মুসলমান শব্দের অর্থ শান্তিতে বসবাসকারী বা আত্মসমর্পণকারী। যিনি আল্লাহর উপর পূর্ণ আত্মসমর্পণ করতে সক্ষম হয়েছে, অর্থাৎ আল্লাহ নিরাকার নন, তাঁর নুরের রূপ বা আকার আছে, এ বিশ্বাস অন্তরে স্তির করে তাঁর উপর আত্মসমর্পণ করতে সক্ষম হয়েছেন, তিনিই প্রকৃত মুসলমান। যে কারণে মহান আল্লাহ নির্দেশ করেছেন- “হে মু‘মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থরূপে ভয় করো এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করো না।” (সূরা আলে ইমরান-৩: আয়াত ১০২)
প্রকৃত মুসলমান আল্লাহর উপর আত্মসমর্পণ করে থাকেন বলে তার কখনো অভাব-অনটন, দুঃখ কষ্ট থাকে না। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই তার যাবতীয় চাহিদা পূরণ করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “যদি তোমরা ভরসা করো আল্লাহর উপর, প্রকৃত ভরসা, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে রিজিক দেবেন, যেভাবে তিনি পক্ষীকুলকে রিজিক দিয়ে থাকেন। পক্ষীকুল সকাল বেলা খালি পেটে বেরিয়ে পড়ে, অতঃপর সন্ধ্যা বেলা ভরা পেটে ফিরে আসে।” (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ’র সূত্রে তাফসীরে মাজহারী-১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৪)
এজন্য দেখা যায়, মানবশিশু মার্তৃগর্ভে থাকাকালীন পূর্ণরূপে আল্লাহর আত্মসমর্পিত এবং তাঁরই উপর নির্ভরশীল থাকে, যে কারণে সেখানে তার কোনো অভাব-অনটন থাকে না। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “প্রত্যেক মানবশিশুই প্রকৃতির স্বভাবজাত ধর্ম, অর্থাৎ আল্লাহতে আত্মসমর্পিত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে।” (মুসলিম শরীফ-২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৬)
তবে জন্মগ্রহণের পর মানবশিশুটি তার পরিবার ও সমাজের প্রভাবে ক্রমান্বয়ে আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা ছেড়ে দিয়ে, দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে; ফলে সে হারিয়ে ফেলে মায়ের উদরে থাকার সেই পরম শান্তি।
বর্তমান সমাজে তথাকথিত মুসলমানদের দ্বারা নানাবিধ অসামাজিক, অনৈসলামিক ও অহিতকর কার্য সম্পাদিত হচ্ছে। কারণ তারা আল্লাহর উপর পূর্ণাঙ্গভাবে আত্মসমর্পণ করে, ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহর বিধিবিধান বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য মুসলমানগণ আজ বিভিন্নভাবে নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত।
প্রকৃতপক্ষে মুসলমান ঐ ব্যক্তি, যে নিজে শান্তিতে বসবাস করে এবং অপরকে শান্তিতে বসবাস করতে দেয়। প্রকৃত মুসলমান কখনো কারো জন্য কষ্টের কারণ হয় না। এ প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “প্রকৃত মুসলমান ঐ ব্যক্তি, যার হাত ও জবান থেকে অন্য সকল মুসলমান নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিষেধকৃত বিষয়াবলী পরিত্যাগ করতে পেরেছে।” (বোখারী শরীফ-১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬)
হাদিস শরীফের এ বাণী মোবারকের মর্ম হচ্ছে- মুসলমানের কোনো কথা ও কাজের দ্বারা অন্য লোকের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে না। একইভাবে মুসলমানগণ আল্লাহর প্রতি পূর্ণ অনুগত থাকেন এবং তাঁর নিষেধকৃত বিষয়াবলী থেকে বিরত থাকেন বলেই, তাদের দ্বারা সমাজের কোনো অনিষ্টকর কার্য সম্পাদন হয় না।