সব বয়সীর রোগ স্ট্রোক

সব বয়সীর রোগ স্ট্রোক

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: স্ট্রোক এখন সব বয়সীর রোগ। তবে বর্তমানে তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। কারণ মাদক ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে হাজারে ১১ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত। আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ ভাগের মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। চিকিৎসা নিলেও ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পঙ্গুত্ব বরণ করে। তবে পঙ্গুত্ব বরণ করলেও সময়মতো চিকিৎসা নিলে তাদের ৫০ ভাগ ভালো হয়ে যায়।


ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, স্ট্রোক হলো প্রতিরোধযোগ্য রোগ, কিন্তু অবেহলায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে যায়। তাই সচেতন হতে হবে। যদি নিয়মিত ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেন, তাহলে স্ট্রোক হওয়া থেকে ৯০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। স্ট্রোকে আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ ভাগ সুস্থ হয়ে যায়। আর ৩০ ভাগের জটিলতা দেখা দেয়। পরে চিকিৎসা দিতে দিতে ভালো হয়ে যায়। ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পঙ্গুত্ব বরণ করে। অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ব্যায়াম করলে স্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বছরে দুই বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উত্তম। তবে কমপক্ষে বছরে একবার শারীরিক পরীক্ষা করতেই হবে। আর স্ট্রোকে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, সেগুলো জানতে হবে।


নিউরোলজিস্ট অব বাংলাদেশের সভাপতি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের যুগ্ম-পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. বদরুল আলম বলেন, স্ট্রোকের জন্য বিশ্বে যত উন্নত চিকিৎসা আছে, একই চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা রয়েছে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে। তবে চাহিদা অনুযায়ী রোগীদের চাপ অনেক বেশি। তার পরও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ছয়টি কারণে স্ট্রোক হয়। এগুলো হলো—অনিয়ন্ত্রিত ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিস, আগের হার্ট ডিজিস, ধূমপান (পানপাতা, সাদা জর্দা গ্রহণ), কায়িক পরিশ্রম না করা এবং রক্তে চর্বির পরিমাণ অত্যধিক। আগে ৬০ বছরের অধিক বয়সীদের স্ট্রোক বেশি হতো। তবে এখন তরুণদের মধ্যে ব্যাপক হারে দেখা দিচ্ছে। হাতের কাছে তারা মাদক পাচ্ছে। মাদক ও অ্যালকোহল যারা গ্রহণ করে, তাদের ঝুঁকি বেশি।


বিশ্ব স্ট্রোক দিবস প্রতিবছর ২৯ অক্টোবর উদযাপিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন করা হয়েছে। এ বছর দিবসটি প্রতিপাদ্য ‘এক সাথে আমরা জয় করব স্ট্রোক’। স্ট্রোক হলো মানুষের মস্তিষ্কের রক্তনালীর এমন একটি রোগ, যাতে হঠাৎ করে সেই রক্তনালী বন্ধ হয়ে অথবা ছিঁড়ে গিয়ে মস্তিষ্কের একটা নির্দিষ্ট অংশের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যায়। একবার স্ট্রোক হলে ভবিষ্যতে সেই ঝুঁকি আরও বাড়ে। স্ট্রোক হঠাৎ করেই হয়। কারো এটি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা যদি তা বুঝতে পারেন, তাহলে দ্রুত সঠিক জায়গায় সঠিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারবেন। অর্থাৎ, হঠাৎ করে যদি কেউ পড়ে যান, দৃষ্টিশক্তি চলে যায়, মুখ বেঁকে যায়, শরীরের এক পাশ দুর্বল বা অবশ হয়ে যায়, মুখের কথা জড়িয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন রোগীর স্ট্রোক হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া তীব্র মাথাব্যথা (মাথায় বজ পাত হওয়ার মতো অনুভূতি), বমি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে। এমন হলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্ট্রোক হওয়ার তিন থেকে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের কাছে এলে যেসব হাসপাতালে স্ট্রোক ইউনিট বা স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু আছে, সেখানে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তবে সাধারণভাবে বাংলাদেশের সব সরকারি হাসপাতালেই স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *