থেকেই এ চিন্তার উদ্ভব। বিবিএস-এর জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট শ্রমশক্তির সংখ্যা ৫ কোটি ৮৭ লাখ। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী ৫ শতাংশ আর বেসরকারি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ১০ শতাংশ। এই ১৫ শতাংশ হলো দেশের প্রাতিষ্ঠানিক খাত।
বাকি ৮৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের, যাদের কোনো নিয়োগপত্র নেই। তারাও পেনশন স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন। ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনি ইশতেহারে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের অঙ্গীকার ছিল। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য সরকার ধন্যবাদ পেতে পারে। আমরা মনে করি, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নাগরিকদের জন্য এ এক বড় সুযোগ। সর্বজনীন পেনশন স্কিম যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে, এটাই প্রত্যাশা।