ষড়রিপুর প্রভাব এবং মুক্তির উপায়

ষড়রিপুর প্রভাব এবং মুক্তির উপায়

ড. পিয়ার মোহাম্মদ
আল্লাহ্ পাক মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি এবং সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ সৃষ্টির আগে সকল আত্মাকে একত্রিত করে মহান আল্লাহ্ জিজ্ঞেস করেন ‘আলাসতু বি রাব্বিকুম’ অর্থাৎ- আমি কি তোমাদের প্রভু নই? সকল আত্মা সমস্বরে জবাব দেয় ‘কালু বালা’ অর্থাৎ- হ্যাঁ, আপনি অবশ্যই আমাদের প্রভু। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন, “আর আপনি [মোহাম্মদ (সা.)] তাদের সে লোকের বৃত্তান্ত শুনিয়ে দিন, যাকে আমি আমার নিদর্শনাবলি দান করেছিলাম; কিন্তু সে তা বর্জন করে বেরিয়ে গেল এবং শয়তান তার পেছনে লেগে গেল, ফলে সে পথভ্রষ্টদের শামিল হয়ে গেল।” (সূরা আ‘রাফ ৭: আয়াত ১৭৫) মানুষ মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলি ভুলে পাপ কাজে লিপ্ত হচ্ছে এবং তার মানবিক আচরণ পরিবর্তন হয়ে পশুর আচরণে পরিণত হচ্ছে। মহান আল্লাহ্ মানুষের জন্য বিধিবিধান দিয়েছেন যেন তাঁর নির্দেশাবলি সে মেনে চলে। তাহলে পরকালের জীবনে থাকবে অনন্তকালের অকল্পনীয় সুখ, শান্তি ও আনন্দময় জীবন এবং এর অমান্যকারীদের জন্য হবে বেদনাদায়ক শাস্তি ও তিরস্কার। অথচ মানুষ বেমালুম আল্লাহর সেই নির্দেশাবলি ভুলে পাপ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। কী কারণে মানুষের এমন আচরণ, কে করাচ্ছে এমন কাজ, আর কীভাবে এ দূরাবস্থা থেকে বাঁচা যাবে?


মানুষের এমন আচরণের কারণ তার উপর ষড়রিপুর প্রভাব। শয়তান আমাদের ষড়রিপুকে চাঙ্গা করিয়ে আমাদের দিয়ে দেদারছে পাপ করিয়ে চলেছে। সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই শয়তান শুরু করেছে তার এ অপকর্ম। এ পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে স্বয়ং আদম (আ.) বেহেশত থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। তাঁরই দুই সন্তান হাবিল আর কাবিল একজন অপর জনকে হত্যা করেছিলেন। তারপর যত নবি-রাসুল পৃথিবীতে আগমন করেছেন, সবাই মানুষকে পাপ কাজ থেকে বিরত থেকে আল্লাহর প্রভুত্বকে স্বীকার করে মুক্তি লাভের কথা বলে গেছেন। কেউ নবি রাসুলগণের কথা শুনে সফল হয়েছেন, আবার কেউ না শুনে শয়তানের ধোঁকায় রিপুর তাড়নায় পাপ কাজ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। আমরা পার্থিব জীবনে শত্রুর সাথে মিশতে চাই না, পারলে দূরে থাকি অথচ আমাদের জীবনের চরম শত্রু রিপুর প্ররোচনায় নিজেদের নির্দ্বিধায় ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছি। এ অবস্থা চলতে পারে না। আমাদের অবশ্যই শত্রুকে চিনতে হবে এবং তাকে দমন করে মহান আল্লাহর দরবারে বিজয়ী বেশে হাজির হতে হবে। মহান আল্লাহ্ সেটাই চান।


