অর্থনৈতিক ডেস্ক: সামগ্রিক অর্থে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশেষ চাপের মুখে আছে। এই চাপ কমাতে হলে আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ বাড়াতে হবে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোও নানা নীতি গ্রহণ করে সেই উদ্যোগই নিয়েছে।
পাশের দেশ ভারতসহ অন্য দেশগুলো ডলারের মূল্য খোলাবাজারে ছেড়ে দিয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও একই কাজ করেছে। এর পাশাপাশি বৈধ পথে প্রবাস আয় আনার ওপর জোর দিতে হবে। কারণ সামনে রপ্তানি আয় কমার আশঙ্কা রয়েছে। আর শুধু আমদানি ব্যয় কমিয়ে খুব বেশি ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে না।
প্রথমে আমাদের রিজার্ভ কমার কারণটা চিন্তা করতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় মূল্য ব্যবস্থার মধ্যে আছে। তবে তারা যে বাজারে হস্তক্ষেপ একেবারেই করে না, এমন নয়। তারা বাজারে হস্তক্ষেপ করে, কিন্তু দর বেঁধে দিয়ে হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু আমরা সরাসরি ব্যাংক ও মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ডলারের দর নির্ধারণ করে দিয়েছি। এ কারণে আমাদের প্রবাস আয় কমতে শুরু করেছে এবং তা এখনো চলছে। প্রবাসীরা অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে ডলার পাঠিয়ে দাম বেশি পাচ্ছে। তাই দর বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে। দর বেঁধে দিয়ে বৈদেশিক বাজারে ব্যবসা করা কঠিন। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ঘণ্টায় দর বদলাচ্ছে। ডলার এখনো অনেক শক্তিশালী। ডলারের দাম সারা বিশ্বে যে উচ্চ পর্যায়ে উঠেছে, তার দাম অদূর ভবিষ্যতে কমার কোনো সুযোগ নেই।
দেশে ডলারের দাম চলতি মাসে আরো বাড়তে পারে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়াতে পারে। এই সময়টায় সারা বিশ্বেও ডলারের দাম বাড়তে পারে। তাহলে কেন প্রবাসীরা নির্ধারিত দরে ডলার বিক্রি করবেন? এটাই বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
প্রবাস আয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠানগুলো যে দরটা দিতে পারত, সেই দর বেঁধে দেওয়া হলো-এক ক্ষেত্রে ৯৯ টাকা, আরেক ক্ষেত্রে ১০৮ টাকা। এই নতুন ব্যবস্থা এলো সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। এই সিদ্ধান্তের আগে ব্যাংক প্রতি ডলারের দাম দিত ১০৪ টাকা। কিন্তু দর বেঁধে দেওয়ায় ব্যাংক তো আপনাকে ৯৯ টাকার বেশি দিতে পারবে না। আমার ধারণা, যাঁরা আগে ব্যাংক ও মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতেন, তাঁরা এখন পাঠাচ্ছেন না। কারণ টাকার পার্থক্যটা অনেক বেশি। পত্রিকায় আজও দেখলাম, অনানুষ্ঠানিক পথে ডলার পাঠিয়ে ডলারপ্রতি ১১২ থেকে ১১৬ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এই দরটাও প্রতি ঘণ্টায় বদলায়। এটাই তো আন্তর্জাতিক মুদ্রার নীতি। আমাদেরও সেদিকে যাওয়া উচিত। বিশ্বের সব দেশ সেদিকেই।
গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৪ শতাংশ। তবে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে সামনের দিনে সংকট আসছে। ইউরোপে যে ২০২৩ সালে মন্দা আসবে, তা সবার জানা; তবে সেই মন্দা কত দিন স্থায়ী হবে, সেটা অজানা।
গত অর্থবছরে আমদানির প্রবৃদ্ধি রপ্তানি প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি ছিল বলে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছিল। এখন আপনি যদি রিজার্ভের ঘাটতি কমানোর জন্য আমদানি ব্যয় কমাতে বলেন, তাহলে উল্টো ক্ষতি হবে। কারণ আপনি জ্বালানি যত কম আমদানি করবেন, আপনার ক্ষতিই বাড়বে। আমদানি ব্যয় কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক রাখা যাবে না। তাই বৈধ পথে প্রবাস আয় আনার ওপর জোর দিতে হবে।