শয়তান সব সময় মানুষের পিছনে লেগে আছে। মানুষের সাথে তার চিরশত্রুতা। শয়তানের কাজই হলো সারাক্ষণ মানুষকে বিপথগামী করার চেষ্টা করা। বিশেষ করে মানুষ একটু বেশি আল্লাহর কথা ভাবলে যেন শয়তান তার পিছনে মরিয়া হয়ে উঠে পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য। মানুষের কাছে এসে সে যেমন শুভাকাক্সক্ষী সেজে প্ররোচনা দেয় তেমনি ক্বালবের সুদুরের মোকামে পাহারা দিয়ে রেখেছে, যেন আমরা কোনোভাবেই ক্বালবের সপ্তম স্তরের নাফসির মোকামে গিয়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে না পারি। শয়তান ষড়রিপুকে ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে বিপথগামী করে। এ ষড়রিপু হলো কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য্য। মানুষ কাম রিপুর কুপ্রভাবে তাড়িত হয়ে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়। ক্রোধ রিপুর কারণে মারামারি, হানাহানি, রক্তপাত ও হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। লোভে লিপ্ত হয়ে চুরি, ডাকাতি ও দুর্নীতি করে। মোহে পড়ে প্রতিপত্তি, ক্ষমতার জন্য ব্যাকুলতা, মুর্খতা ও বিবেকশুন্যতায় পতিত হয়। মদ রিপুর প্রভাবে আনন্দ স্ফূর্তিতে মত্ত থাকে। এর ফলে মানুষ ধরাকে শরা জ্ঞান করে। মাৎসর্য রিপু ঈর্ষা, হিংসা ও পরশ্রীকাতরতার প্রবৃত্তির উদ্রেক করে। নিজের স্বার্থ বৈ অন্যের সমৃদ্ধিকে সহ্য করতে পারে না। এসবই শয়তানের প্ররোচনায় ঘটে। মানুষ চরমভাবে আমিত্বে ভুগে, ক্ষমতার বাহাদুরি করে এবং মালিকের নির্দেশনা ভুলে যায়। শয়তান বহাল তবিয়তে তার কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। এমনকি মানুষ পাপ কাজ করতে করতে এমনভাবে অভ্যস্ত হয়ে যায় যে, শয়তানের আর প্ররোচনার প্রয়োজন হয় না। অভ্যাসগতভাবেই পাপ কাজে লিপ্ত হয়।


মানুষের উপর শয়তান তার রাজত্ব কায়েম করেছে। আমরা কি তা মেনে নিয়ে তার ইচ্ছামত চলব। না, তাতো হতে পারে না। শয়তানের চেয়ে মানুষের সামর্থ্য কি কম। তাও হবার সুযোগ নেই। হযরত আদম (আ.)-কে সেজদা না করায় শয়তান শাস্তি ভোগ করছে। মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন “ক্বালবুল মু’মিনি মিন ‘আরশিল্লাহ।” অর্থাৎ মু’মিনের দিল আল্লাহর আরশ। (তাফসীরে ইবনে আরাবি ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৯) তাহলে আমরা কেন শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করব। সাপ মানুষকে কামড়ায় অথচ বেজি দেখলে পালায়, কারণ বেজি সাপকে মেরে ফেলতে পারে। তাহলে আমরা যদি সৃষ্টির সেরা হই, আর আমাদের মাঝেই যদি আল্লাহ্ বসে থাকেন, তাহলে আমরা কি শয়তানের শয়তানি বন্ধ করতে পারব না। অবশ্যই পারব। মনে হতে পারে অনেক পাপ ইতোমধ্যে করে ফেলেছি, কীভাবে আমি পারব। হ্যাঁ, মানুষের ভিতরে যেহেতু ষড়রিপু আল্লাহ্ দিয়েছেন এবং শয়তানকেও মহান আল্লাহ্ মানুষের পিছনে লাগার অনুমতি দিয়েছেন, সেহেতু পাপ ও শয়তানের হাত থেকে বাঁচার উপায়ও তিনি বলে দিয়েছেন।
আমাদের মালিক মহান আল্লাহ্ অতি দয়াল্।ু তিনি বলেছেন মানুষ যত পাপই করুক তার পরিমাণ আমার ক্ষমা করার ক্ষমতার চেয়ে অনেক কম। তাহলে আমরা যদি সেই ক্ষমা পায় তবেই তো শয়তানের সব শয়তানির ফসল পানিতে ভেসে যাবে, আর আমরা হয়ে উঠব পবিত্র হিসেবে। তারপর শয়তানকে যেহেতু চিনে ফেললাম আর তার ফাঁদে পা না দিলেই হয়। এমনকি আবারো ভুল হয়ে গেলেও মাহান আল্লাহ্ সব সময় ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত আছেন।


এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে ক্ষমা পাওয়া যাবে। মোহাম্মদী ইসলাম এমনই একটি জীবন বিধান, যার মধ্যে সব সমাধান নিহিত রয়েছে। আমরা দেখতে পারি হযরত আদম (আ.) শয়তানের ধোঁকায় গন্ধম খেয়ে বেহেশত থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। তিনি কীভাবে সে অপরাধ থেকে ক্ষমা পেয়েছিলেন। এ বিষয়ে পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, হযরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (আ.) যখন বেহেশত হতে বিতাড়িত হয়েছিলেন, তখন তাদের কান্নাকাটির সীমা ছিল না। তাতে কাজ হয়নি, কিন্তু যখন আল্লাহর বন্ধু হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর অসিলা ধরে ক্ষমা চেয়েছিলেন, তখনই সমস্ত অপরাধ আল্লাহ্ মাফ করে দিয়েছেন। পরবর্তীতে মহান আল্লাহ্ যুগে যুগে নবি ও রাসুল প্রেরণ করেন। তাঁদের কাছে গিয়ে পাপী তাপী মানুষ তাদের সহবতে থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছেন। মহামানবদের ভালোবেসে এবং তাঁদের আদর্শকে অনুসরণ করে সাধারণ মানুষ সফলকাম হয়েছেন। তাহলে বুঝা গেল, খাস দিলে তওবা করে পাপমুক্ত হওয়ার পূর্বশর্ত হলো- আল্লাহর প্রিয় কোনো বন্ধুর সংস্পর্শে গিয়ে তার অসিলা ধরে মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করা। পাপ মাফ হওয়ার পর হযরত আদম (আ.) নবির মর্যাদাও পেয়েছিলেন। কাজেই আমরা পাপ করে ফেলেছি বলে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। মহান আল্লাহর করুণা পেয়ে সফলকাম হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।


হযরত রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বশেষ নবি ও রাসুল। তাঁর তিরোধানের পর থেকে শুরু হয়েছে বেলায়েতের যুগ। এ যুগে আর কোনো নবি-রাসুল আসবেন না। তাহলে মানুষের মুক্তি হবে কীভাবে। কার অসিলায় মানুষ মুক্তি লাভ করবে। আসলে এখনো বেলায়েতের যুগে সেই অসিলা বিদ্যমান আছে। অলী-আল্লাহগণ নবি রাসুলের কাজটিই করছেন, তবে তাঁরা নবি বা রাসুল নন। তাঁদের অসিলা ধরে এখন তওবা করে মুক্তি লাভের সুযোগ আছে। সেই ধারাবাহিকতায় এ কাজ করেছেন মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলা। তাঁর তিরোধানের পর বর্তমানে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর। কিয়ামত পর্যন্ত এ ব্যবস্থা চালু থাকবে। তাঁদের অসিলা ছাড়া ষড়রিপুর প্রভাব থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। বই পুস্তক পড়ে ধর্মীয় কিছু জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হলেও ষড়রিপুর হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় কামেল অলী-আল্লাহর সহবতে গিয়ে নিজের আত্মার উন্নয়ন ঘটানো। শয়তানকে তাড়িয়ে তার হাতিয়ার ষড়রিপুকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলেই মুক্তি অন্যথায় মানুষের ঘরে শয়তান বসবাস করে সব লুটে নিয়ে যাবে।


এখন আবার প্রশ্ন হলো- অলী-আল্লাহগণের কাছে গেলেই কি মুক্তি হয়ে যাবে? না তা নয়। অলী-আল্লাহর সহবতে থেকে আমল ও সাধনার মাধ্যমে নিজেকে শুদ্ধ করেই মুক্তি লাভ করতে হবে। নবি-রাসুলগণ মানুষকে আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা ও নামাজে হুজুরির শিক্ষা দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে আত্মশুদ্ধি করতে পারলেই শয়তান সুবিধা করতে পারে না। শয়তান তার কাছে পরাজয় বরণ করে। আত্মশুদ্ধি হলে মানুষের দিল জিন্দা হয়। অর্থাৎ মানুষের ক্বালবের মুখে আল্লাহ্ আল্লাহ্ জ্বিকির চালু হয়। তখনই ক্বালবের সুদুরের মোকামের শয়তান তিরের বেগে পলায়ন করে। মানুষ তখন ক্বালবের স্তরসমূহ ভেদ করে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে পারে। তাঁর নুরের কদম মোবারকে সেজদা করে শতভাগ আত্মসমর্পণ করতে পারে। আমরা বলে থাকি ‘আ‘উযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম’ বলে কাজ শুরু করলে শয়তান আসতে পারে না। আবার বলি রমজান মাসে শয়তান বন্দি থাকে। তাহলে প্রশ্ন সেভাবে কাজ শুরু করলেও শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয় আবার রমজান মাসেও মানুষ পাপ করে। তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব হয়? সম্ভব হয় এ কারণে যে এ পরিস্থিতিতে বাহিরের শয়তান কাজ করতে পারে না। নিজের ভিতরের শয়তানতো তার কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। সেই শয়তানকে তাড়াতে হলে অবশ্যই একজন কামেল অলী-আল্লাহর সংস্পর্শে গিয়ে ক্বালবে আল্লাহর জিকির জারি করতে হবে। তাহলেই শয়তান পূর্ণাঙ্গরূপে পরাজিত হবে। আমরাও পাপমুক্ত হতে পারব। ষড়রিপু আমাদের বশ্যতা স্বীকার করে আমাদের পক্ষে কাজ করবে।


আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা ও নামাজে হুজুরি অর্জনের জন্য একজন কামেল অলী-আল্লাহর অসিলা ধরে তওবা করে তার শিক্ষা নিয়ে ধর্ম চর্চা করতে হবে। নিয়মিত তাঁর নির্দেশিত পথে ধর্ম অনুশীলনের মাধ্যমে এবং নিয়মিত আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হয়ে ‘ষড়রিপুর প্রভাবমুক্ত হয়ে’ মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব হয়। মানুষ তার ক্বালবে বিদ্যমান নুরে মোহাম্মদীর আলোয় আলোকিত হতে পারে। অলী-আল্লাহগণ আল্লাহর নুরে আলোকিত। তাদের সংস্পর্শে গেলে আলোকিত মানুষ হওয়া সম্ভব হয়। আলোর কাছে গেলেই অন্ধকার দূর হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সারাদিন বসে থাকলেও একটু আলো পাওয়া যায় না, কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহের সাথে সংযোগ দিয়ে বাল্ব জ্বালালে আলো পাওয়া যায়। তেমনি আল্লাহর আলোয় আলোকিত মানুষের সংস্পর্শে গিয়ে সাধনার মাধ্যমে শয়তান তাড়িয়ে নিজের ভিতরের অন্ধকার দূর করা যায়। নিজের পরিচয় আবিষ্কার করা যায়। মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভ করে আশেকে রাসুল হওয়া যায়। ক্বালবের সাথে যোগাযোগ করে জীবন পরিচালনা করা যায় আল্লাহ্ ও রাসুলের ইচ্ছানুসারে। মানুষের উপর শয়তান আর সুবিধা করতে না পেরে তাকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। ষড়রিপু তখন শয়তানকে ছেড়ে মানুষের হয়ে মানুষকে জীবন চলার পথে সহায়তা করে।


আল্লাহ্ তায়ালা ক্বালবকে নির্মল করে সৃষ্টির পর সেই ক্বালবকে মলিনতা থেকে হেফাজতে রাখতে আদেশ করেছেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি কোনো কাজে আসবে না, সেদিন উপকৃত হবে কেবল সে, যে আল্লাহর নিকট আসবে ক্বালবে সালীম তথা বিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে।” (সূরা শুআ’রা ২৬: আয়াত ৮৮-৮৯) হাদিসে রয়েছে, “জেনো রেখো, নিশ্চয় মানবদেহের মধ্যে একটি মাংসের টুকরো আছে, সেটি যখন ঠিক (পবিত্র) হয়ে যায়, তখন গোটা শরীরই ঠিক (পবিত্র) হয়ে যায়। আর সেটি যখন খারাপ (অপবিত্র) হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ (অপবিত্র) হয়ে যায়। জেনে রেখো, সেই মাংসের টুকরোটি হলো ক্বালব বা হৃদয়।” (বোখারী শরীফ, পৃষ্ঠা ১৩) আমাদের জানা অজানা নানা গুনাহে ক্বালব অপরিষ্কার বা কলুষিত হয়। এ অশুদ্ধ ক্বালব নিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না। পবিত্র কুরআনের ভাষায় “যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, ইহা তাদের কলুষের সঙ্গে আরও কলুষযুক্ত করে এবং তাদের মৃত্যু ঘটে কাফির অবস্থায়।” (সূরা তাওবা ৯: আয়াত ১২৫) মোহাম্মদী ইসলামের বর্তমান নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) বলেন, “আত্মশুদ্ধি ছাড়া কোনো ব্যক্তি কখনো ভালো মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না এবং সাধনায় সফলও হতে পারে না।” আত্মশুদ্ধি ছাড়া কোনোভাবেই মুক্তির আশা করা যায় না।


মোহাম্মদী ইসলামে যত বিধিবিধান রয়েছে তার কিছু প্রকাশ্য এবং কিছু অপ্রকাশ্য। প্রকাশ্য বিধিবিধান মানার পাশাপাশি অপ্রকাশ্য বিধান মানা না হলে চিন্তা-চেতনার শুদ্ধতা অর্জিত হয় না। ইখলাস এবং একনিষ্ঠতা অনুপস্থিত থাকে। বান্দার আরাধনা বিফলে যায়। অপ্রকাশ্য বিধিবিধানের মধ্যে কিছু বর্জনীয় এবং কিছু অনুসরণীয়। শিরক, অহংকার, রিয়া, হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধ, আত্মকেন্দ্রিকতা, কৃপণতা, দুনিয়ার লোভ, স্বার্থপরতা, ঘৃণা, কৃপণতা, গীবত, পরনিন্দা, চোগলখুরি, কুধারণা এসব বর্জনীয়। পক্ষান্তরে, ইখলাস, সবর, তাকওয়া, তায়াক্কুল, বিনয়, আল্লাহর মহব্বত, দুনিয়ার মোহ ত্যাগ, শোকর, উদারতা, বদান্যতা, লজ্জাশীলতা ও দয়াপরায়ণতা অনুসরণযোগ্য। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন, “আল ইনসানু সিররি ওয়া আনা সিররুহু।” অর্থাৎ- মানুষ আমার রহস্য আর আমি মানুষের রহস্য। (সিররুল আসরার, পৃষ্ঠা ২৩) এ রহস্যের কারণেই মানুষকে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। আল্লাহ্ পাক বলেন, “মানুষের মন তো মন্দ কাজেরই প্ররোচনা দিয়ে থাকে।” (সূরা ইউসূফ ১২: আয়াত ৫৩) স্রষ্টা বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্যই মানুষের মনের মধ্যে খারাপ চাহিদা রেখে দিয়েছেন। কেউ আত্মশুদ্ধি করতে পারলে তার মনের চাহিদা হবে শুধু ভালো কাজে যুক্ত হওয়া এবং মন্দ কাজ বর্জন করা। মহান মোর্শেদ বাবা দেওয়ানবাগী সেজন্য মোরাকাবার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন সকল আশেকে রাসুলকে। বর্তমানে ড. মেজো হুজুর সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) মানুষের মুক্তির জন্য মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারে বর্তমানে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মানুষের চরিত্র সংশোধনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জনের শিক্ষা গ্রহণের জন্য সবাইকে তাগিদ দিচ্ছেন। তাঁর মাধ্যমে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর শিক্ষা গ্রহণ করে আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা, নামাজে হুজুরি ও আশেকে রাসুল হওয়ার মাধ্যমে সফল হওয়া সম্ভব। তাঁর নির্দেশিত পথে ধ্যান করে হযরত রাসুল (সা.) ও মহান আল্লাহর দিদার লাভ করা যায়। তাঁর দরজা সকল মানুষের জন্য খোলা। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন আমরা যেন তাঁর প্রিয় বন্ধুর সুমহান শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ষড়রিপু সংযমি করে পাপমুক্ত হয়ে সফলকাম হতে পারি। আমিন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *